শিরোনাম
◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয়

প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:১৯ দুপুর
আপডেট : ০৬ এপ্রিল, ২০২১, ০১:০১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মামুনুল হককে নিয়ে নানামুখী আলোচনা

ডেস্ক রিপোর্ট: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নারীসহ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক অবরুদ্ধ হওয়ার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আলোচনা এখন সর্বত্র। বিশেষ করে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা জান্নাত আরা ঝর্ণার সন্তান আবদুর রহমান জামির একটি ভিডিওবার্তা নিয়ে তোলপাড় চলছে। যদিও হেফাজতের লোকজন এখনো এসব ঘটনাকে গভীর ষড়যন্ত্র আখ্যা দিচ্ছেন।

অন্যদিকে থানার অভ্যন্তরে হেফাজত কর্মীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে বদলি করা হয়েছে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিদুর রহমানকে এবং সাংবাদিক ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষোদগার করায় কুষ্টিয়া পুলিশের সেই সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) গোলাম রাব্বানীকে প্রত্যাহার করেছে পুলিশ প্রশাসন। পাশাপাশি মামুনুল হককে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক নারীর আপত্তিকর ছবি দিয়ে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে এমাদ আহমেদ জয় নামে আটক যুবলীগ নেতা জামিনে মুক্ত হয়েছেন। ৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক এক নারীকে নিয়ে সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে যান। সেখানে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এ ঘটনায় রবিবার দুপুরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতার নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দেয় হেফাজতে ইসলাম। অভিযোগ দিয়ে হেফাজতের নেতারা থানার ভিতরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।

একপর্যায়ে তারা ৭১ টিভির নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি বুলবুল আহম্মেদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে আছড়ে ভেঙে ফেলেন। এ সময় তারা গণমাধ্যমকর্মীদের নামে বিষোদগার করতে করতে থানার ভিতর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে যান। এ ঘটনার পর রাতে ওসিকে বদলি করা হয়। গত বছরের ৫ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা থেকে পুলিশ সুপারের নির্দেশে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব নেন রফিকুল ইসলাম। যদিও নারায়গঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের দাবি, পুলিশের চাকরিতে বদলি একটি নিয়মিত ঘটনা। একে অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই। পুলিশ সদর দফতরসূত্র বলছেন, মামুনুল হককান্ডে সাংবাদিক ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা পুলিশের সেই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) গোলাম রাব্বানীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি কুষ্টিয়ার ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। এর আগে রবিবার গোলাম রাব্বানীর বক্তেব্যের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তিনি সাংবাদিকদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালির পাশাপাশি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়েও কটূক্তি করেন। বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি পুলিশের পোশাক পরা অবস্থায় ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। এসব ঘটনায় রবিবারই রাব্বানীকে প্রত্যাহার করে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে কুষ্টিয়া ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম ফরহাদ হোসেন ও কুষ্টিয়ার এসপি খাইরুল আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা কল ধরেননি।

তবে জেলা বিশেষ শাখার (এসবি) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঝর্ণার ছেলে ভিডিওবার্তায় যা বললেন : মাওলানা মামুনুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা ঝর্ণার আগের পক্ষে বড় সন্তান আবদুুর রহমান জামির একটি ভিডিওবার্তা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ঝর্ণা ও শহীদুলের বড় ছেলে কিশোর জামির ওই ভিডিওবার্তায় অভিযোগ করেছেন, মামুনুল হকের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ববোধ নেই। তিনি নিজের অসদুদ্দেশ্য পূরণ করতে জামির বাবা শহীদুল ইসলাম ও মা জান্নাত আরা ঝর্ণার মধ্যে পরিকল্পিতভাবে দূরত্ব তৈরি করেন। এ ক্ষেত্রে শহীদুল ইসলামের ‘অন্ধ আনুগত্যকেও’ ব্যবহার করেছেন মামুনুল।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো অলরেডি বড় হয়ে গেছি। অনেক কিছু শিখছি, অনেক কিছু জানছি। একটা ম্যাচিউর ভাব আইছে। আমি কিছুটা সহ্য করে নিতে পারি। কিন্তু আমার তো একটা ছোট ভাই আছে। ১৩-১৪ বছর বয়স। কেবল উঠতি বয়স। এমন সময় কত মানুষের কথা শোনা লাগতিসে। সমাজের সামনে সে মুখ দেখাতে পারতেছে না।’ আক্ষেপ করে জামি বলেন, ‘আমার ছোট ভাইটা কালকে রাতে যখন এ ঘটনাটা ঘটল, কোনো দিন আমি দেখি নাই যে রাত ৩টা-৪টা পর্যন্ত জেগে রইছে। কালকে চোখে কোনো ঘুমই নাই। টোট্যালি ওটা নিয়ে মনে হচ্ছে ও মেন্টালি শকড। ও বাসা থেকে বেরোয়ে গেছিল, আমি বাসায় থাকলে কী উল্টাপাল্টা করব আমি নিজেও জানি না, এ কারণে বেরোয়ে গেছে।’

