মোস্তফা ফিরোজ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছেন, বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের তদন্ত করবে বাংলাদেশ। বাকি অসত্য বিষয়গুলোর বিষয়ে প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে। তার মানে আল-জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি তিনি উড়িয়ে দেননি। কিছু তথ্যকে তিনি মনে করছেন, তদন্ত করা উচিত। অথচ দুঃখজনক হলো, দেশের কেনো কোনো মিডিয়ায় সাংবাদিক, শিক্ষক, বিচারক ও আলোচক গোটা বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে অনর্গল বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তারা হাঙ্গেরিতে জাল পরিচয়ে থাকা হারিসের মতো এক অপরাধীকে পাগল, এমনকি ছাগল বলে আখ্যায়িত করে গুরুতর অভিযোগকে হালকা করে দিচ্ছেন।
অথচ আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছি, বাবা রাজাকার বলে ছেলে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। এদেশে বহু সৎ মানুষ আছে, যারা বাবা বা ছেলে ঘুষখোর, দুর্নীতিরপরায়ণ বলে তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না। সেখানে আমরা আল-জাজিরায় কী দেখলাম? তবে সমালোচকদের সঙ্গে আমিও একমত যে, এই রিপোর্টে অনেক দুর্বলতা আছে। এই বিষয়ে আমার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন জমা হয়ে আছে। কিন্তু তাই বলে প্রতিবেদনের পুরোটা নাকচ করতে চাই না। এর কোনো কোনো পয়েন্ট বা প্রশ্নের বিশ্বাসযোগ্য নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সম্ভবত এই কথাটি বলতে চেয়েছেন। বাস্তবতা অনুধাবন না করে যতোই বিষয়টিকে উড়িয়ে দিই না কেন, সাধারণ মানুষ কিন্তু তা বিশ্বাস করতে চাইবে না।
এখন আমি তর্কের খাতিরে একটি প্রসঙ্গ এখানে তুলে ধরি। বিএনপির সময় হাওয়া ভবন নিয়েও অনেক অভিযোগ ছিলো। এটা নিয়ে কোনো মিডিয়া অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে পারতো। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা তখনো সহজসাধ্য ছিলো না। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পাওয়া কঠিন হয়। সুতরাং হওয়া ভবন বিষয়ে প্রতিবেদন যদি করাও হতো, সেখানেও থাকতো নানা সীমাবদ্ধতা।
তখনো কিন্তু একপক্ষ ওই দুর্বলতাগুলোকেই প্রধান করে তা উড়িয়ে দিয়ে বলতো যে, এটা কোনো প্রতিবেদনই হয়নি। কেউ কেউ এটা প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রও বলতো। তখন অন্য পক্ষ কি চুপ করে থাকতো? তারা কি এটা সত্য বলতেন না? তদন্ত করা হোক, এমন দাবি কি তুলতেন না? তাই আল-জাজিরার প্রতিবেদনে কোনো পক্ষেরই খুশি বা অখুশি হবার বিষয় থাকা উচিত নয়। এখানে দেশের স্বার্থ ও সুশাসনকে মাথায় রাখা প্রয়োজন। দেশে দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা ক্ষমতাধরদের দুর্নীতি/অনৈতিকতা নিয়ে কম বেশি সবাই এতোদিন কথা বলেছেন। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে সেই পুরনো কথাই তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে যদি একটি পয়েন্টও সত্য হয় তাহলে তা আমলে নিয়ে তার সুরাহা করা প্রয়োজন জবাবদিহিতার স্বার্থে। এই কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তার দায়িত্বশীল বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দেয়া যেতে পারে। ফেসবুক থেকে