অজয় দাশগুপ্ত: এমন বড়দিন আগে কখনো দেখেনি মানুষ। সভ্যতার এমন বিপর্যয় এমন মড়ক অবিশ্বাস্য। ঈদ, পূজা, বড়দিন কোনটিই এবার পারছে না আপন রূপে জাগতে বা জাগাতে। এমন দুঃসহ করোনা কালে বড়দিন এসেছে দুনিয়ায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি যে কোনো মতবাদের চাইতে ধর্মের যেটুকু অবিশিষ্ট কল্যাণকর স্বরূপ তার প্রতি মনোযোগী। আজকাল ধর্মের নামে যে সব অনাচার আর অশান্তি তাতে মানুষজন মূলত বিরক্ত। বিশেষত আমাদের মতো দেশ ও সমাজে ধর্ম সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মরিয়া। ধর্মতো না আসলে কথিত ধার্মিকেরা তাই চায়। কিন্তু মুশকিল এই তাদের যে পাঠ, যে জ্ঞান আর বিদ্যা থাকা দরকার তা নেই। তারা সেসবের ধার ধারেন না। যে কারণে বিজ্ঞান ও ধর্ম এখন সাংঘর্ষিক।
খৃষ্টধর্মের এই দিকটি আমাকে টানে, যখন তারা দেখলো যে পুরনো ভার্সনের সঙ্গে সভ্যতা সংস্কৃতির মতভেদ লড়াইতে পরিণত হচ্ছে গ্যালিলিও থকে জোয়ান অব আর্ক পর্যন্ত যাবতীয় ঘটনা বলছে ভিন্ন কথা তখন তারা নতুন টেষ্টামেন্ট লিখে ধর্মকে আধুনিক রাখার কাজ শেষ করলেন। এ ছাড়া ও দুনিয়ার সবদেশে এই ধর্মাবলম্বী মানুষেরা পোশাক, খাবার খাওয়ার রীতি ও আচরণে সভ্য। সবাই বা সব ধর্মের ভেতরেই তা আছে। কিন্তু বাই নেচার এরা আধুনিক। বাঙালি খৃষ্টান এবং আমাদের উপজাতিরাও এর বাইরে না। তাদের কাছে আমাদের কাঁটা চামচ ছুরি ও টেবিলে বসে খাবার গ্রহণের রীতি এখনো শেখার বাকী।
আমাদের জীবনে যীশুর ভূমিকাও গৌরবময়। আপনি বাংলা ভাষায় নীরেন চক্রবর্তীর কলকাতার যীশু’র মতো কবিতা দুটো খুঁজে পাবেন না। যে অর্থেই তা লেখে থাকা হোক শেষ অবদি তা যীশুতেই সমর্পিত। আমি জানি এখন দেশ ও সমাজ মূর্তি না ভাস্কর্য এ নিয়ে বেশ ঝামেলায় আছে। চারদিকে ভাঙাভাঙি এর দু’দিকে অবস্থানরত মানুষেরা লড়ছেন। একদল ভাঙবেই আর একদল রাখবে। আমি বিনয়ের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত মত দিতে গিয়ে বলি দুনিয়ায় চোখ জুড়ানো তিনটি ভাস্কর্য বা মূর্তি মানুষকে প্রেরণা শান্তি ও কল্যাণের পথ দেখিয়ে এসেছে দেখাবেও। একটি দশভূজা একা দুর্গা, একটি ধ্যানী বুদ্ধ আরেকটি দু হাত প্রসারিত ক্রুশবিদ্ধ যীশু। তার জন্মদিন আমরা ছেলেবেলা থেকে সানন্দে গানে সুরে আবহে পালিত হতে দেখেছি। আশাকরি এবারও তাই হবে। আর মানুষ সব দুঃখ, কষ্ট ,শোক-পরিতাপ ভোলার আশ্রয় খুঁজবে অনন্তে অদৃশ্যে। যীশুর জন্মদিনে সবাইকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
সিডনি,২৪/১২/২০
আপনার মতামত লিখুন :