আশরাফুল আলম খোকন: কওমি বনাম হেফাজত ... এই বিতর্কে আমাদের দলেরও অনেকেই সায় দেন। বলেন যে, এটা আমরা ভুল করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুল করেছেন। নিজের দলের লোকেরা বললে অন্যরাতো বসেই থাকে আওয়ামী লীগের ছিদ্রান্বেষণের জন্য। তারা এই বিতর্কে একেবারে ঝাঁপিয়ে পরে। নিজের পান্ডিত্য প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকেই বলে থাকেন, আওয়ামী লীগ নাকি হেফাজতকে এতোদিন লালন-পালন করেছে। পেলেপুষে বড় করেছে। আমার মনে হয়, এটা হেফাজত নিজেরাও বিশ্বাস করবে না। তবুও যতো দোষের দায় নন্দ ঘোষ আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। যারা এসব বলেন তাদের দোষ দিয়েই বা কী লাভ। অজ্ঞতাও হতে পারে। আমি জানি, এই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে যদি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে লিখি তাহলে এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে লাইক, শেয়ার ও হাততালি বেশি পেতাম। আওয়ামী লীগতো নিজের বিশাল কর্মী বাহিনীকেই সুবিধা দিতে পারছেন না। ত্যাগী, বঞ্চিত অনেকেই এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিয়মের মধ্যে রাষ্ট্র চালাতে গিয়ে এখনো প্রতিপক্ষের অনেকে সুবিধাভোগী হচ্ছে। দীর্ঘদিন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই তথ্যটা দিলাম।
এখন আসল কথায় আসি। আমাদের সমাজের সুবিধাবঞ্চিত কিংবা কম সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদের অনেকেই কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক পড়াশোনা করেন। ধর্মীয় শিক্ষায় আকৃষ্টরাও অনেকেই কওমি কেন্দ্রিক হয়। তারা সবাই আমাদের এই বহুমাত্রিক সমাজের অংশ। কারো না কারো স্বজন। তাদের গণনা থেকে বাদ দিয়ে কি এই সমাজ এগোবে? সমাজ কিংবা রাষ্ট্র গঠনে কার ভূমিকা কতোটুকু সেই বিতর্কে যাবো না। দেশের সরকার প্রধান কিংবা অভিভাবক হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়ে সঠিক কাজই করেছেন, যুগান্তকারী কাজই করেছেন। এখানে হেফাজতকে সুবিধা দেওয়া হলো কোথায়? কওমি শিক্ষার্থীদের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবিক হয়েছেন, হেফাজতের প্রতি নয়। তবে হ্যাঁ, আপনি আমি দাবি তুলতে পারি মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করার। কারণ এই কওমি মাদ্রাসাগুলো সমাজের মানুষের দানে-অনুদানেই চলে। তাদের ভালোমন্দ নিয়ে কথা বলার অধিকার সবার আছে। আমরা প্রতিবাদ করতে পারি, হেফাজত কেন তাদের ধান্দাবাজির রাজনীতির স্বার্থে কওমি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে। হেফাজত তাদের ধ্বংসাত্মক কাজে যাতে ব্যবহার করতে না পারে সেক্ষেত্রে সরকারকে আরও কঠোর হতে বলতে পারেন। কওমি শিক্ষার্থীরা যাতে হেফাজতের রাজনীতির বলি না হয়, এর জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা যেতে পারে। অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও সচেতন করা দরকার, তারা যাতে জঙ্গিবাদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হয়। হাততালি পাওয়ার জন্য শুধু শুধু দোষারোপের রাজনীতি দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। ফেসবুক থেকে