মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা: এই সময়ে মোসাদ কেন ইরানি পরমাণু-বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে? যদিও এগুলোর কনফার্মেশন আসতে দেরি হবে, কিন্তু একটা সম্ভাবনা আছে, এটা ঘটেছে সৌদি আরবের অনুরোধে। ব্যাপারটা আমেরিকার নির্বাচন সংক্রান্ত। যেটা আমি প্রথম আলোতেও লিখেছিলাম, সৌদি আরব উদ্বেগের মধ্যে আছে, বাইডেন ক্ষমতায় আসলে ইরানের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাবে - ইরানের উপর থেকে অবরোধ তুলে নিবে, নিউক্লিয়ার ডিল পুনরায় ফিরিয়ে আনবে। এর ফলে ইরান আবারও ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেনে শিয়া ফোর্সগুলোর পেছনে বেশি ইনভেস্ট করার সুযোগ পাবে, যা সৌদি আরবের জন্য হুমকি। দীর্ঘদিনের শত্রুতা ভুলে সৌদি আরব যে এখন পুনরায় তুরস্কের সাথে সম্পর্কে উন্নয়ন ঘটাতে চাইছে, তার পেছনেও এই সমীকরণ কাজ করছে। এখন এই হত্যাকাণ্ডের ফলে কী হবে? একটা তো পরিষ্কার - টপ সায়েন্টিস্টকে সরিয়ে ফেলায় ইরানের নিউক্লিয়ার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। কিন্তু সেই সাথে যেহেতু এই ধরনের অপারেশন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া ঘটে না, এবং ইসরায়েলও খুব কম ক্ষেত্রে আমেরিকার সম্মতির বাইরে গিয়ে এরকম অপারেশন পরিচালনা করে, তাই সৌদি আরব এবং ইসরায়েল আশা করতে পারে, এর ফলে ইরানের সাথে আমেরিকার সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। ফলে বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় এলেও নিউক্লিয়ার ডিলে ফেরত যাওয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হবে। অথবা তারচেয়েও ভালো, ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগেই এর জের ধরে ইরান-আমেরিকার সম্পর্কের এতো অবনতি ঘটবে যে, বাইডেন আসার পর সেটা সামাল দিতেই তার বড় একটা সময় চলে যাবে।
এখন ইরানের রেসপন্স কী হবে? আপনি যদি আশা করেন ইরান বিশাল বড় প্রতিশোধ নিবে, সেটা ভুল। খুব বেশি সম্ভাবনা, ইরান এই মুহূর্তে পুরো ব্যাপারটা হজম করে যাবে। ইরান শ্রুড প্লেয়ার। তারা কখনোই মাথা গরম করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। তারা ধীরে খেলে। এবং তাদের মুভগুলো হয় খুবই ক্যালকুলেটেড। সৌদি আরামকোর উপর ইরান যখন ড্রোন হামলা চালিয়ে হুথিদেরকে দিয়ে দায় স্বীকার করিয়েছিল, তখন যে ড্রোন তারা ব্যবহার করেছিল এবং যেরকম পিন পয়েন্ট টার্গেট করতে সমর্থ হয়েছিল, তাতে বোঝা যায়, চাইলেই তারা পুরো অয়েল ফ্যাসিলিটি দীর্ঘমেয়াদে অকার্যকর করে দিতে পারত। কিন্তু সেটা তারা করেনি। ইচ্ছা করেই এমনভাবে হামলা করেছিল, যেন তাদের শক্তিটা বোঝা যায়, কিন্তু বাস্তবে শত্রুর ক্ষতি হয় খুবই কম। উদ্দেশ্যে, ওয়ার্নিং দেওয়া, কিন্তু একইসাথে শত্রুকে পাল্টা প্রতিশোধ নিতে বাধ্য না করা। একই কাজ তারা কাসেম সোলায়মানিকে হত্যার পরেও করেছিল। ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে লার্জ স্কেলে মিসাইল অ্যাটাক করেছিল। কিন্তু সেই হামলাও এমনভাবে করেছিল, তাতে ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছি, মার্কিন সেনারা হালকা আহত হয়েছিল, তাদেরকে প্লেনে করে জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নিতে হয়েছিল, কিন্তু একজন মার্কিন সেনাও মরেনি। ফলে আমেরিকা জবাব পেয়েছে, ওয়ার্নিং পেয়েছি, কিন্তু পাল্টা ইরানের উপর আরো বড় আক্রমণ করতে বাধ্য হয়নি। সো এখনও ইরান সম্ভবত এমন কিছু করবে না, যাতে ঘটনার আরো বেশি এসকেলেশন হয়। এমনিতেও ইরাকে আমেরিকার ঘাঁটিতে সহজে আক্রমণ করা যায়, কিন্তু ইসরায়েলের তো নিজ দেশের বাইরে সেরকম উপস্থিতি নেই। তাছাড়া এখন বাইডেন আসার পর আলোচনার যে সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে, সেটা নষ্ট করার রিস্কও ইরান নিতে চাইবে কিনা সন্দেহ আছে। ফলে আপাতত হয়তো তারা মুখে মুখে আমেরিকা-ইসরায়েলকে ধ্বংস করে ফেললেও বাস্তবে ব্যাপারটা হজম করে যাবে। বড়জোর হেজবুল্লাহকে দিয়ে কিছু ক্রসবর্ডার অ্যাটাক করাতে পারে, যাতে ইসরায়েলের আসলে বড় কোনো ক্ষতি হবে না। ফেসবুক থেকে