স্পোর্টস ডেস্ক: [২] একই বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট জয়ী, বিশ্বকাপে ইতালির হয়ে সেরা গোলদাতার একজন, বিশ্বকাপ ও ব্যালন ডি’ অর জয়ী এমন অনেক সম্মান অর্জন করেন পাওলো রসি। বুধবার ইতালিয়ার এই কিংবদন্তি ৬৪ বছর বয়সে মারা গেছেন। বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সময় ১৯৮২ সাল। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফিরে দলকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি।
[৩] জুভেন্টাসের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করার কথা থাকলেও ইনজুরির কারণে দিনগুলো সুখকর ছিল না। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ওল্ড লেডিদের জার্সিতে মাত্র তিনবার মাঠে নামতে পেরেছিলেন। তাও আবার কোপা ইতালিয়ার ম্যাচে। ১৯৭৫/৭৬ মৌসুমে লোনে কোমোর হয়ে খেলতে যান। ওইবারই প্রথমবার অভিষেক হয় সিরি আ’তে তার। রাইট উইঙ্গার হিসেবে মাত্র ৬ ম্যাচ খেলে কোনও গোল পাননি।
[৪] ক্যারিয়ারের নতুন মোড় পান ভিসেনজা ক্যালসিওতে লোনে যোগ দিয়ে। নিয়মিত স্ট্রাইকার ইনজুরিতে থাকায় কোচ ফাবরি রসিকে নিয়ে আসেন আক্রমণভাগের কেন্দ্রে। সিরি’বি তে থাকা দলটিকে চ্যাম্পিয়ন করার পাশাপাশি সিরি আ’তে তুলে আনেন। ২১ গোল তুলে গোল্ডেন বুটও আদায় করেন।
[৫] নতুন মৌসুমে ভিসেনজার জার্সিতে তুলে নেন ২৪ গোল। টানা দুই মৌসুমে সিরি’ বি ও সিরি’ আতে সেরা গোলদাতার একমাত্র রেকর্ডটাও যে একমাত্র তারই দখলে। দ্বিতীয় স্থানে থেকে লিগ শেষ করে দল। এমন পারফরমেন্সের কারণেই ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পেয়ে যান রসি। ওই আসরে চতুর্থ স্থান অর্জন করে ইতালি। তিন গোল ও চার অ্যাসিস্ট করে সেরা একাদশেও সুযোগ হয় তার।
[৬] আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ শেষে বাড়ি ফিরে হয়ে যায় অবাক করা কাণ্ড। বিশ্বসেরা স্ট্রাইকারকে এবার জুভেন্টাস লোন থেকে আবারও নিজেদের করে নিতে আগ্রহী হয়ে উঠে। অন্যদিকে ভিসেনজা দলের সেরা তারকাকে ছাড়তে নারাজ। এক পর্যায়ে ভিসেনজা ২.৬১২ বিলিয়ন লিরায় তাকে রেখে দেয়। যা ছিল তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড।
[৭] ১৯৭৮/৭৯ মৌসুমে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলারকে ইনজুরিতে পড়তে হয়। দল সুবিধা না করতে পেরে সিরি বি’তে নেমে আসে। দলের অবস্থা খারাপ হলেও ১৫ গোল তুলে নেন তিনি। পরের মৌসুমে লোনে নতুন গন্তব্যে যোগ দেন। দলের নাম পেরুগিয়া। এই মৌসুমে ১৩ গোল গোল করে নতুন দলকে উয়েফা কাপের শেষ ষোলতে তুলেন। এই দলের হয়ে খেলার সময় ইতালিয়ান ফুটবলের কলঙ্ক হিসেবে খ্যাত ‘টোটোরেরো’ কেলেঙ্কোরিতে জড়ান তিনি। যার কারণে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধও করা হয় তাকে। রসিসহ ১৯ ফুটবলার ও দুই জন কোচের নাম আসে এই কেলেঙ্কোরিতে। ১৯৮০ সালের ঘরের মাঠে বসেছিল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ যেখানে ইতালির জার্সিতে মাঠে নামা হয়নি তার। চোখের সামনে শিরোপা তুলে নেয় জার্মানি। চতুর্থ হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ হয় স্বাগতিকদের।
[৮] নিষিদ্ধ হওয়ার পর বার বার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন রসি। তার দাবি ছিল চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে তাকে। এক পর্যায়ে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনা হয় তার। জুভেন্টানসও তাকে লুফে নেয়। সুযোগ মেলে ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ দলে। যদিও ইতালিয়ান সাংবাদিক ও সমর্থকরা ব্যাপক সমালোচনা করেছিল এই সিদ্ধান্তের।
[৯] কোচ এনজো বিয়ারজট ভরসা রেখেছিলেন রসির ওপর। প্রথম রাউন্ডে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের প্রতিটিতে ড্র করে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে ইতালি। সেখানে অপেক্ষা করছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও বিশ্বকাপের ফেবারিট ব্রাজিল। মারিও কেমপেস-ডিয়েগো ম্যারাডোনাদের ২-১ এ হারিয়ে দেয় ইতালিয়ানরা। পরের ম্যাচে সক্রেটিস, জিকো, ফ্যালকাওদের নিয়ে গড়া ব্রাজিলের ইতিহাসের শক্তিশালী দলটিকেও হারাতে সক্ষম হয় ইতালিয়ান দলটি। ৩-২ গোলের ওই জয়ে হ্যাটট্রিক তুলেছিলেন রসি।
[১০] সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল পোল্যান্ড। দল জিতেছিল ২-০ গোলের। দুটি গোল এসেছিল রসির পা থেকেই। ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ৩-১ গোলের বড় জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইতালি। ৫৭ মিনিটে প্রথম গোল তুলেছিলেন রসি নিজেই।
[১১] দুর্দান্ত এক টুর্নামেন্টে শেষে ব্রাজিলের গিরিঞ্চা ও আর্জেন্টিনার কেম্পেসের পর তিনিই একমাত্র ফুটবলার যিনি এক বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট জয় করেছেন। ইতালির হয়ে সর্বোচ্চ ৯ গোল করার রেকর্ড রয়েছে তার। এই রেকর্ডে রবার্তো ব্যাজিও ও ক্রিশ্চিয়ান ভিয়েরিও ভাগ বসিয়েছেন।
[১২] জাতীয় দলের জার্সিতে ৪৮ ম্যাচ গোল করেছিলেন ২০টি। ক্লাব ক্যারিয়ারে প্রায় আড়াই শ’ ম্যাচ খেলে গোল করেছিলেন শতাধিক। দলীয় ও ব্যক্তিগত অনেক ট্রফি জয়ী এই মহাতারকা ফিফা ঘোষিত ১০০ কিংবদন্তির তালিকায় স্থান করেছেন আগেই। আশির দশকের শেষ দিকে বুট জোড়া তুলে রাখার পর ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন নানা জায়গায়। - আরটিভি নিউজ