শিরোনাম
◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয়

প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৬:০৪ সকাল
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৬:০৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডা. নূরুল হুদা খান : লাখ টাকার চাকুরী করার চেয়ে একজন মুচির হালাল পথে শ টাকা আয় অনেক বেশি উত্তম

ডা. নূরুল হুদা খান : “নোয়াখালী অঞ্চলে এক ক্লিনিকে কিছুদিন চাকুরী করেছিলাম। ডাক্তার সমাজে খন্ডকালীন এসব চাকুরীকে খ্যাপ বলা হয়।
সেই খ্যাপে চুক্তি ছিল দৈনিক সাড়ে তিন হাজার টাকা। মন্দ ছিল না। কিন্তু দুদিন পরেই ক্লিনিকের মালিক এর সংগে অতিরিক্ত হিসেবে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার অনুরোধ করল। কিন্তু আমার তখন আল্ট্রা করা জানা না থাকায় না বলে দিলাম।
মালিক বলল, তেমন কিছু পারতে হবে না। রুগীর পেটে মেশিন ঘুরিয়ে গ্যাস, সিস্টাইটিস ইত্যাদি লিখে দিবেন।
পরদিনই সেই চাকুরী ছেড়ে চলে আসলাম।
কুমিল্লায় এসে আরেক জায়গায় যোগ দিলাম। এখানেও মালিকের আবদার, টেস্ট বেশি করে দিতে হবে। এখানেও ছেড়ে দিলাম।
এরপর অল্প বেতনে একটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী শুরু করলাম। সেখানে এসব অন্যায় চাপ ছিল না। বেতন হয়তো ডাক্তার হিসেবে তেমন বেশি ছিল না, কিন্তু আমি সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলাম।
সরকারী চাকুরীতে যোগদানের পর বিভিন্ন ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার কমিশন পার্সেন্টেজের লোভ দেখানো শুরু করল।
কিন্তু তাদের প্রলোভনে না পরে সাফ জানিয়ে দিলাম, আমার যে পার্সেন্টেজ সেটা রুগিকে ডিসকাউন্ট হিসেবে দিতে হবে। এরপর থেকে আমি প্রেস্ক্রিপশনে "প্লিজ ডিসকাউন্ট" লিখে দেই, তারাও আমার রুগীদের ডিসকাউন্ট দেয়।
আমাদের সার্জারির কনসালটেন্ট স্যার, উনিও এই কাজ করেন। তারও রুগী ডিসকাউন্ট পায়। এরকম অনেককেই এখন দেখছি, তারা রুগীদের ডিসকাউন্ট লিখে দিচ্ছেন। এটা ভাল প্র্যাকটিস।
এরপর হাসপাতালে আগত রুগীদের বাহিরে টেস্ট না করিয়ে স্বল্প খরচে সরকারি রেটে হাসপাতালেই সকল টেস্ট করানোর জন্য প্রচার শুরু করলাম।
এভাবে রুগীদের কিছুটা অর্থনৈতিক সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করার পরেও দেখি ভিন্নভাবে তারা শোষিত হচ্ছেই।
কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করলাম, রুগীরা হাসপাতালে আসছে ঠিকই, কিন্তু সাথে তারা বাহির থেকে আগেই করা টেস্ট রিপোর্টও নিয়ে আসছে। এসে রিপোর্ট দেখিয়ে বলছে, ওষুধ লিখে দেন।
গ্রামের লোকেরা পল্লী চিকিৎসক ও ওষুধের দোকানদের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে । তারা আমাদের কথা শুনবে না, কিন্তু ঐসব পল্লী চিকিৎসকদের কথা সবই শুনবে।
এসব পল্লী চিকিৎসকরা রুগী গেলেই পাঁচশ থেকে হাজার টাকার টেস্ট করাতে দেয় সবার আগে। এরপর দুটো ওষুধ লিখে দিয়ে সেই রুগীকে রিপোর্টসহ হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
এতে তাদের দুটো ওষুধ বিক্রয় হল, এর পাশাপাশি টেস্টের রেফারেল ফি চল্লিশ ভাগ কমিশনও পেল। এক হাজার টাকার টেস্ট করাতে পারলেই তো চারশ টাকা আয়!
এ দেশের বেশিরভাগ রুগীরা এভাবেই ঠকছে। এটা রোধ করা খুব বেশি দরকার।
এ ক্ষেত্রে করণীয় হবে-
১) সকল টেস্টের মুল্য সারাদেশে নির্ধারিত করে দেওয়া, তাহলে এই সমস্যা হবে না।
২) টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করে দিলে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার তখন আবার কম মুল্যের রিএজেন্ট ব্যবহার করে তা পোষানোর চেষ্টা করবে। এই জন্য মনিটরিং দরকার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যাও কমানো দরকার।
৩) আলাদা আইন প্রণয়ন করে টেস্টে কমিশন বানিজ্য সম্পুর্নভাবে নিষিদ্ধ করা দরকার।
৪) রেজিস্টার্ড ডাক্তার ছাড়া আর কেউ যাতে প্রেসক্রিপশন না লিখতে পারে, সেটারও যথাযথ বাস্তবায়ন করা দরকার।
দেশের বেশিরভাগ লোক এই কারনেই ঠকছে বেশি। তাছাড়া পল্লী চিকিৎসক, ওষুধের দোকানদারদের দেওয়া ভুল ওষুধ খেয়ে যাচ্ছে , আর ধীরে ধীরে মরছে। এটা যে এক প্রকার খুন বা হত্যার অপরাধ- তা আমরা বুঝি না।
তাছাড়া রুগীর টেস্টের টাকা কমিশন হিসেবে নেওয়া কোন মতেই গ্রহনোগ্য নয়। এটা একটা চুরি, এটা একটা ডাকাতি।
আমি ব্যক্তিগতভাবে ছোটবেলা থেকে কিছু নীতি আমার ভেতর ঢুকে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এর একটি হল- জীবনে কখনো হারাম, সুদ ও অসৎ পথে আয় করব না।
আমি নিজের মনটাকে এভাবেই সেটআপ করে নিয়েছি। ফলে কম প্রাপ্তিতেও হতাশা কখনো গ্রাস করতে পারে না।
আলেমদেরও মত হল, কোন চাকুরী বা ব্যবসা করলে যদি সুদ, ঘুষ বা দুর্নীতির সাথে নিজেকে যুক্ত করার বাধ্যবাধকতা থাকে, তাহলে সেই চাকুরী বা ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া তার জন্য ফরজ।
ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্তই হল, হালাল পথে আয়। আর আল্লাহ জ্বীন ও মানুষকে শুধু তার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।
দুনিয়াতে হাজারো উপায় আছে হালাল পথে আয় করার। হারাম পথে লাখ টাকার চাকুরী করার চেয়ে একজন মুচির হালাল পথে শ টাকা আয় অনেক বেশি উত্তম।
আর রিযিক হারানোর ভয়? সেটার নিশ্চয়তা তো আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন-
"(আল্লাহ) তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন"।
(সুরা আত ত্বালা: ৩)
DrNurul Huda Khan
UH&FPO
Iswarganj Mymensingh

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়