নুর হাছান: [২] করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো গত বছরের মার্চেই বন্ধ হয় জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অনেকেই ছেড়ে যায় ক্যাম্পাস। এতে পাল্টে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক দিনের চিত্র।
[৩] তার মধ্যে করোনার প্রথম ধাপে ক্যাম্পাসে লকডাউন দিলে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে তৈরি হয় এক ভুতূড়ে পরিবেশ। তবে এসবের মধ্যেও দায়িত্বে সদা তৎপর ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তাকর্মীসহ চিকিৎসা কেন্দ্রের সদস্যরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার প্রথম থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা । সে সময়ে যেখানে সারা ক্যাম্পাসে কদাচিৎ দেখা মেলত জনমানবের।
[৪] এরমধ্যে কেউ কেউ করোনায়ও আক্রান্ত হয়েছেন। আবার সুস্থ হয়ে ফিরেছেন কর্মস্থলে। তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের এক কর্মচারী। এসবের মধ্যেও মহামারীর মতো ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে প্রথম থেকে দায়িত্ব পালন করতে পেরে গর্ববোধ করেন বলে জানান তারা।
[৫] নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক সদস্য জানান, করোনার মধ্যে আমরা কোনো ছুটি কাটাইনি, বরং আমাদের মধ্যে কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হবার কারণে জনবল সংকট তৈরি হয়েছিল। যার কারণে ক্যাম্পাসে এক ধরণের অজানা ভীতি তৈরি হয়েছিলো। ফলে ক্যাম্পাস পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে যায়। বাড়ীতে চলে যাওয়ার জন্য পরিবারও কান্নাকাটি করেছিল কিন্তু দায়িত্বের কারণে যেতে পারিনি।
[৬] নিরাপত্তা শাখার পরিদর্শক (গ্রেড ১) দাউদ মোল্লা বলেন, ‘নিরাপত্তার দায়িত্বে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থায়ী ও ডেইলী বেসিসে ৯৪ জন নিরাপত্তারক্ষী কর্মরত আছে। করোনা আক্রান্তের কথা চিন্তা না করে তারা সর্বদা সজাগ থেকেছেন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায়।
[৭] তিনি আরও বলেন, আমিসহ আমাদের সেকশনের শামছুল হক ও বাবুল শেখ নামে মোট ৩জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেকদিন অসুস্থ থেকেছি। সুস্থ হয়ে আবার দায়িত্ব পালন করছি। আমরা চাকরী করি ছোট কিন্তু দায়িত্ব বড়।
[৮] ’জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট সূত্র হতে জানা যায়, করোনার মধ্যে চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রথম দিকে যেসব সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হয়েছে তা ছিল খুবই অপ্রতুল। কিন্তু করোনায় দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিদিনই প্রয়োজন হচ্ছে এসব নিারপত্তা সামগ্রী। পরবর্তী সময়ে পি পি ই, মাস্ক, স্যানিটাইজার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ডাক্তাররা নিজেরা সুরক্ষা সামগ্রী কিনে ব্যবহার করছেন।
[৯] খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের নার্স মাহমুদা পারভীন সুমি, ক্লিনার নীপা বিশ্বাস মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট নাইমুল হাসান, কম্পিউটার অপারেটর মোঃ ইয়াকুব আলী’সহ একজন ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে কম্পিউটার অপারেটর ইয়াকুর আলী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
[১০] চিকিৎসা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনার মধ্যে রোগীদের সেবা অব্যাহত রাখতে ডাক্তারদের চেম্বারে নিজেদের অর্থায়নে গ্লাস দ্বারা বেষ্টনি তৈরি করা হয়েছে।
[১১] করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসা কেন্দ্রের ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং করোনায় মারা যাওয়া কর্মচারীর বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের উপদেষ্টা কমিটির প্রধান অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে কোনো আলাপ আলোচনা হয়নি। তবে, আমরা এ বিষয়ে অবগত আছি। করোনার যারা কাজ করেছে তাদের ওভারটাইম বা অন্যান্য বিয়য়ে একটি কমিটি হয়েছে। কমিটিতেই এসব আলোচনা হবে। সম্পাদনা: অনন্যা আফরিন
আপনার মতামত লিখুন :