এ বি এম কামরুল হাসান : বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও কোভিড ভাবগাম্ভীর্য হীনতার মধ্যে দেশে কোভিড এর টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। সব উৎসবের মত কোভিডেরও একটা ভাবগাম্ভীর্য রয়েছে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি -কাশির সময় বাহু দিয়ে মুখ ঢাকা, ভিড় এবং দূর্বল বাতাসযুক্ত স্থানগুলি এড়িয়ে চলা- এগুলোই কোভিডের ভাবগাম্ভীর্যতা। টিকা দেয়া নেয়ার সময় উৎসাহ ও উদ্দীপনার কমতি নেই। অভাব কেবলি ভাবগাম্ভীর্যের। অভাবটি বেশি দেখা গেলো একজন মন্ত্রীর টিকা নেয়ার সময়। ছোট একটি আবদ্ধ রুমে জনা তিরিশেক টাই কোট পরা ভদ্দরলোক। সামনের দৃশ্য তো আমরা দেখি নাই। না জানি কত আলোকচিত্রী ছিল সেখানে। কিসের নিরাপদ দূরত্ব ? পৃথিবীর আর কোন দেশে এমন চিত্র দ্বিতীয়টি আর দেখা যায়নি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে মন্ত্রী মহোদয় টিকা দেয়ার সময় কাত হয়ে আছেন। আরেকজন তাকে ধরে রেখেছেন। বোধ হয়, বাম দিকের অতি উৎসাহী ভদ্দরলোকদের চাপে তিনি ডান দিকে ঝুকে গেছেন। কেউ কেউ ছবিটির ভিন্ন অর্থ খোঁজার চেষ্টা করছেন। ব্যাপারটা আসলে তা না। বালাইহীন নিরাপদ দূরত্ব ছাড়া ছবিটিতে দোষের আর কিছুই নাই।
উৎসাহ উদ্দীপনার এই উৎসবে আরেকটি ছবি দোষের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি ইনজেকশন দিচ্ছেন। কি সর্বনাশ ? কোভিড ভ্যাকসিন দিতে পারবেন নার্স, চিকিৎসক, স্বাস্থ্য পেশায় শিক্ষার্থী, চিকিৎসক সহায়তাকারী, ফার্মাসিস্ট, ডেন্টিস্ট এমনকি পশু চিকিৎসক যদি তারা নিয়মিত ইনজেকশন দেন। আমেরিকার পাবলিক হেলথ এসোসিয়েশন এমনটাই বলছে। এ তালিকায় জনপ্রতিনিধি নেই। তবে কোন জনপ্রতিনিধি উপরোক্ত পেশা সংশ্লিষ্ট হলে ভিন্ন কথা। আনাড়ি হাতে ইনজেকশন দেয়ার ফলে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা মেডিকেল সায়েন্সে ভুরি ভুরি রয়েছে। ছবিটি কোভিড ভ্যাকসিন উৎসবে অনেকটাই কালিমা লেপন করেছে।
জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন নেতা। তিনি অভিনেতা নন। কোন অভিনেতা জনপ্রতিনিধি হতে পারেন। তবে তিনি অভিনেতা পর্দা বা মঞ্চে। তিনি নেতা জনতার কাতারে। একজন জাতীয় নেতা তাঁর এলাকায় ভ্যাকসিন নেয়ার অভিনয় করে ছবি তুললেন। আসলে তিনি ভ্যাকসিনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন ঢাকায় । সে ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছবিটি আম জনতাকে একটা ভুল বার্তা দিতে পারে। মানুষের মধ্যে একটা সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে পারে। অনেকেই ভাবতে পারেন, ছবিতে যে বড় বড় মানুষদের ভ্যাকসিন নেয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে -সবই কি সত্যি না কি অভিনয় ?
সর্বস্তরের মানুষকে টিকায় উৎসাহ দিতে সামনের সারির কোভিডযোদ্ধারা টিকা গ্রহণের ছবি দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সেই উৎসাহ দিতে যেয়ে যেভাবে উদোম ছবি দিচ্ছেন বা স্যান্ডো গেঞ্জির বিজ্ঞাপনের মত ছবি প্রদর্শন করছেন -সেটা বড়োই দৃষ্টিকটু। টিকা গ্রহণ পূর্বপরিকল্পিত। পরিকল্পনা করে বাড়ি থেকেই বের হন। টিকা উপযোগি পোশাক যেমন টি শার্ট, হাফ হাতা জামা, শাড়ির সাথে স্লিভলেস বা ছোট হাতার ব্লাউজ ও সাথে শাল-এগুলো পরে যেতে পারেন। তাতে টিকাদান কেন্দ্রে আপনাকেও বিব্রত হতে হবে না। সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা উদোম শরীরের ছবি দেখতে বাধ্য হয়, তারাও স্বস্তি পায়। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :