শাহিদুল ইসলাম:[২] কুমিল্লার দেবিদ্বারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের প্রায় পাঁচ মাস পর এক নারীর পেট থেকে বের করা হলো গজ (ব্যান্ডেজ)। এই দীর্ঘ সময়ে গজটি ওই নারীর পেটে থাকায় তাতে পচন ধরে তাঁর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।
[৩] জানাযায়, প্রায় পাঁচ মাস আগে মুরাদনগর উপজেলার মোগসাইর গ্রামের মো. রাসেল মিয়ার স্ত্রী মোসা. শারমিন আক্তার (২৫) প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে দেবিদ্বারের আল ইসলাম হাসপাতাল এন্ড ডায়গনিষ্টক সেন্টারে ভর্তি হন। কর্তব্যরত চিকিৎসক রোজিনা আক্তার তাকে দেখে জরুরী সিজার করার পরামর্শ দেন।
[৪] ডাক্তারের পরামর্শ মত সিজারে সম্মতি দিলে ওইদিনই ডাক্তার রোজিনা আক্তার ও ডা. শামীমা আক্তার লিন্টা তার সিজার করেন। এতে একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয় শারমিনের। অপারেশেনের কিছুদিন পর থেকে তার পেটে ব্যাথা ও ক্ষত থেকে পুঁজ বের হতে থাকে।
[৫] পরে তাকে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করা হয়।অবস্থার তেমন উন্নতি না হওয়ায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শারমিনকে কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
[৬] সেখানে ডা.কর্ণেল আবু দাউদ মো. শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক তার পেটে অপারেশন করে আস্ত গজ (ব্যান্ডেজ) বের করেন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযো মাধ্যমে তোলপাড় চলছে।
[৭] ভুক্তভোগী শারমিনের বড় ভাই রহুল আমিন জানান, শারমিনের আগেও একটি তিন বছরের মেয়ে সন্তান রয়েছে। তার প্রথম সন্তানও সিজারে হয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান প্রসবে সিজার করার পর থেকে তার পেটে অনেক ব্যাথা ও পুঁজ পড়তে থাকে।
[৮] এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গাইনি চিকিৎসক ডা. রোজিনার সাথে মোবাইল ফোনে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
[৯] যোগাযোগ করা হলে আল ইসলাম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ মোহাম্মদ হোসেন (এনাম) বলেন, রোগির পেটে গজ থেকে যাওয়ার বিষয়টি আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি। ঘটনাটি পাঁচ মাস আগের। এরপর রোগীর স্বজনরা আমাদের সাথে আর যোগাযোগ করেনি।
[১০] এমন ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা অনুতপ্ত। ময়নামতি ক্যান্টমেন্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কর্ণেল আবু দাউদ মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় অপারেশনের মাধ্যমে পেট থেকে রক্তাক্ত গজ বের করা হয়। বর্তমানে রোগী সংকটাপন্ন রয়েছে। ৪/৫দিন গেলে অবস্থা বুঝা যাবে।
[১১] এ ব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহমেদ কবির বলেন, ডাঃ রোজিনা দেবিদ্বার সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক। বিষয়টি আমিও শুনেছি তবে যথাযথ অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
[১২] এ বিষয়ে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইনও একই কথা বলেন, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও হাসপাতালের নাম উল্লেখ করে স্বজনরা যদি লিখিত অভিযোগ করে, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।সম্পাদনা:অনন্যা আফরিন