মহিউদ্দিন আহমদ : এদেশে বই কিনলে ক্রেতা কমিশন পান। বইমেলা উপলক্ষে কমিশন ২৫ পার্সেন্ট। অন্যসময় এটা সচরাচর হয় ২০ পার্সেন্ট। প্রকাশক রিটেইলারকে ৩৫-৪০ পার্সেন্ট বা তারও বেশি কমিশন দিয়ে থাকে। রিটেইলার সেখান থেকে পাঠককে কিছুটা ছাড় দেয়।
বিদেশে যত বই কিনেছি, কখনো ছাড় পাইনি। এদেশে আমরা ধরেই নিই, কমিশন হলো পাঠকের এন্টাইটেলমেন্ট বা অধিকার।
যে প্রকাশক লেখককে রয়ালটি দেয় না, সে আরও কম দামে বাজারে বই দিতে পারে। যিনি নিজের টাকায় বই ছাপেন, তিনি মুনাফার কথা মাথায় রাখেন না। তিনি যদি সিরিয়াস লেখক হন, তাহলে খরচের টাকা ওঠে আসলেই তিনি খুশি। যারা বিশেষ মওসুমে নিজের টাকায় বই ছাপিয়ে বন্ধুদের বই উপহার দেন, সেল্ফি তোলেন, তারা দাম নিয়ে মাথা ঘামান না। বই বিলিয়ে আনন্দ পান।
অনেকেই অনেক খেটেখুটে বই লেখেন, অনেক সময় নিয়ে, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। নিজের টাকায় বই ছাপিয়ে পাঠকের ঘরে ঘরে বই পৌঁছানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা প্রকাশকের দ্বারস্থ হন। এ ক্ষেত্রে প্রকাশক বিনিয়োগ করেন এবং বিপননের দায়িত্ব নেন। খুব অল্পসংখ্যক প্রকাশক লেখককে রয়ালটি দেন। টাকার জন্য প্রকাশকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে স্যান্ডেলের সুখতলা ক্ষয় করা এবং অপমানিত হওয়ার অনেক দৃশ্য দেখেছি পুরোনো সিনেমায়।
লেখককে নিয়ে অমার্জিত ভাষায় ট্রল কিংবা মশকরা করা এদেশে বেশ চলে। রয়ালটির প্রশ্ন উঠলেই কেউ কেউ বলেন, টাকার জন্য লেখেন নাকি? মানিক কিংবা সুকান্তের কথা ভাবুন না?
এ বছরটা অন্যরকম। সব ব্যাবসায় মন্দা। অনেক প্রকাশকের পথে বসার দশা। সেই সংগে চাকরি ও ব্যবসাবিহীন লেখক, বিক্রয়কর্মী, ছাপাখানার কর্মী এবং প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা অনেক কষ্টে আছেন। কষ্টে আছেন পাঠকও।
প্রকাশকদের কাছে অনুরোধ থাকবে, সারা বছরই ন্যুনতম ২৫ পার্সেন্ট ছাড়ে পাঠককে বই দিন। সম্ভব হলে ৩০ পার্সেন্ট ছাড়ে। স্টক খালি করে নতুন বইয়ে বিনিয়োগ করুন। আগে বইমেলায় ৩০ পার্সেন্ট ছাড়ে বই পাওয়া যেত। প্রকাশকদের একটা সিন্ডিকেট এটা কমিয়ে ২৫ পার্সেন্ট করেছে বলে শুনেছি।
কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য পান না বলে যারা আহাজারি করেন, মানববন্ধন করেন, দয়া করে আপনারা লেখকের রয়ালটির কথাও ভাববেন।
লেখক হলো কৃষক। প্রকাশক হলো উদ্যোক্তা। দোকানদার হলো আড়তদার। পাঠক হলো ভোক্তা। সবাই বাঁচুক।