এ ঘটনার জন্য নিজের বাবা শহীদুলকেও দায়ী করেন জামি। তিনি বলেন, ‘এটা আমি বলব যে আমার বাবার কর্মের ফল। আমার বাবা এই মানুষটাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করত। পাগলের মতো ভালোবাসত।’

উল্লেখ্য, শহীদুল ইসলাম তার দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা সুলতানাকে নিয়ে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার শাহীনূর জামে মসজিদ সড়কের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। প্রথম স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার সঙ্গে বছর তিনেক আগে তার বিয়েবিচ্ছেদ হলেও জামিসহ ওই ঘরের দুই সন্তান বাবার সঙ্গেই আছে। শহীদুল ওই এলাকার তালিমুল মিল্লাত রহমাতিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক ও খালাসি মসজিদের ইমাম।

বাবা-মায়ের বিয়েবিচ্ছেদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জামি ফেসবুক ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘আরও আগের ঘটনা, যখন ডিভোর্স হয়নি। আমি সে সময় অনেকটা ছোট, আমার ছোট ভাই অনেক ছোট। ও দুগ্ধশিশু ছিল। তখন একবার আমার বাবা বাসায় ছিলেন না, তখন আমি ছিলাম। আমি ঘুমায় ছিলাম বা বাইরে ছিলাম। তখন আমার মা আমার ছোট ভাইকে দুগ্ধ পান করাচ্ছিল। তখন উনি (মামুনুল) আমার মায়ের রুমে হুট করে ঢুকে যায় এবং একটা কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমার মা সেটা প্রত্যাখ্যান করেছিল। না, এটা সম্ভব না, আপনি তো ঠকাচ্ছেন আপনার কাছের মানুষটাকে, বন্ধুকে। সে তখন ফিরে এসেছিল। তখন থেকেই তার মনে একটা কামুক ভাব ঢুকে গেছে। সে লোভ সামলাতে পারতেছিল না। সে সবকিছুর একটা সুযোগে ছিল। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে সে এটা বুঝতে পারেনি। যখনই সে সুযোগ পাইসে, এনাদের (শহীদুল-ঝর্ণা) মধ্যে ডিসট্যান্স বাড়ায় দিছে।’

মামুনুলের অসদুদ্দেশ্য তুলে ধরে জামি বলেন, ‘কোনো বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তো ঝগড়া হবেই। সে (মামুনুল) তখনই নক করছে। তখনই দুজনের মধ্যে আরও ডিসট্যান্স বাড়ায় দিছে। এভাবে করে সে একটা পরিবারের খুশি, ভালোবাসা, একটা পরিবারের মধ্যে যে মিলমিশ একটা সম্পর্ক পুরোপুরি সে ধ্বংস করে দিছে। আরও এভাবে কত মানুষের, পরিবারের ভালোবাসা সে ধ্বংস করছে এর কোনো ঠিক নাই।’ হেফাজতে ইসলাম নেতা মামুনুল হকের বিচার দাবি করেন জামি। তিনি বলেন, ‘এখানে আমি আশা করব আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে আশা করব এর যেন সঠিক বিচার হয়, আপনারা কারও অন্ধভক্ত হয়েন না। কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস কইরেন না। ক্যান, সবারই মুখোশের আড়ালে একটা চেহারা থাকে। এ লোকটা আলেম নামধারী একটা মুখোশধারী একটা জানোয়ার। এর মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নাই। সুযোগের সব সময় অপেক্ষায় থাকে। কাকে কীভাবে দুর্বল করা যায়। আমার আর কিছু বলার মতো ভাষা নাই।’ ভিডিওতে বক্তব্য দেওয়া কিশোর যে আবদুর রহমান জামি তা নিশ্চিত করেছেন খুলনায় শহীদুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা সুলতানা। তবে তিনি দাবি করেন, জামিকে ‘চাপ’ দিয়ে এমন বক্তব্য দেওয়ানো হয়েছে। জামি এখন ঢাকায় আছেন বলেও জানান সালমা। অন্যদিকে জামির বাবা শহীদুল ইসলামও আছেন ঢাকায়। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলব না।’

যুবলীগ নেতার জামিন : সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক নারীর আপত্তিকর ছবি যুক্ত করে পোস্ট করার অভিযোগে আটক এমাদ আহমেদ জয় (২৮) নামে যুবলীগ নেতাকে জামিন দিয়েছে আদালত। রবিবার দুপুরে তাহিরপুর থানা পুলিশ এমাদকে আটক করে। গতকাল বিকালে তাকে সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী বুরহান উদ্দিন দোলন। ১৫১ ধারায় গ্রেফতার এমাদের জামিন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক রগিব নূর। পরে হাজত থেকে মুক্তি পান তিনি।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়