শিরোনাম
◈ অ‌ক্টোব‌রে বাংলাদেশ সফরে ৩‌টি ক‌রে ওয়ান‌ডে ও টি-‌টো‌য়ে‌ন্টি সি‌রিজ খেল‌বে ও‌য়েস্ট ই‌ন্ডিজ ◈ ভুয়া ফুটবল দল সাজিয়ে জাপান-যাত্রা, ধরা পড়ে ফেরত পাঠিয়েছে ২২ জনকে! ◈ উচ্চশিক্ষার আগ্রহী শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডি করার সুযোগ, সাথে আর্থিক সহায়তাও মিলবে ◈ সাতরাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ ◈ আঞ্চলিক হুমকি নিয়ে ভারতের সতর্কবার্তা: বাংলাদেশে মৌলবাদ, চীন সীমান্ত অচলাবস্থা ও পাকিস্তানের ভূমিকা ◈ ইরানে অনুপ্রবেশ করে নারী মোসাদের দুর্ধর্ষ অভিযান (ভিডিও) ◈ চ‌্যা‌ম্পিয়ন্স লিগ, বরুশিয়ার নি‌শ্চিত জয় রুখে দিলো জুভেন্টাস ◈ দূর্গা পুজাতে ভারতে গেল ৮ ট্রাক ইলিশ ◈ এমবাপ্পের দুই পেনাল্টি গোলে চ‌্যা‌ম্পিয়ন্স লি‌গে রিয়াল মাদ্রিদের শুভ সূচনা ◈ যে কারণে শিবির ক্যাম্পাসে জিতছে, সেই কারণেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে জিততে পারে: দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ

প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৭:৫৭ সকাল
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৭:৫৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডা. জাকারিয়া চৌধুরী: হরিণকে মাংসাশী হতে হবে

ডা. জাকারিয়া চৌধুরী: একপাল হরিণেরর উপর আকষ্মিক হামলা চালিয়ে একটা মা হরিণকে শিকার করল একটা মা চিতা। সে তার শিকারকে টেনে নিয়ে নিজের চারটি শাবকের অন্তত তিন দিনের জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন, ফ্যাট,এনার্জি আর মিনারেলসের যোগান দিল। মা চিতাটি তার সন্তানদের পেট ভরে খাওয়া দেখল, তারপর নিজেও খেল। এরপরেও যা অবশিষ্ট ছিল তা দুটি হায়েনার মধ্যে অন্তত এক ঘন্টার ‘ক্ষমতা দখলের যুদ্ধ’ ছায়াছবি লাইভ দেখার জন্য যথেষ্টই ছিল।

 

পাঠক, বলুন দেখি এখানে প্রাণী হত্যা হল কয়টি?  একটি? দুটি ? নাকি অসংখ্য ?  উত্তর হচ্ছে এই ঘটনায় প্রাণী হত্যা হয়েছে কয়েকটি। আমরা জানিনা, এখানে হরিনীর বাচ্চা ছিল কটি। যেমন আমরা জানি না হেফাজতের ঠিক কত জন এতিম জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় ডাম্পিং হয়েছিল অথবা হয়েছিল কি না ! যা বলছি, পথ হারানো ক্লান্ত শ্রান্ত ক্ষুধার্ত হরিণ শাবকগুলো এক সময় উপলব্ধি করল, তাদের মা ফিরবে না। সম্ভবত কখনোই আর ফিরবে না। আর এ ভাবনাটা এসেই যেন কয়েক মিলি সেকেন্ডে তাদের ছোট্র হৃদয়টিকে জ্বলন্ত লাভা দিয়ে জ্বালিয়ে দিল। নিজের অজান্তে এক ফোঁটা পানি চোখের কোনে জমে উঠল, সে এক ফোঁটা পানিটাই সেই বিকেলে ডুবন্ত সুর্যের আলোক রশ্মি একবার মাত্র প্রিজমের মত প্রতিফলিত হল। আলোর এ ঝিলিক দূর গাছের মগ ডালে বাচ্চা নিয়ে বসে থাকা একটা মা ইগলের চোখে প্রতিফলিত হল। ঈগলটি আনন্দে উদ্ভাসিত হল। সে তার ছানাদের জন্যে রাতের ফিষ্ট পেয়ে গেছে।

 

একটা ঘটনায় মা চিতা ও তার সন্তানেরা এই বনে সরাসরি বেনিফিশিয়ারি খাদক রুপে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করেছে। সেই একই ঘটনার কোল্যাটারাল ড্যামেজ হিসেবের খাতায় নাম উঠল হরিণ ও তার শাবকদের। আবার সেই সব শাবক থেকে প্রাপ্ত এনার্জির সবটা পেল  দুটি হায়েনা এবং ইগল পরিবার। সাধারণ চোখে একটা হরিণ শিকারের রোমাঞ্চকর ভিডিও ধারণের বাইরে ই রয়ে গেল। হিসেবের টালিতে নাম না উঠা হরিণী ও তার ছোট্ট অবুঝ শাবকেরা প্রকাশ্য শিকারে পরিণত হওয়া সত্ত্বেও, নিজের প্রাণ এবং প্রোটিন সরবরাহ করেও তারা শহীদ কিংবা নিরপরাধ প্রাণীর স্বাভাবিক মৃত্যুর টালি খাতা, কিংবা অন্যকোন সারিতেও তালিকাভুক্ত হলো না।

