শারফিন শাহ্: ‘খোকা’শব্দটি তুর্কি। ‘বাবু’শব্দটি ফারসি। খোকাবাবু তুর্কি-ফারসি সংমিশ্রণ। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’। গোলাপ শব্দটি ফারসি, হাওয়া শব্দটি আরবি, হিন্দু শব্দটি ফারসি- রবীন্দ্র রচনায় এসব শব্দ বারবার এসেছে। এমনকি রবীন্দ্রনাথের নামের ‘ঠাকুর’ উপাধিটাও তুর্কি শব্দভুক্ত। নজরুলের কবিতায়, গানে আরবি, ফারসি শব্দ তো বটেই হিন্দি শব্দেরও ছড়াছড়ি। চাচা, দাদা, দাদি, পানি, ফুফা, ফুপি যে হিন্দি শব্দ তা কজন জানে? টুপি শব্দটি যে পর্তুগিজ তার খবর কজন টুপি পরা জানে? ভাষা শুধু অসা¤প্রদায়িকই নয়, ধর্মনিরপেক্ষও। কিন্তু বাঙালি সমাজে দেখা যায় হিন্দু-মুসলমান পরস্পরকে কিছু শব্দের কারণে পৃথক করার চেষ্টা করে।
মুসলমানদের একটি অংশ রবীন্দ্রনাথের ভাষাকে ‘হিন্দুয়ানী ভাষা’বলে। আবার হিন্দুরা মুসলমানের ঘরোয়া ভাষাকে ‘মুসলমানি ভাষা’বলে উপেক্ষা করে। তবে মুসলমান সমাজে ভাষাগত দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই উদার। মুসলমানরা মন্দির, পূজা, দেবী প্রভৃতি শব্দ সানন্দে পাঠ করে। কিন্তু হিন্দুরা মুসলমানের শব্দকে গ্রহণ করতে পারে না। এজন্য পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের সাহিত্যের পাঠক কম, আর আমাদের দেশে পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যের পাঠক বেশি। এই সমস্যার কারণে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কথাশিল্পী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তার অনেক লেখায় মুসলমানের ঘরোয়া শব্দগুলোকে ব্র্যাকেটে বুঝিয়ে দিয়েছেন! বাংলার সমাজে হিন্দু ও মুসলমানকে ‘এক বৃন্তে দুটি কুসুম’বলে অভিহিত করেছিলেন নজরুল। দীর্ঘদিন পাশাপাশি থেকেও এরা পরস্পরকে জানার ইচ্ছা পোষণ না করার ফলেই এমন ভাষার বিরোধ উদ্ভূত হয় কখনো কখনো। প্রকৃতপক্ষে ভাষার কোনো ধর্ম নেই। কেউ যদি ধর্ম টেনে আনেন তাকে ছাগল বলে এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। ফেসবুক থেকে