আহসান হাবিব: নারীরা কেন বেশি কথা বলে, এমন একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলাম একজন নারীর কাছ থেকেই। কেননা আমার সঙ্গে তার কথোপকথনের আশি শতাংশই তিনি বলেছিলেন, এমনকি আমার কথা শেষ না হওয়ার আগেই তিনি তার কথা বলতে শুরু করে দিতেন, আমি থেমে যেতাম। আমি তাকে বিবর্তনের কথা বললাম। একসময় নারীদের একসঙ্গে অনেককিছু সামলাতে হতো, ঘরের কাজ, রান্নার কাজ, সন্তান দেখাশোনার কাজ, ফসল সংরক্ষণের কাজ, ফলে নারীকে শুধু হাত নয়, মুখেও অনেক কথা বলতে হতো। নারীদের ভালোভাবে টিকে থাকার জন্য প্রকৃতি এই বৈশিষ্ট্যটি জেনেটিক্সে রেখে দেয়। একে আরও ফলপ্রসূ করার জন্য ভোকাল কর্ডের দৈর্ঘ্য কমিয়ে দেওয়া হয়। এই দৈর্ঘ্য কমানোর কাজটি করার দায়িত্ব প্রকৃতি দেয় হরমোনের ওপর।
পুরুষ হরমোন টেস্টেস্টেরন যেমন পুরুষের শারীরিক গঠন থেকে শুরু করে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে, নারীর অক্সিটোসিন সেই একই দায়িত্ব পালন করে। দেখা গেল নারীর ভোকাল কর্ড পুরুষদের চেয়ে প্রায় ৫ মি.মি. কম দৈর্ঘ্যের, ফলে এই কর্ডকে দ্রুত স্পন্দিত করা সহজ হয়ে গেলো। সামাজিক দায়িত্ব প্রকৃতি অনুধাবন করে নারীকে বেশি কথা বলার যোগ্য করে তুললো। আর একটি কারণ বললাম, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যারা অধিনস্থ, তারা বেশি কথা বলে কারণ তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এই নিরাপত্তাহীনতার বোধ বেশি কথা বলে চাপিয়ে রাখতে চায়। দেখা গেছে যে নারী অফিসে বস, সেখানে পুরুষ কর্মীরা বেশি কথা বলে, নারীটি দু’একটি কথা বলে কর্তৃত্ব বজায় রাখে। সেই নারীই আবার বাসায় এসে তার নিজের স্বামী পুরুষটির কাছে মুখর হয়ে ওঠে। দেখলাম সেই নারীটি আমার কথা মেনে নিলেন। প্রসঙ্গত, আমি এই অংশটুকুই একবারে বলার সুযোগ পেয়েছিলাম...। লেখক : উপন্যাসিক