শিরোনাম
◈ ফ্রা‌ন্সের লিও শহ‌রের কসাই থেকে গাজার কসাই: ইতিহাসে বারবার অপরাধীদের বাঁচিয়েছে আমেরিকা ◈ রিজার্ভে বড় সাফল্য: আইএমএফের লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ, প্রবাসী আয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি! ◈ আদানির বকেয়ার সব টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ◈ মাঠে ছড়িয়ে থাকা লেবু ও  ডিম দে‌খে ম্যাচ খেলতে আসা ‌ক্রিকেটাররা ভয়ে পালালেন ◈ ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে আপত্তি মোদি সরকারের! ◈ উনি ক্লাসে বাজে ঈঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার পাশাপাশি বডি শেমিং করেন ◈ এবার নিউ ইয়র্ক মেয়রপ্রার্থী মামদানিকে গ্রেপ্তারের হুমকি ট্রাম্পের!, তীব্র প্রতিক্রিয়া ◈ বউ পেটানোয় শীর্ষে খুলনা ও বরিশালের মানুষ: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (ভিডিও) ◈ ক‌ষ্টের জ‌য়ে ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনা‌লে রিয়াল মা‌দ্রিদ ◈ দুপু‌রে এ‌শিয়ান কাপ বাছাই‌য়ে স্বাগ‌তিক মিয়ানমা‌রের বিরু‌দ্ধে লড়‌বে বাংলাদেশ নারী দল

প্রকাশিত : ১০ জানুয়ারী, ২০২১, ১০:০৯ দুপুর
আপডেট : ১০ জানুয়ারী, ২০২১, ১০:০৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান: ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডন দিল্লি হয়ে প্রাণের শহর ঢাকা ফিরে আসেন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান: ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বিকালে বঙ্গবন্ধু লন্ডন দিল্লি হয়ে প্রাণের শহর ঢাকা ফিরে আসেন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে। ঢাকায় অবতরণের পূর্বে কমেট বিমানটি বঙ্গবন্ধুর অভিলাষের প্রতি শ্রদ্ধাবশত প্রায় ৪৫ মিনিট বিমানবন্দরের উপর চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। ওপর থেকে তাঁর ‘সোনার বাংলা’কে অবলোকন করার ই”ছা প্রকাশ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। অভ্যর্থনায় অনেক কূটনীতিক আসলেও চীন ও ইরানের কনসাল জেনারেলদ্বয় অনুপ¯ি’ত ছিলেন, তবে যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল হার্বার্ট ডি. স্পিভাক এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে করমর্দন করার সময় সৌজন্য প্রকাশের জন্য সামান্য অবনত হন এবং বলেন ‘ঢাকায় স্বাগতম’। বঙ্গবন্ধু হেসে উত্তর দেন, ‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ’। বিমানবন্দর থেকে লাখো জনতার ভিড় ঠেলে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে। সেদিন রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন, তাঁর দুই চোখ গড়িয়ে অশ্রু পড়ছিল বারবার। তিনি কান্নারত কণ্ঠে বলেন, ‘বিশ্বকবি তুমি বলেছিলে সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি, বিশ্বকবি তোমার সেই আক্ষেপ মিথ্যা প্রমাণিত করে সাত কোটি বাঙালি যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে।’ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার মত করে নির্মিত ১০০ ফুট দীর্ঘ ম থেকে ৩৫ মিনিটের ভাষণে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি জানতাম না আবার আপনাদের মধ্যে ফিরে আসতে পারব। আমি ওদের বলেছিলাম, তোমরা আমাকে মারতে চাও মেরে ফেলো। শুধু আমার লাশটা বাংলাদেশে আমার বাঙালিদের কাছে ফিরিয়ে দিও...। আমার ফাঁসির হুকুম হয়েছিল, জীবন দেবার জন্য প্র¯‘ত হয়েছিলাম। বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মানুষ একবারই মরে... মরার আগে বলে যাব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, জয় বাংলা...।’ বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, গত ৭ মার্চ আমি এই রেসকোর্সে বলেছিলাম ‘দুর্গ গড়ে তোলো’। আজ আবার বলছি আপনারা একতা বজায় রাখুন। আমি বলেছিলাম, ‘বাংলাদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ‘ইনশা আল্লাহ’। বাংলাদেশ আজ মুক্ত স্বাধীন। ...আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয় নেতা হিসেবে নয় আপনাদের ভাই হিসেবে বলছি...যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায় তাহলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে- পূর্ণ হবে না। ...বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোন ধর্মীয় ভিত্তি হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

জনসভা শেষে তাঁর ধানমন্ডির বাড়িতে পৌঁছালে এক আবেগঘন পুনর্মিলনের দৃশ্য লক্ষ করা গেল। ১১ জানুয়ারি, ১৯৭২ দৈনিক আজাদে প্রকাশিত শওকত আনোয়ারের বর্ণনা মতে, ‘সকাল থেকেই ভিন্ন মেজাজে ছিল ঐ বাড়ীর সবাই। বাড়ীর সব ছোটমণিদের হাতে ছিল লাল ফুল। আর রাসেলই (১৯৬৪-১৯৭৫) ছিল এই ফুলকলিদের মেলার মধ্যমণি। ‘আব্বু আসবে’ তাই রাসেলের আনন্দ ধরে না। বেতার ধারা বিবরণীতে বিমানের নিরাপদ অবতরণের খবর প্রকাশের পর বেগম মুজিব একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। ...বেতার ধারা বিবরণীর প্রতিটি শব্দ যেন তাঁরা হৃদয় দিয়ে শুনেছেন। ....বাসায় টেলিভিশন ছিলো না। তাই বেতার ধারা বিবরণীই ছিলো তাঁর মুহূর্তগুলো ধরে রাখার একমাত্র অবলম্বন। ...সন্ধ্যে পৌনে ছ’টায় স্বাধীন বাংলার পতাকাবাহী একটি সাদা ক্যাডিলাক গাড়ি প্রবেশ করল এই বাড়ীর প্রবেশ দ্বারে গাড়ির দ্বার খুলে গেল। নেমে এলেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব...। বন্ধু-বান্ধবরা যখন তাঁর ওপর ফুলের পাপড়ি বর্ষণে ব্যস্ত তখন তিনি তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরেন। এরপর তিনি তাঁর ৯০ বছর বয়স্ক পিতার সামনে হাঁটু গেড়ে বসেন এবং তাঁকে কদমবুচি করেন। আর ৮০ বছর বয়স্কা মা এসে ঘরে ঢুকলে তিনি তাঁকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দুইমাসের মধ্যেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী মিত্রবাহিনীর সদস্যরা ভারতে ফিরে যায়। ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ ঢাকা স্টেডিয়ামে ভারতীয় বাহিনীর আনুষ্ঠানিক বিদায়ী কুচকাওয়াজ হয়। এই কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর শেষ দলটির বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। এখন চলছে আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে মুক্তির সংগ্রামের কথা বলেছিলেন তা ছিল মূলত অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম। যে সংগ্রামে বর্তমানে নেতৃত্ব দি”েছন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। লেখক : উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়