ইসমাঈল ইমু, রাশিদ রিয়াজ : [২] একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির ঘটনায় শাস্তি হিসেবে পদাবনতি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান বলেছেন, তাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাননি। এ বিষয়ে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কঠোর নির্দেশ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেও আছেন।
[৩] সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে সামিয়া রহমান এসব কথা বলেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এবং আইনজীবী তুরিন আফরোজ।
[৪] জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানায় ওই গ্রন্থের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। নিবন্ধটিতে ফুকো ছাড়াও ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন চিন্তক এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতা হুবহু কপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
[৫] ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে একটি কমিটি করে সিন্ডিকেট। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সামিয়া-মারজানের চৌর্যবৃত্তির অভিযোগটির সত্যতা মিলেছে। তবে কমিটি কোনো শাস্তির সুপারিশ করেনি। সামিয়া-মারজানের শাস্তি নির্ধারণের জন্য গত বছরের অক্টোবরের সিন্ডিকেট সভায় আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য মো. রহমত উল্লাহকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল ইনক্রিমেন্ট কাটার মতো ‘লঘু শাস্তির’ সুপারিশ করলেও সিন্ডিকেট তা নাকচ করে দেয়।
[৬] সামিয়া রহমান বলেন, যে গবেষণার লেখার জন্য তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেটা তিনি লেখেননি, জমাও দেননি। এ সংক্রান্ত প্রমাণও তার কাছে আছে। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ কেউ এবং কিছু শিক্ষক জড়িত রয়েছেন বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। এ ঘটনার জন্য জার্নালের রিভিউয়ার ও বোর্ডের শাস্তির সুপারিশ ছিল। তাদের শাস্তি হয় না, কারণ তারা প্রতিষ্ঠিত বলে বিশ্ববিদ্যালয় তা সুকৌশলে এড়িয়ে যায়, আর বলির পাঁঠা হই আমি। শিকাগো জার্নালের যে ব্যক্তির ই-মেইলের কথা বলা হয়েছে, সেটি ভুয়া বলে দাবি করেন সামিয়া রহমান।
[৭] ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শীর্ষক আট পৃষ্ঠার একটি নিবন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নিজস্ব জার্নাল সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউয়ে প্রকাশিত হয়। তখন অভিযোগ ওঠে, ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে পাঁচ পৃষ্ঠার মতো হুবহু নকল করেছেন তারা।