শরীফা খাতুন : [২] আত্মপক্ষ সমার্থনের সুযোগ পেয়েও তিন শিক্ষক তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা বা দুঃখ না করায় এবং অবাধ্যতা, গুরুতর অসদাচারণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসন বিরোধী কার্যক্রম ছাড়াও একাধিক অভিযোগ সন্দেহাতীতকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে চাকুরি থেকে বরখাস্ত এবং দুইজন শিক্ষককে চাকুরি থেকে অপসারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।
[৩] বরখাস্তকৃত শিক্ষক হলেন বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী শিক্ষক মোঃ আবুল ফজল। অপসারণকৃত শিক্ষকদ্বয় হলেন ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী ও বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম।
[৪] শনিবার অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় এ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তসহ আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও সভায় স্থান পায়।
[৫] বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র ও সিন্ডিকেট সচিব ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস জানান, উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, নতুন সদস্য প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার, প্রফেসর ড. মোঃ মনিরুল ইসলাম, প্রফেসর এ কে ফজলুল হক, প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল জব্বার, ড. নিহার রঞ্জন সিংহকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
[৬] এছাড়া সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন, প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা, প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবুর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগিরর অন্যান্য সকল সদস্য সভায় উপস্থিত ছিলেন।
[৭] সিন্ডিকেটের অপর দুই সদস্য খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য বর্তমানে ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন এনডিসি অনলাইনে যুক্ত থেকে এ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
[৮] সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটক স্থাপনের নকশাও গৃহীত হয়। এছাড়া উপাচার্য ফিতা কেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে একটি আর্কাইভ এর উদ্বোধন করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
[৯] সিন্ডিকেট সদস্যদের অনেকেই গত দশ বছরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসন্কি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধমে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এবং উপাচার্য হিসেবে তাঁর ধৈর্য, নিষ্ঠা, আন্তরিকতার জন্য তাকে অন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
[১০] উপাচার্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তার দুই মেয়াদ মিলিয়ে দশবছর দুই মাস সময়ে দায়িত্ব পালনে সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
[১১] তিনি বলেন, এই দীর্ঘ সময়ে কাজ করতে যেয়ে তিনি সব সময়েই সবার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ দেখেছেন। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চেষ্টা করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি কোয়ালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে চেষ্টা করেছেন। তিনি কাজ করতে যেয়ে কারও প্রতি ব্যক্তিগতভাবে বিরাগভাজন হয়ে বা ব্যক্তিগত ঈর্শ্বাপরায়ণ হননি।
[১২] প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে, প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন সমুন্নত রাখতে বেশ কিছু বিষয় সামনে চলে আসে। অপ্রিয় হলেও প্রচলিত বিধিবিধানের কারণে সে বিষয়ে নিস্পত্তি করতে যেয়ে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার কর্মকালে সিন্ডিকেট সভায় অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসবই বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে। তবে তিনি বলেন মানুষ হিসেবে আমরা ভুল করতেই পারি। কিন্ত সেই ভুলের জন্য দুঃখবোধ বা অনুশোচনা থাকাটা জরুরি। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনে সামনে এগোতে হয় এটাই জীবনের বাস্তবতা।
[১৩] এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১১তম সভার সিদ্ধান্তে উক্ত তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপর্যুক্ত শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে নিয়মানুযায়ী রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাদের স্ব স্ব নামে কেনো তাদেরকে বরখাস্ত এবং অপসারণ করা হবে না মর্মে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য পত্র দেওয়া হয়। অভিযুক্ত তিনজন নির্ধারিত ২১ জানুয়ারি দুপুর মধ্যে উক্ত পত্রের জবাব প্রদান করেন।
[১৪] তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে তিনজন শিক্ষক জবাব দিলেও তারা কোনো রকম দুঃখ বা ক্ষমা প্রকাশ করেন নি। নিয়মানুযায়ী আজ ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় পূর্ববর্তী ২১১তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত এবং তিন শিক্ষককে দেওয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে জবাব নিয়ে দীর্ঘ পর্যালোচনা করা হয়। শেষে সিন্ডিকেট তাদের চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত এবং অপসারণের সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।