এবার চলুন অন্য গল্পে যাই। ইরাকে ৩৫ - ৪০ জন লোকের ছোট্ট একটা দল রাস্তা ধরে হেঁটে কাজের সন্ধানে কোথাও যাচ্ছিল। দলের মধ্যখানের একজন লোকের হাতে অস্পষ্ট লম্বা কিছু একটা দেখে একজন মার্কিন সেনা বলল ,

May b he is carrying an RPG *

 

অন্যজন বলল-

 

Its an RPG. We should fire.

 

- Fire

 

- Fired.

 

সকালে কাজের সন্ধানে বের হওয়া নিতান্ত গরীব মানুষের দলটা মুহুর্তেই বিলীন হয়ে গেল এ্যাপাচি হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া গোলায়। চলমান মানুষগুলো যখন কাদার মত চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল তখন মার্কিন সৈন্যের সেই দলটা আবার ভাল করে সেই লম্বামত জিনিসটাকে ভালভাবে জুম করে দেখল। সেটা ছিল এক জোড়া ক্র্যাচ। অভাগা দরিদ্র লোকটি না জানি কত কষ্ট করে এই যুদ্ধের বাজারে নিজের সন্তান, স্ত্রী কিংবা পিতা বা মাতার জন্য সেটি নিয়ে যাচ্ছিল!!

আহ মায়া !!

প্রকৃতির এই নিষ্ঠুর বাজারে চুড়ান্ত একটি রসিকতার নাম মমত্ববোধ বা মায়া। একে না যায় ছাড়া না থাকে অধরা। সৈন্য দলটির কথোপকথন তারপরেও চলছিল। ভিডিওটি আমি নিজে দেখেছি প্রিয় পাঠক, আমার নিজের চোখে দেখা। সেনারা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা তখনও চালিয়ে যাচ্ছে-

 

 

- It's a damage.

 

- Yeah! collateral damage..... ha ha ha hah

 

- ha ha ha ha.....

 

মার্কিন স্পেস স্যাটেলাইট গুলো থেকে মাত্র ছয় ইঞ্চি দৈর্ঘের এক টুকরা পেন্সিলের স্পষ্ট ইমেজ নেয়া যায়। ছয় ইঞ্চি মানে কতটুকু যারা ভাবছেন তাদের জন্য বলি-আপনার হাতের যে মোবাইল দিয়ে এই লেখাটি পড়ছেন তার সমান। হত্যার এমন শত শত হাজার হাজার ঘটনার লাইভ ভিডিও থাকা সত্ত্বেও সে বিষয়ে বিশ্ব ব্যবস্থা আছে স্পিকটি নট বা বোবার ভূমিকায়। গোপনে চলছে অশ্লীল আনন্দ। সভ্য দেশের সেনারা বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলে তারা কে কতজন মানুষকে হত্যা করেছে।  এক্ষেত্রে সবচে অভিনব কাজটি করে দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।  মানুষ হত্যা প্র্যাকটিস এবং সেনাদলের মনোবল বাড়াতে তারা আফগানিস্তানের অন্তত ৩৯ জন নিরীহ নাগরিক, যাদের মধ্য নারী শিশুরাও ছিল, তাদেরকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে আসে। তারপর ছুরি দিয়ে স্ট্যাব করে খুন করে অথবা হাত ঝালিয়ে নেয়।  একটা দেশ ( ধরুন ইরাক বা আফগানিস্তান, লিবিয়া কিংবা সিরিয়া, মিশর অথবা ইয়েমেন, নাইজেরিয়া বা চেচনিয়া, সুদান থেকে কাশ্মীর, পুর্ব তিমুর, চীনের উইঘুর,মরক্কো কিংবা আলজেরিয়া, উত্তর প্রদেশ কিংবা ভারতের আহমেদাবাদ, কলিকাতা কিংবা দক্ষিণ ভারত ) যা-ই মনে করুন না কেন, ধ্বংস হয়ে গেলে মোড়ল পৃথিবীর কী লাভ হয় তার সামান্য একটা মাত্র নমুনা কল্পনায় দেখুন। কোন দেশ যদি ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশ থেকে লুন্ঠিত সম্পদের বিলিয়ন বা একশ কোটির এক ভাগও পায় তাও হয় হাজার হাজার কোটি টাকা। দিনকয় আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বভাবসিদ্ধভাবে বলে ফেলেছেন- আমরা যুদ্ধ করতে চাইনা।  যুদ্ধ সরঞ্জাম বিক্রি করে এমন কোম্পানি গুলো আমাদেরকে যুদ্ধে বাধ্য করে। একবার ভেবে দেখুন তো, অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে মার্কিনীরা বাংলাদেশের স্ট্যাটাসে চলতে পারবে কিনা ! খুব সম্ভবত পারবে না। তাদেরকে নিজ দেশে আরেকটা গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।  আমেরিকা এমন ভুল করবে না। তারা ওয়ার ট্রেড চালু রাখার জন্যে টুইন টাওয়ার ভেংগেছে। মুসলিম দেশগুলোতে অস্ত্র বিক্রি বাড়াতে মুসলিম হেটার্স তৈরী করেছে।  মুসলিম দেশ গুলোতে আগ্রাসন চালাতে এই হেটার্স’রা সামাজিক সমর্থন জুগিয়েছে।

