ডেস্ক রিপোর্ট: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব তাদের শ্রমবাজারে পেশাজীবী (প্রফেশনাল) হিসেবে কর্মরতদের মধ্য থেকে অদক্ষদের ছাঁটাই করতে নতুন আইন চালু করেছে। এ আইন অনুযায়ী দেশটিতে প্রফেশনাল ভিসায় কাজ করা অভিবাসীদের বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মধ্য দিয়ে টিকে থাকতে হবে। অন্যদিকে যারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন না তাদের সৌদি আরব ছাড়তে হবে। চলতি বছরের জুলাইয়ে পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানিয়েছে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পেশাজীবী হিসেবে কোনো অভিবাসী সৌদি আরবে কাজ করতে চাইলে তাকে বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বাছাই পরীক্ষা নেয়া হবে পাঁচটি ভাষায়। যেগুলো হলো আরবি, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু ও ফিলিপিনো। প্রফেশনাল ভিসায় কর্মরতরা এর মধ্যে যেকোনো একটি ভাষায় বাছাই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। প্রত্যেক পেশাজীবী প্রবাসী তিনবার বাছাই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। কেউ পরপর তিনবার অকৃতকার্য হলে তাকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা পাবেন সনদ। সেই সনদ অনুযায়ী অভিবাসী পেশাজীবীরা বৈধভাবে পাঁচ বছর দেশটিতে থাকতে ও কাজ করতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের শ্রম কাউন্সেলর আমিনুল ইসলাম বলেন, দক্ষতার পরীক্ষা নেয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি কিন্তু সব প্রবাসীর জন্য প্রযোজ্য নয়। কেবল প্রফেশনাল ভিসায় যেসব অভিবাসী রয়েছেন তাদেরই এ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এটি মূলত প্রফেশনাল টেস্ট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবের শ্রমবাজারে বর্তমানে বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া ১৭ লাখ অভিবাসী পেশাজীবী (প্রফেশনাল) কর্মী রয়েছেন, যারা দেশটির বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত। নতুন এ আইনের ফলে কর্মীরা দক্ষতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে দেশটি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। মূলত সৌদি আরবের শ্রমবাজার থেকে অদক্ষ কর্মী ঝেড়ে ফেলতেই এ পরিকল্পনা।
উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। দেশটিতে বর্তমানে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশী বাস করছেন। সেখানে কাজ করা অধিকাংশ বাংলাদেশী শ্রমিক অদক্ষ ও স্বল্প দক্ষ। তবে কর্মরত আছেন প্রফেশনাল ভিসায় যাওয়া বাংলাদেশীরাও। এরা মূলত চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষক, হিসাবরক্ষকসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক পেশায় নিয়োজিত। এ পেশাজীবীদেরই দিতে হবে দক্ষতার পরীক্ষা।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত নিবন্ধনের মাধ্যমে সৌদি আরবে অভিবাসী হিসেবে গিয়েছেন ৪২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৬০ বাংলাদেশী। গত বছর (২০২০) কভিড পরিস্থিতিতেও দেশটিতে পাড়ি জমান ১ লাখ ৬১ হাজার ৭২৬ বাংলাদেশী। আর চলতি বছর এ পর্যন্ত দেশটিতে গিয়েছেন ৬৫ হাজার ৪৬ জন।
সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল ট্রেনিং করপোরেশনের সঙ্গে মিলে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
সৌদি আরবের এসব অভিবাসী পেশাজীবীদের যাকে যে পেশায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনি সে পেশায় যথেষ্ট দক্ষ কিনা তা দেখতেই এ পরীক্ষার ব্যবস্থা। দেশটির পেশাগত শ্রেণীবিন্যাস অনুসারে মোট ২৩টি ক্ষেত্রের এক হাজার পেশায় কর্মরত অভিবাসীরা এ প্রক্রিয়ার আওতায় পড়বেন।
শুধু যারা দেশটিতে এখন অবস্থান করছেন তারাই নন, যারা পরবর্তী সময়ে প্রফেশনাল ভিসায় সৌদি আরবে যেতে চান তাদেরও এ পরীক্ষার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তারা নিজ নিজ দেশে বসেই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরীক্ষা কেন্দ্রের সহায়তা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, সৌদি আরব সরকারের ভিশন ২০৩০ অনুযায়ী, দেশের শ্রমবাজারে ৭০ শতাংশ সৌদি আরবের নাগরিককে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেজন্য অদক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই করে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সূত্র: বণিক বার্তা