শঙ্কর মৈত্র: সব প্রতিবাদ সাংবাদিকদেরই করতে হবে কেন? তাহলে ঘোষণা দিন, সাংবাদিক ছাড়া আর কারও মেরুদণ্ড নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে মৃত্যুবরণকারী মোশতাক আহমেদ সাংবাদিক ছিলেন না। তিনি দেশি-বিদেশি এনজিওতে বড় পদে চাকরি করেছেন। ফেসবুকে তার প্রতিবাদী লেখা সরকারের মনপুত হয়নি, এ জন্য তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে। ধরে নিলাম সরকারের নির্বাহী বিভাগ দমন পীড়ন চালিয়েছে। কিন্তু বিচার বিভাগ কি করেছে? তার এমন কী অপরাধ ছিল যে ৬ বার জামিন আবেদন করেও জামিন মেলেনি? যেখানে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি সকালে গ্রেপ্তার হয়ে বিকেলে জামিন পেয়ে যায়। কর ফাঁকির মামলায় বড় শিল্পপতির কারাদণ্ড হয় উচ্চ আদালতে এ রায় বহাল থাকলেও একদিনও কারাভোগ না করে মামলা ভেনিস করে ফেলা যায়। তাহলে কী এমন ধারণা হচ্ছে বিচার বিকিকিনি হয় কিংবা পিক অ্যান্ড চুজে হয়? বিচারকের জবাবদিহিতা থাকবে না? একই অপরাধে দুই ধরনের বিচার হবে কেনো? মুশতাক কিংবা কার্টুনিস্ট কিশোর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সিভিল সোসাইটির লোকজন, অবসরপ্রাপ্ত সচিব আমলা যারা অবসরে গিয়ে পত্রিকায় মানবাধিকার, ন্যায় বিচারের কলাম লিখে ফাটিয়ে ফেলেন, টকশোতে নীতিকথা বলে টিভি ভেঙে ফেলেন তারা কোনো প্রতিবাদ করেননি কেনো? তারাওতো মাঠে নামতে পারতেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শুধু সাংবাদিকদের মণ্ডুপাত করবে না। সবাই শিকার হবেন। কিন্তু দেখেশুনে মনে হয় যেন সাংবাদিকদের জন্যই এটা করা হয়েছে। আসলে কিন্তু তা নয়। একটা কথা এখনও বুঝানোই যাচ্ছে না যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু সাংবাদিকদের জন্য না। এটা রাষ্ট্রের প্রতিটা নাগরিকের জন্য। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সাংবাদিক ছাড়া আর কারও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দরকার নেই। সব ঠেকা সাংবাদিকদের। আরেকটা কথা, এখানে স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতাও হয়। যা খুশি তা লিখে ফেলা, বলে ফেলা স্বাধীনতা নয়। পত্র পত্রিকাতো আছেই, এখন সবচেয়ে ভয়ানক হয়ে দাঁড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ। সত্য মিথ্যা সব গুজবের উৎস এখন এগুলো। আইন ও শাস্তির ভয় না থাকলে ভার্চুয়াল এ জগতটা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে। কাজেই সাধু সাবধান। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :