নিউজ ডেস্ক: দীর্ঘ ২০ বছর পর চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির সম্মেলনের প্রস্তুতি চললেও মেয়াদোত্তীর্ণ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগের সম্মেলন কবে তা কেউ জানে না।
কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কাজ চলছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ চট্টগ্রাম মহানগরে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনের মাধ্যমে, নাকি কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটি গঠন করা হবে তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে।
দেড় মাস আগে অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আলোচনা ছিল, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরপরই চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। সিটি নির্বাচনের পর এসব কমিটির দিকে তাকিয়ে আছেন নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
দলীয় নেতাদের কেউ চাচ্ছেন সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হোক। আবার অনেকের মতে, সম্মেলন হলে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। তাই কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটি গঠন করা গেলে ভালো হয়। আবার কারো মতে, তৃণমূলে সম্মেলন করে নগর কমিটিগুলোর সম্মেলন করা যেতে পারে। তবে দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে কমিটি গঠন না করে কেন্দ্র থেকে সব কিছু যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনের ওপর জোর দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০০১ সালের জুলাই মাসে। এটি ছিল চট্টগ্রাম মহানগরে সংগঠনের প্রথম কমিটি। আগামী ১১ এপ্রিল নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের উপস্থিতিতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল শনিবার এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাধিক নেতা জানান, বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচ এম জিয়াউদ্দিন, তিন যুগ্ম আহ্বায়ক কে বি এম শাহজাহান, সালাউদ্দিন আহমেদ, আমিনুল ইসলামসহ ২১ সদস্যের কমিটির বেশির ভাগ নতুন কমিটিতে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা চাচ্ছেন নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে। আর সম্মেলনের দিনই নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে চান তাঁরা।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচ এম জিয়াউদ্দিন গতকাল বিকেলে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব দেওয়ার পর তৃণমূলের কমিটিগুলো গঠন করেছি। নগর কমিটির সম্মেলন করার চেষ্টা করলেও বিভিন্ন কারণে তা হয়নি। এবার নতুন কমিটিতে আমিসহ আমাদের তিন যুগ্ম আহ্বায়কের কেউ থাকছি না। আমরা চাচ্ছি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যাঁরা সক্রিয় তাঁদের নেতৃত্বে আনতে।’
একই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কে বি এম শাহজাহান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। আমরা চাচ্ছি সবাইকে নিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমেই নতুন নেতৃত্ব আসুক। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে কমিটি হবে। ১০১ সদস্যের কমিটি হতে পারে। পদগুলোতে একাধিক প্রার্থী থাকলে ভোটাভুটিতে নেতৃত্ব আসবে।’
এদিকে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটিতে পদ-পদবি পেতে লবিং করছেন লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত মো. বেলাল, দেবাশীষ নাথ দেবু, জাবেদুল আলম নাসির, হেলাল উদ্দিন, আজিজুর রহমান আজিজ, নুরুল কবির, আবু সাইয়েদ সুমন, অ্যাডভোকেট তসলিম উদ্দিন, মো. লোকমানসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ডজনখানেক সাবেক নেতা।
অন্যদিকে ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের বর্তমান কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল। চার বছর আগে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। একইভাবে ২০১৩ সালে কেন্দ্র থেকে দেওয়া ১০১ সদস্যের মহানগর যুবলীগের তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি এরই মধ্যে সাত বছর আট মাস সময় পার করেছে। কেন্দ্র থেকে দেওয়া ২৯১ সদস্যের মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিরও সাড়ে পাঁচ বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়েছে। আর ১৭ বছর ধরে বহাল মহানগর শ্রমিক লীগের একই কমিটি। এ কমিটির পাশাপাশি নগর কৃষক লীগের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ।
এসব কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কবে নাগাদ সম্মেলন হবে তা তাঁরা জানেন না। আর নতুন কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে হতে পারে অথবা কেন্দ্র থেকেও ঘোষণা করা হতে পারে।
সংগঠনগুলোর নেতারা জানান, ২০১৯ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে চট্টগ্রাম নগরে এসব সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন কিংবা কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটি দেওয়ার কথা শোনা গেলেও চসিক নির্বাচনের কারণে হয়নি। এখন কেন হচ্ছে না, তা স্থানীয় নেতারা জানেন না। - কালের কণ্ঠ