 

প্রিয় পাঠক, আপনাদেরকে আরেকটা কথা মনে করিয়ে দিয়ে-ই আজকের পর্ব শেষ করব। যারা দিন দুনিয়ার খোঁজ খবর রাখেন, আশা করি তারা এডওয়ার্ড জোসেফ স্নোডেনের নাম’টা নিশ্চয়ই শুনেছেন।  মার্কিন সরকারের কমপক্ষে দু’টি বিভাগ যেমন সি আই এ এবং এন এস এ দুনিয়ার যে কারো ফোনে আড়ি পাতে।  যার তাঁর কল রেকর্ডস, প্রাইভেসি, মেইলস যা ইচ্ছা তাই যখন ইচ্ছা তখন হাতিয়ে নেয়।  এ তথ্যটা প্রমান সহ জনস্মমুখে প্রচার করে দেন স্নোডেন। এর ফলে আমেরিকা কয়েক ঘন্টা নিন্দিত হলো বটে, কিন্তু স্নোডেনের কি হলো।  সে কোনোমতে রাশিয়ায় পাড়ি জমায় প্রাণে বাঁচতে।  আশা করা যায় সি আই এ, রাশান গোয়েন্দা, মোসাদ কেউ না কেউ তাঁকে তাদের প্রয়োজন হলে হত্যা করবে।  আর যদি বেচে থাকে সে, তাহলে আজীবন চার দেয়ালের বেস্টনিতে একাকী বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে হবে।  সত্য কথা বলে হিরো হওয়া স্নোডেন এখন একটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যুক্ত পুতুলের চেয়ে বেশি কিছু মানে বহন করে না।  এ প্রসংগে একটা কথা না বললেই নয়।  স্নোডেন যখন ফাউন্ডেশন ট্রেনিং-এ ছিলেন, একদিন তাঁর কোর্স ডিরেক্টর নিউইয়র্ক টাইমস এর একটা রিপোর্ট দেখালেন ক্লাসে।  এক ইঞ্চি কলামে সেখানে লেখা ছিল- Bush Lets US Spy On Callers Without court.  এর মানে কি দাঁড়ালো ? প্রেসিডেন্ট বুশ তাঁর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে যে কারো বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরির অনুমোদন দিয়েছেন।  এ কথা শুনে রিও নামের এক স্টুডেন্ট বলল- এ তো সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর সরাসরি লংঘন……

এ্যাবসুলিউটলি রাইট ইউ আর মি রিও – উত্তরে বললেন কোর্স ডিরেক্টর। তিনি আরও বলেন ‘সংবিধানের এই লংঘন কিন্তু যে কেউ করছেন না। এটি করছেন খোদ দেশের প্রেসিডেন্ট। ইউ ইউ হ্যাভ বলস গো এন্ড আস্ক……… তিনি বলে-ই যাচ্ছেন। ‘ধরো, এইসব গোপন কর্মকান্ড কেউ মিডিয়ায় প্রকাশ করে দিল। তখন কি হবে ? তিনি বোর্ডে খসখস করে লিখলেন- FISA-Foreigh Intellegence Service Act তারপর সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লেন তারা ফাইজা নামটি এর আগে শুনেছেন কি না ! যদি না শুনে থাকো তবে বলি, আমাদের কাজে যারা ব্যাঘাত ঘটাবে তারা আমাদেরই একজন হবে। এখানে ক্লাসিফায়েড লোকজন কাজ করবে স্পেসিফিক বিষয় নিয়ে।  যে বা যারা এ নিয়ে মুখ খুলবে তার কথা মিডিয়াতে যাবার আগে-ই যেন ব্যবস্থা নেয়া যায় তার জন্যে কাজ করবে ফাইজা। এবার চোখ খুলুন।  দেখুন তো জুলিয়ান এসাঞ্জ এবং এড স্নোডেন কোথায় কি অবস্থায় আছেন ! আমেরিকার বাসিন্দা হয়েও তারা কি স্টেটের একটা লোমও ছিড়তে পেরেছেন।  লোম ছেড়ার গল্প শুনবেন ? যেতে হবে ৭৩-৭৪ সালের দিকে।  যাবেন  ?

( আগামীকাল সমাপ্য)

লেখক: ডেন্টাল সার্জন, কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়