আফরোজা সরকার: [২] রংপুর নগরীর আদর্শপাড়ায় আঁখি মনি (১২) নামে এক শিশু গৃহকর্মীকে টাকা চুরির অভিযোগে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে গৃহকর্তা নওগাঁয় কর্মরত যুগ্ম জেলা দায়রা জজ রেজাউল বারী রিপন (৪৫), তার স্ত্রী দন্ত চিকিৎসক কার্নিজ আফি কান্তা (৩৫), শাশুড়ি খালেদা বেগম (৫৫) এবং শ্যালিকা শাপলা বেগমকে (৪০) আসামি করা হয়েছে।
[৩] রোববার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) শহিদুল্লাহ কাওছার।
[৪] তিনি জানান, শনিবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে নির্যাতিতা শিশুর মা শেরিনা বেগম বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। বর্তমানে নির্যাতনের শিকার শিশু আঁখি মনিকে কোতোয়ালি থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রয়েছে।
[৫] এদিকে জানা গেছে, গৃহকর্মী শিশুটি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর গ্রামের তালিকাভুক্ত এক ভিক্ষুকের মেয়ে। গত ২১ নভেম্বর রাত বারোটার দিকে ১২৫ টাকা চুরি সন্দেহে আসামিরা আঁখি মনিকে মারধরের পর তার গোপনাঙ্গে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেন। এরপর গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়ে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী।
[৬] মামলা সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের বগুলাগাড়ির ডালিম চন্দ্র রায় নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে মাসিক এক হাজার টাকা বেতনে আঁখি মনিকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজের জন্য রংপুর শহরের আদর্শপাড়া এলাকায় দন্ত চিকিৎসক কান্তা বেগম এবং রেজাউল বারী দম্পতির বাসায় রাখা হয়। সেখানে প্রায় দুই বছর ধরে আঁখি মনি কাজ করত। গত ২১ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে ১২৫ টাকা চুরির অভিযোগ তুলে আঁখি মনিকে মারধরের পর গোপনাঙ্গে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেন বাড়ির লোকজন। এঘটনার খবর পেয়ে ২৮ নভেম্বর বিকেলে ডালিম চন্দ্র রায়সহ আঁখি মনির মা শেরিনা বেগম রংপুরে আসেন। সেখানে শেরিনাকে বাড়ির মালিক জানান, তার মেয়ে আঁখি মনি টাকা চুরি করেছে। তাই তাকে আর বাসায় রাখবে না। এ অবস্থায় দন্ত চিকিৎসক কার্নিজ আফি কান্তা ও তার স্বামী সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মেয়েকে মায়ের হাতে তুলে দেন।
[৭] গ্রামে ফিরে মেয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে গ্রামবাসীকে বিস্তারিত জানান হতদরিদ্র শেরিনা। পরে স্থানীয় বাসিন্দা নুর উদ্দিন জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানালেপুলিশ এসে ৩০ নভেম্বর শিশুটিকে উদ্ধার করে।প্রথমে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। পরে সেখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।
[৮] এদিকে পুরো ঘটনা জানিয়ে গৃহকর্মী আঁখি মনির মা শেরিনা বেগম কিশোরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শনিবার রাতে যুগ্ম দায়রা জজসহ চারজনকে আসামি করে মামলা রেকর্ড করা হয়।
[৯] এব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, মামলার অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে নির্যাতিতা শিশু কোতোয়ালি থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রয়েছে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