শিরোনাম
◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন

প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ০৯:২৩ সকাল
আপডেট : ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ০৯:২৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফ্লাইওভারের নিচে নরকযন্ত্রণা, অব্যবহৃত অবস্থায় রাজধানীর মূল্যবান জায়গাগুলো

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলোর উপরে গতি বাড়লেও নিচে ঠিক বিপরীত চিত্র। ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা গাড়ি পার্কিং, দোকানপাঠ, ঘরবাড়ি, ভাসমান লোকদের আড্ডা আর আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণতি হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে রাস্তার ওপর প্রায় ২৯ কিলোমিটারজুড়ে থাকা ৭টি উড়াল সড়কের নিচের জায়গা নিয়ে যেন ভাবনা নেই কারোর। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রাক সমীক্ষায় এবং পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনায় বেশ দুর্বলতার কারণে মূল্যবান এসব জায়গা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

সরেজমিনে ঢাকার ফ্লাইওভারগুলো ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর মালিবাগ-মৌচাক, কুড়িল ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের ফাঁকা জায়গা দখল করে ভাতের হোটেল, গাড়ির গ্যারেজ, কুঁড়েঘর তৈরি করে চলছে ভাড়া খাটানোর জমজমাট ব্যবসা। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মাদকসেবী, ছিন্নমূল মানুষের আস্তানা আর ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই তিন ফ্লাইওভারের নিচের খালি জায়গা। মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের মালিবাগ ও মগবাজার মোড়ে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ টেম্পোস্ট্যান্ড। মালিবাগ রেলগেট ও রাজারবাগে সোহাগ ও গ্রিনলাইন কাউন্টার ঘিরে তৈরি হচ্ছে যানজট।

এছাড়া মগবাজার রেলগেটে ফ্লাইওভারের নিচে জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মোটসাইকেলের গ্যারেজ। মগবাজার হয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচের অংশ গাড়ির শোরুমগুলোর দখলে রয়েছে। রাজারবাগ ও এস বি অফিসের সামনে ফ্লাইওভারের নিচের অংশে পুলিশের গাড়ি রাখার ফলে অস্থায়ী যানজটের সৃষ্টি হয় প্রায়ই। কাকরাইলে এস এ পরিবহনের কাউন্টার, কর্ণফুলী মার্কেটের সামনে ইউটার্ন ও শান্তিনগর বাজারের সামনে অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে ফ্লাইওভার থেকে নেমে যানজটে পড়তে হয় নগরবাসীকে।

সিএনজি ও পেট্রল পাম্পের কারণে মগবাজার, মালিবাগ ও রাজারবাগে যানজট লেগে থাকে সব সময়। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা জমে গেছে পানি নিষ্কাশনের নালাগুলোয়। এরফলে পানি জমছে ফ্লাইওভারের ওপরের ও নিচের অংশে। ফলে উঠে গেছে রাস্তার পিচ। এই সড়কে নিয়মিত যাত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেশ কিছুদিন হবে মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারে সড়কবাতি জ্বলে না। রাতের বেলা হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝুঁকিতে যাতায়াত করতে হয় আমাদের। জ্বলে না ট্রাফিক সিগন্যালের লাইটও।

একই অবস্থা মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অংশেরও। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে নিমতলী পর্যন্ত হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের বিভিন্ন অংশে দুই শতাধিক চা ও ফলের দোকান এবং ভাতের হোটেল গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া আছে মুরগির দোকান, মাছের আড়ত। বঙ্গবাজার, টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেট ও সায়েদাবাদ এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে ছিন্নমূল মানুষের বাস। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের অংশ ব্যবহত হয় রিকশার গ্যারেজ হিসেবে। ৩০০ ফুট অংশে ফ্লাইওভারের নিচের অংশ ব্যবহার হয় গাড়ি মেরামতের কাজে। ছিন্নমূল মানুষের বসবাসের অন্যতম আবাসস্থল হয়ে উঠেছে কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের অংশ। জোয়ার সাহারা বাজার থেকে কুড়িল চৌরাস্তায় নেমে যাওয়া লুপের নিচে তৈরি করা হয়েছে ভাসমান টয়লেট। নাকে রুমাল চেপে যাতায়াত করতে হয় ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারকারীদের।

সায়েদাবাদে একটি বড় অংশ ইজারা দেয়া হয়েছে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন রাখার জন্য। ফলে জায়গাটি অনেকটাই পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। এই ফ্লাইওভারের ওয়ারি বিসিসি রোড অংশের চিত্র আরো অদ্ভূত। এখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করতে দেয়া হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির কয়েকশ’ পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে। ফ্লাইওভারর নিচে ফার্ণিচার ব্যবসায়ী তামিরুল ইসলাম বলেন, এলাকার ভাই-ব্রাদারকে কে খুশি রেখেই ফ্লাইওভারের নিচে দোকান পেতেছেন তারা
নগরবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফ্লাইওভার ভাঙছে আর আমাদের দেশে নিত্যনতুন ফ্লাইওভার তৈরি করা হচ্ছে। নির্মাণ করা হলেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এগুলো গলার কাঁটায় পরিণত হচ্ছে।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, শহরের বুকে অত্যন্ত মূলবান এসব জায়গায় হতে পারে- নান্দনিক পার্ক, হকারদের কর্মসংস্থান এবং পথশিশুদের বিনোদনকেন্দ্র। রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলোর নিচের জায়গাকে পরিবেশ ও অর্থনৈতিক দিক থেকে ফলপ্রসূভাবে ব্যবহার করতে, নগর পরিকল্পনাবিদদের পক্ষ থেকে একটি নকশা জমা দেয়া হয়েছিলে ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে। কিন্তু, তাতে খুব একটা মাথা ঘামায়নি ডিএসসিসি।

এ বিষয়ে বুয়েট এর স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক এম জাকিউল ইসলাম বলেন, সবচেয়ে ভালো হতো ফ্লাইওভারগুলো নির্মাণ হয়েছে তার আগেই যদি নিচে কী হবে এইটা চিন্তা করে নিতাম সেটা। তিনি বলেন, ভারত, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের বড় শহরগুলোতে ফ্লাইওভারের নিচের জায়গাকে এমন দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে। যেখানে আছে পার্ক, লাইব্রেরি, জলাশয়সহ নানা আয়োজন।

এ ব্যাপারে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, এসব জায়গায় গণমানুষের বিভিন্ন বিনোদন কার্যক্রম ছাড়াও পথচারীবান্ধব হকারদের জায়গা তৈরি করা সবচেয়ে সেরা বিকল্প। একটি জাতীয় দৈনিকে ফ্লাইওভারের গুরুত্ব সম্পর্কিত এক গোলটেবিল বৈঠকে ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা দখল প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ফ্লাইওভারের সুবিধা আমরা সবাই ভোগ করছি। কিন্তু এর নিচের জায়গা দখল করে নরক বানিয়ে ফেলা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে এসব দখলদারকে ঠেকাতে উদ্যোগ নিতে হবে। ইনকিলাব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়