সুজন কৈরী : [২] রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এলপিজি কনভার্সন নামক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়াই ব্যবসা করছিলো। বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের দল। এতে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।
[৩] একজন সেবাগ্রহীতার অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার ভ্যাট গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মহি উদ্দিনের নেতৃত্বে অভিযানটি চালানো হয়।
[৪] ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, অভিযানকালে একই ঠিকানায় ওই ব্যবসার দুটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে। দুটির মালিকও একই ব্যক্তি। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো জেন এয়ার টেকনোলোজি ও জেন এয়ার (বিডি) লি.। মোহাম্মদপুরের মেট্রো হাউজিং সোসাইটির ৪ নম্বর রোডের ১ নম্বর বাড়িতে প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যালয়। প্রতিষ্ঠান দুটি স্ট্যাগ, সিজিএস, রকল ও এটলাস কপকো নামের চারটি ব্রান্ডের গাড়ির এলপিজি কনভার্সন করে থাকে। প্রতি গাড়িতে তারা ক্রেতার কাছ থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা সেবামূল্য নেয়।
[৫] ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ জানায়, অভিযানকালে ওই ঠিকানায় প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন দেখতে পায়নি। সংশ্লিষ্ট মেহাম্মদপুর ভ্যাট সার্কেলে যাচাই করে দেখা যায়, ওই সার্কেলে বিগত মাসগুলোতে প্রতিষ্ঠান দুটির কোনো রিটার্ন জমা হয়নি। গোয়েন্দা দলের কাছে তারা এ সংক্রান্ত স্বীকারাক্তিও দিয়েছেন। অভিযানকালে কাগজপত্র যাচাইয়ে প্রাথমিকভাবে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
[৬] সংস্থাটি জানায়, একজন গ্রাহকের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা দল অনুসন্ধান করে এবং এর সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযোগে গ্রাহক বলেন, ‘আমি কনভার্সন চার্জ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দিলে প্রতিষ্ঠান আমাকে একটা কাঁচা ক্যাশ মেমো দেয়। আমি ভ্যাট চালান মূসক-৬ দশমিক ৩ চাইলে তারা নানান টালবাহানা করতে থাকে। পরে আমার আরও সন্দেহ হয় তারা ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত। আমি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা প্রত্যাশা করছি।
[৭] অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দার দল অনুসন্ধানে দেখতে পান, ওই প্রতিষ্ঠানের নামে চট্টগ্রামের ঠিকানায় নিবন্ধন রয়েছে। এদের মূসক নম্বর ০০২৫২৬৭২৫-০৫০৫ ও ০০১৯১৮৬২৭-০৫০৫। তবে রাজধানীর মোহম্মদপুরের ব্যবসা ওই নিবন্ধের অন্তর্ভূক্ত নয়। ভ্যাট আইন অনুযায়ী একই মালিকানাধীন ভিন্ন ঠিকানায় একই নিবন্ধের আওতায় ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন নিতে হবে এবং সবগুলো ব্যবসা অনলাইন ভ্যাট সিস্টেমে অন্তর্ভূক্ত করে মাসিক রিটার্ন জমা দিতে হবে। অনুসন্ধানে ভ্যাট গোয়েন্দা আরও দেখতে পায়, মোহাম্মদপুরের ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য গোপন রেখে তারা ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাদের হিসাব ভ্যাট কর্তৃপক্ষের কাছে ঘোষণা নেই। অভিযানে দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ভ্যাটের আওতা বহির্ভূত থেকে এবং অতি গোপনে তারা এই ব্যবসা পরিচালনা করছে।
[৮] গোয়েন্দার দল প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সহযোগিতায় সংরক্ষিত বাণিজ্যিক দলিলাদি এবং হিসাব শাখার কম্পিউটারে রক্ষিত সেবা বিক্রি সংক্রান্ত তথ্যাদি জব্দ করে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠাটির মোহাম্মদপুরের ঠিকানায় গত ৪ মাসে প্রায় ১ কোটি টাকার বিক্রয় তথ্য উদ্ধার করা গেছে। এই সেবার উপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য। জব্দ ভ্যাট সংক্রান্ত দলিলাদি আরও যাচাই-বাচাই করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইন অনুযায়ী মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।