শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৮:৩৫ সকাল
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৮:৩৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: আনন্দ-বেদনায় মিশ্রিত বিজয়

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: আজ মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের সশস্ত্র ও রক্তাত্ত্ব মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়, পরাজয় বরণ করে পাকিস্তানের হাজার হাজার সেনা সদস্য এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের সরকারও। বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে আবির্ভূত হয় একটি নতুন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে। পৃর্থিবীর অন্যান্য রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিতে থাকে আমাদের লাল সবুজের পতাকাবাহী দেশটিকে। এই বিজয় আমাদের অর্জিত হয়েছে ত্রিশ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে, দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জত লুটে নিয়েছে পাকিস্তানের পিচাশরা, ধ্বংস করেছে আমাদের বাড়িঘর শহর রাস্তাঘাটসহ এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার সম্পদসমূহ। নয় মাস সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিলো পাকিস্তানি ঘাতকদের বুলেটের মুখে। আমাদের এককোটি মানুষ দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নিয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে আত্মনিয়োগ করে। আবার দেশের অভ্যন্তরে লক্ষ্য লক্ষ্য তরুণ যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ অস্ত্র কাদে তুলে নিয়েছিলো পাকিস্তানি হায়েনাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে। যারা প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করতে পারেনি তারা মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য, থাকা ও পথ দেখানের কাজে সহায়তা করেছিলো। এককথায় দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের কোনো না কোনোভাবে যুক্ত রেখেছিলো। সেই নয় মাস ছিলো প্রতিটি পরিবার এবং সাধারণ মানুষের জীবনের ভয়াবহ ও দুঃখ-যন্ত্রণার অভিজ্ঞতায় ভরপুর।
অনেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন, ঘরবাড়ি হারা হয়েছেন। আবার অনেক নারী হারিয়েছেন সম্ভ্রম। এমনিই এক কঠিন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে অবশেষে ডিসেম্বর মাসে এসে মানুষ বুঝতে পেরেছিলো আধার রাত পার হওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে, সুর্যের আলো পৃথিবীতে দেখা যেতে শুরু করেছে। অর্থাৎ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পিছু হটতে শুরু করেছে। কেননা রণাঙ্গনে তখন মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্রবাহিনীর আক্রমণে পাকিস্তানের নরঘাতকরা পর্যুদস্ত হতে থাকে, তারা ব্যাঙ্কার ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে। শহর গুলো একে একে মুক্ত হতে থাকে। পাকিস্তানিরা তখন আশ্রয় নেওয়ার জন্য ঢাকা অভিমুখে পালাতে থাকে। এরই মধ্যে ঢাকা ব্যাতিত সর্বত্র মুক্তাঞ্চলে মানুষ বিজয়ের আস্বাদ গ্রহণ করতে শুরু করেছে। আর প্রতিদিন খবর আসতে থাকে নতুন নতুন মুক্তাঞ্চলের এবং হানাদার পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রস্তুতির। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর বিকেল বেলায় রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের ৯৪,০০০ সেনা সদস্য মাথানত করে আত্মসমর্পণের চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারা কদিন আগে আমাদের দেশে যে হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ এবং মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করেছিলো তখন তাদের চেহারায় ছিলো পশুত্বের ভাব, সেই পাকিস্তানি ১৬ ডিসেম্বর পরাজয় বরণ করে নিলো। তাদের এই পরাজয়ের খবর মুহূর্তের মধ্যে সারা দেশ এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ই ডিসেম্বর সারাদেশ বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। ঘর থেকে নারী পুরুষ, শিশু বুড়ো সকলেই জয় বাংলা ধ্বনিতে বের হয়ে আসে। দলে দলে মানুষ স্লোগান দিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দৌড়াতে থাকে। মানুষের বাধ ভাঙ্গা উচ্ছাস ও আনন্দের ছবি ছিলো দেখার মতো। প্রত্যেকেই সেই আনন্দ মিছিলে সমবেত হয়েছিলো।

শুধু ঢাকা শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামে গঞ্জেও একই দৃশ্য। আনন্দের এই দৃশ্য যখন সৃষ্টি হয় তখন প্রায় সবাই ভুলে গিয়েছিলো নয় মাসের দুঃখ-কষ্ট, স্বজন হারানোর বেদনা এমনকি ঘরবাড়ি ভস্মীভূত হওয়ার কষ্ট। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কোনো না কোনো কষ্ট ও বেদনা থাকা সত্যেও ১৬ ডিসেম্বর বিকেল বেলায় সাড়ে সাত কোটি মানুষের এমন বাধ ভাঙ্গা আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের মধ্যে ছিলো স্বাধীনতা লাভের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন। মানুষ এমন একটি প্রহরের অপেক্ষায় ছিলো। সেটি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকলেই দেখেছে। মানুষ স্বাধীনতা লাভের জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করে অবশেষে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার মধ্যে বিজয়ের আস্বাধন লাভ করে ছিলো। স্বাধীনতা এমনই হয়। সুতরাং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে বিজয় আমাদরে অর্জিত হয়েছিলো সেটি ছিলো জনযুদ্ধের রক্তাত্ত্ব নয় মাসের ফসল। সুতরাং এমন বিজয় ও স্বাধীনতাকে রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের শুধু দায়িত্বই নয় উপলব্ধিরও বিষয়। যদি ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় অর্জিত না হতো তাহলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সাড়ে সাত কোটি মানুষের জীবন নাশ করতে এতোটুকু দ্বিধা করতো না।

নয় মাস যুদ্ধকালে পাকিস্তানিদের মধ্যে সেই ঘৃণ্য আচরণই পরিলক্ষিত হয়েছিলো। তারা আমাদের জাতিস্বত্তাকে সমূলে উৎপাটিত করতে চেয়েচিলো। আমরা তাদেরকেই বাংলাদেশ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর সম্পূর্ণরুপে উৎখাত করেছি, পাকিস্তান রাষ্ট্র চিরকালের জন্য এই ভূখণ্ড থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হলো। আমরা নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে গর্ব করার অধিকার লাভ করেছি। অতএব প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বর পালনকালে আমাদেরকে ১৯৭১ এর নয় মাসের বাস্তবতা এবং সাড়ে সাত কোটি মানুষের ত্যাগ আকাক্সক্ষা এবং উপলব্ধিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সেই উপলব্ধির সঞ্চালন ঘটাতে হবে। তবেই একাত্তরের ইতিহাস আমাদের অবিকৃতভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মের মধ্যে প্রবাহিত হবে। বাংলাদেশ হবে আত্মমর্যাদার এক শৌর্যবীর্যের জাতিগোষ্ঠীর রাষ্ট্র। লেখক : শিক্ষাবিদ। অনুলিখন : আমিরুল ইসলাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়