শরিফুল হাসান: মিথ্যা সর্বাবস্থায় হারাম। পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে ‘মিথ্যা তো তারাই বানায়, যারা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের ওপর ঈমান রাখে না।’ (সুরা নাহাল, আয়াত: ১০৫)। অথচ দেখুন, করোজ তারা মিথ্যা বলছে। হিমালয় থেকে শুরু করে বিজ্ঞান, বিল গেটস থেকে শুরু করে নাসা সব কিছু নিয়েই দিব্যি তারা মিথ্যাচার করছে। তাও ভীষণ কনফিডেন্টলি। আমাদের রসুল (সা.) বারবার বলেছেন, তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাক। কারণ মিথ্যা উপনীত করে পাপাচারে। আর পাপাচার উপনীত করে জাহান্নামে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬০৭)। কিন্তু আপনি কোনদিন ওয়াজে সাধারণত শুনবেন না মিথ্যা বলা পাপ। রোজ যারা ফেসবুকে বিপ্লব করে তারাও এ নিয়ে কথা বলবে না। কারণ মিথ্যা না বললে তো আর তাদের ওয়াজ হয় না। আমি জানি এইটুকু পড়েই আপনাদের কেউ কেউ এখনই মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলা শুরু করবেন। আপনাদের জন্য তর্কের খাতিরে আমি যদি ধরি কাল সব ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে, তাতে কি দেশ বদলে যাবে? হানাহানি ঘুষ দুর্নীতি লুটপাট সব বন্ধ হয়ে যাবে? এতোটুকুও বদলাবে না। কিন্তু কাল থেকে যদি মিথ্যা বলা বন্ধ হয়ে যায় দেশ বদলে যাবে। সব অপরাধ বন্ধ হয়ে যাবে। হাদীসের কোনো জায়গায় চিৎকার করে এই ধরনের ওয়াজের কথা বলা আছে? আমি তো জানি, রসুল (সা.) উচ্চস্বরে কথা বলা পছন্দ করতেন না। অথচ দেখেন তারা ষাঁড়ের মতো চিৎকার করবে। নিজের একদিকে চিৎকার করবে আরেক দিকে লোকজনকে বলবে, চিৎকার করে বলেন ঠিক কিনা? কোনদিন কোনো ওয়াজে কাউকে বলতে শুনিনি নিচু স্বরে বিনয় হয়ে কথা বলতে। অথচ সেটা রসুলের নির্দেশ। না এসব নিয়েও কোনো কিছু বলা যাবে না। ইসলামে বলাৎকার হারাম অথচ দেখেন কি পরিমান বলাৎকার হচ্ছে। কিন্তু সেসব ওয়াজকারীদের মুখে বলাৎকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুনবেন না।
রসুল (সা.) নারীকে অসম্মান করে কোন কথা বলেছেন এমনটা শুনিনি। অথচ দেখবেন হরহামেশা তারা নারীকে অপমান করে কথা বলছে। তাদের জীবনযাপন দেখেন। আমাদের রসুল (সা.) কি সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। অথচ তারা দেখবেন ভোগ বিলাসে মত্ত। রসুল (সা.) অশ্লীলতা পরিহার করতে বলেছেন অথচ দেখবেন তাদের কথাবার্তা ভীষণ অশ্লীল। একইভাবে গীবত করা হারাম। অথচ দেখবেন রোজ তারা গীবত করছে। লিখতে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে। আফসোস এতোকিছুর পরেও আমরা কুরআন-হাদীস কিংবা আমাদের বোধবুদ্ধি দিয়ে কিছু বিবেচনা করি না। আমি বিশ্বাস করি, ইসলামের সবচেয়ে বড় জিহাদ নিজের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। নিজের ভেতরের পাপ আর লোভকে সংবরণের জিহাদ। মনে রাখবেন, আরেকজনের কল্লা কাটা নয়, আরেকজনকে গালি দেয়া নয়, আরেকজনকে নাস্তিক কাফের বলা নয় বরং নিজেকে ঠিক করাটা জরুরি। সে কারণেই বলা হয়েছে, ইসলামের সবচেয়ে বড় জিহাদ নিজের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। মনে রাখবেন সব ধর্মে মানুষকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মানুষ হয়ে মানুষকে গালি দেওয়া কষ্ট দেওয়া অপরাধ। মিথ্যা বলা অপরাধ। গীবত করা অপরাধ। বলাৎকার অপরাধ। কাজেই আসুন আমরা সবরকম অসততা, মিথ্যা, লোভ, পাপ, গীবত থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করি। সত্যিকারের মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে বোধ দিন। সবাইকে শুভরাত্রি। আসসালামু আলাইকুম। ফেসবুক থেকে