সালেহ্ বিপ্লব: [২]মাল্টি- ট্রিলিয়ন ডলারের এই অর্থনীতির এক শতাংশের কম ভাগ পেলেও বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের চেয়ে বেশি উপার্জনের পথ উন্মোচিত হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার আগে বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা এবং নীতিমালা তৈরিরও পরামর্শ দেন তারা।
[৩] কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভ’ অনুষ্ঠানে তারা এই মতামত দেন।
[৪] স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ‘মাল্টি- ট্রিলিয়ন মহাকাশ অর্থনীতি, বাংলাদেশ কতোটা প্রস্তুত’ শীর্ষক এই আলোচনায় বক্তব্য রাখেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবার অধ্যাপক ড. ইকরাম হোসেন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিআইডিএ) সাবেক মহাপরিচালক তৌহিদুর রহমান খান এবং হিউস্টনভিত্তিক দ্যা ভার্চুয়াল আমেরিকান কোম্পানিজ এলএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তথ্যপ্রযুক্তিবিদ শামীমুজ্জামান।
[৫] শামীমুজ্জামান মহাকাশ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনার বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন,আমরা এখন আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতের মহাকাশ অর্থনীতির আয়তন যদি ১ ট্রিলিয়ন ডলার হয়, বাংলাদেশ তার মাত্র ১ শতাংশ ভাগ পেলেও ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হবে, যা বর্তমানের প্রবাসী আয়ের পরিমাণের চেয়েও বেশি।
[৬] তিনি বলেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরে মহাকাশে ৬০ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট ছাড়া হবে। তখন এই মহাকাশই হবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সোনা আহরণের ক্ষেত্র। এই স্যাটেলাইটগুলোর সার্ভিসিং দিয়েই একটি দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেয়া যায়।
[৭] তিনি বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণে রকেট উৎক্ষেপণ পোর্ট তৈরি করে ভাড়া দেয়ার সম্ভাবনাময় কেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক জোনে রকেট এসেম্বলিং প্ল্যান্টও স্থাপন করা যায়। মহাকাশ ভিত্তিক নতুন ধরনের ইন্টারনেট ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কিং, স্যাটেলাইট নির্ভর ডিভাইস আর অ্যাপস তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ মহাকাশ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশিদারে পরিণত হতে পারে।
[৮] তৌহিদুর রহমান খান বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু কিছু দীর্ঘসূত্রতা বাদ দিলে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারীদের জন্য সোনার খনি। ফলে নতুন কোনো ধরনের সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগের আলোচনা উঠলে বিদেশি বা দেশি বিনিয়োগকারী পেতে কোনো সমস্যা হবে না। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিখাতের বিনিয়োগ সক্ষমতা এবং আগ্রহ দুই আছে, তবে সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালা থাকতে হবে।
[৯] মহাকাশ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সম্ভাবনাকে স্বপ্ন নয় বাস্তব হিসেবে অভিহিত করে তৌহিদুর রহমান খান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক মেধাবী এবং দক্ষ বাংলাদেশি এই খাতে কাজ করছেন। দেশেও যথেষ্ট প্রতিভাবান তরুনেরা আছেন। বিদেশি কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশের বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী। প্রয়োজন কেবল সরকারের সিদ্ধান্ত এবং কিন্তু একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। নীতিমালা না থাকলে কেউ এখানে কাজ করতে এগিয়ে আসবে না।
[১০] অধ্যাপক ড. ইকরাম হোসেন মহাকাশ প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোর পাঠ্যসূচীতে এখনি মহাকাশ প্রযুক্তি বিষয়ক পাঠ্যক্রম যুক্ত করা দরকার।
[১১] মহাকাশ প্রযুক্তি এবং অর্থনীতিতে দাঁড়াতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে যেতে বলে উল্লেখ করে ড. ইকরাম হোসেন বলেন, আমেরিকা চীনই যে এই অর্থনীতির শীর্ষে রয়েছে তা নয়। প্রতিবেশি ভারত, পাকিস্তানও ইতিমধ্যে মহাকাশ প্রযুক্তির খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমেছে।চীনের পাশাপাশি এই দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতা করতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে জনশক্তি।
[১২] শওগাত আলী সাগর বলেন, সম্ভাবনাময় মহাকাশ অর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আরো বেশি আলোচনা হওয়া দরকার, যাতে জনগণ এবং সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন।
[১৩] তিনি বলেন, প্রযুক্তির দুনিয়ায় প্রবেশের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অতীতে সাবমেরিন কেবল প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীনতায় জাতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। মহাকাশ প্রযুক্তির ব্যাপারে যেনো অতীতের সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
আপনার মতামত লিখুন :