মনোয়ার হোসাইন : [২] কিশোরগঞ্জে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে এখন পর্যন্ত হাওরের ৩৫হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঝড় ও হাওয়ার সাথে গরম আবহাওয়ারকারণে হাওরে বোরো ধান পরাগায়ন ব্যহত হয়। ফলে এই মৌসুমে উৎপাদিত বোরোধানের চিটা দেখা দিয়েছে।
[৩] বোরো ধান পরাগায়নের জন্য ১৫-২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। কিন্তু ঝড়ের সময় তাপমাত্রা ছিল ৩৪-৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস।প্রচন্ড ঝড় হওয়ার কারণে ধানের পরাগায়নের রেনু বাতাসে উড়ে গেছে। ফলে স্বপরাগায়ন বোরো ধান পরাগায়িত না হওয়ায় চিটায় পরিণত হয়েছে। এদিকে এ সমস্ত ধান ক্ষেত তাপমাত্রার প্রভাবে ঝলছে গিয়ে বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে।
[৪] আগামী সপ্তাহ থেকে আগাম বিআর-২৮ ধান সোনালী রঙ ধারণ করে ফসল কাটার উপযোগী হত। এমন সময় সবুজ ধানের গাছ ধূসর হয়ে পড়ায় কৃষকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।রোববার বিকেলে মাঠের সবুজ ধান ক্ষেতের সতেজতা দেখে বাড়ি গেছেন নিকলী হাওরের কৃষক ছিদ্দিক মিয়া।
[৫] কিন্তু সোমবার সকালে ক্ষেতের আইলে গিয়েই দেখেন তার সবুজ স্বপ্নগুলো ধূসর হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া ধানের গোছা হাতে নিয়ে ক্ষেতের আইলেই বসে পড়েন তিনি। জানালেন, ধার-দেনা করে ৭০ কাটা জমিতে বোরো ধান রোপণ
করেছেন। এ জমিকে ঘিরেই ছিল তার সম্ভাবনার হাতছানি। কিন্তু এমন অবস্থায় তিনিচোখে অন্ধকার দেখছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি ধার-দেনা কীভাবে শোধ করব?
[৬] আমার সংসার চলবে কী করে? আর কিছু দিন সময় পেলেই ধান গাছগুলো পরিপক্ক হয়ে যেত।’রোববার সন্ধ্যা থেকে কয়েক ঘন্টা ধরে কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যায় কালবৈশাখী ঝড়ও গরম বাতাস। এতে ফ্লাওয়ারিং স্টেজে (ধান পুষ্ট হওয়ার সময়) থাকা বিআর-২৮ জাতের ধানের ছড়া ফেটে ভেতরের সাদা তরল দুধ শুকিয়ে গেছে। সাদা বিবর্ণ হয়ে পড়েছে ধানের গাছ। আকস্মিক ঝড়ে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কিশোরগঞ্জের কৃষকের মাথায় হাত।
[৭] চামড়া নৌ বন্দর এলাকার ছাগুলি গ্রামের কৃষক মো. রাজন মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ করে গরম হাওয়ায় সবুজ ধানের গাছ আস্তে আস্তে ধূসর হয়ে পড়েছে। পরের দিন রোদ ওঠার পর আমরা বিষয়টি টের পাই।’কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, পরাগায়ন পর্যায়ে ৩০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় ধানের পূর্ণতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ের সময় ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় প্রচন্ড বেগে বাতাস বয়ে যাওয়ায় জেলার ১৩টি উপজেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
[৮] ক্ষতির পরিমাণআরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল আলম। তিনি আরও জানান, গরম হওয়ায় ঠিক কী পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যাবে আরও দু-তিন দিন পর। তবে প্রাথমিকভাবে কৃষি বিভাগের হিসেবে জেলার ১৩টি উপজেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমি দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে।
[৯] এর মধ্যে তিন হাজার ৪২৫ হেক্টর জমির ধান শতভাগ নষ্ট হয়ে গেছে।অন্যগুলো ২৭.২ ভাগ বিনষ্ট হয়েছে।কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসেবে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৫৯৫ হেক্টর,হোসেনপুর ২৩০ হেক্টর, পাকুন্দিয়ায় ৭৪০ হেক্টর, কটিয়াধীতে ২৩০৩ হেক্টর, করিমগঞ্জে ৩৮০০ হেক্টর, তাড়াইলে ১৩৯৫ হেক্টর, ইটনায় ৪৭৫০ হেক্টর, মিঠামইনে ১৯৪০ হেক্টর,নিকলীতে ২৬৩৫ হেক্টর, অষ্টগ্রামে ৪৫০ হেক্টর, বাজিতপুরে ২৪০ হেক্টর, কুলিয়ারচরে ১১২ হেক্টর ও ভৈরবে ২৯০ হেক্টর জমির বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।সম্পাদনা:অনন্যা আফরিন