শিরোনাম
◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয়

প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ০৬:২৪ সকাল
আপডেট : ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ০৬:২৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১]রোগীর কিডনি গায়েব: [২]চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক সিকদারের(ভিডিও)

শিমুল রহমান : [৩]রোগীর দুটি কিডনি অপসারণের অভিযোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) নিহত রওশন আরার (৫৫) ছেলে চলচ্চিত্র পরিচালক মো. রফিক সিকদার বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৪৩। মামলার আসামিরা হলো, হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল (৫৫), একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন (৪৮), চিকিৎসক মো. মোস্তফা কামাল (৪৬) ও চিকিৎসক আল মামুন (৩৩)। এছাড়া অজ্ঞাত আরও তিন-চার জনকে আসামি করা হয়েছে। যমুনা টিভি, বাংলাট্রিবিউন

[৪] মামলার অভিযোগ পত্র থেকে জানা গেছে, একটি কিডনি অপসারণের কথা বলে রোগীর দুটি কিডনি অপসারণ করেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। এর কারণে অপারেশনের এক মাস পরেই ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওই নারীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর দুই বছর পর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর শাহবাগ থানায় নিহতের ছেলে রফিক সিকদার মামলা করলেন।

[৫] শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশীদ বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে রওশন আরার ময়নাতদন্ত করা হয়। ঢামেক থেকে সম্প্রতি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী হত্যা মামলা নিয়েছি।’ ময়নাতদন্ত রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, অল অরগান ড্যামেজ হওয়ার কারণে রওশন আরার মৃত্যু হয়েছে এবং তার দুটি কিডনিই সার্জিক্যালি অপসারণ করা হয়েছে।

[৬] এদিকে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর রওশন আরার মৃত্যুর একদিন পর ওই বছরের ১ নভেম্বর তার ছেলে রফিক সিকদার শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। জিডি নম্বর-৫৩। এরপর শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) চম্পক মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠান। ময়নাতদন্ত নম্বার ১৬৪৪/১৮।

[৭] মামলার এজাহারে রফিক সিকদার জানান, ২০১৮ সালের ২৭ জুন তার মাকে ঢাকার মিরপুর বিআইএইচএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানের চিকিৎসক ইউসুফ আলী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, তার মায়ের ডান কিডনিটি স্বাভাবিক এবং বাম কিডনিটি ‘এভেক্টেড’ অবস্থায় আছে। এরপর রওশন আরাকে ২০১৮ সালের ১ জুলাই উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেফার করেন। ওই দিনই অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলালের তত্ত্বাবধানে রওশন আরাকে হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়। ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করার নির্দেশনা দেন তিনি। তবে ১২ আগস্ট অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এ্নার্জি কমিশনের পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানা যায় রওশন আরার ডান কিডনিটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তার দুটো কিডনি সেপারেট অবস্থায় আছে।

[৮] পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট বিএসএমএমইউ থেকে ডাক্তার সৈয়দ সুলতান ফোন করে জানান রওশন আরার বাম পাশের অকেজো কিডনি অপারেশন করার জন্য আসতে হবে। ওই বছরের ২৮ আগস্ট অধ্যাপক হাবীবুর রহমানের পরামর্শে রওশন আরার বাম কিডনি আপারেশনের জন্য তাকে ভর্তি করে বিভিন্ন টেস্ট করানো হয়। কিন্তু দুটি পরীক্ষায় জানা যায় তার কিডনি স্বাভাবিক রয়েছে।

[৯] তবু ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট চিকিৎসক হাবিবুর রহমান দুলাল রওশন আরার বাম কিডনিটি অপসারণের দিন ধার্য করেন। ওই দিন দুপুরে হাসপাতালের ১০ তলার ইরোলজি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল, সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার ফারুক হোসেন, ডাক্তার মোস্তফা কামাল ও ডাক্তার আল মামুন বাম পাশে থাকা কিডনিটি অপসারণের জন্য অপারেশন শুরু করেন। প্রায় ৩ ঘণ্টা অপারেশন হয়। এরপর অপসারণকৃত একটি কিডনি স্বজনদের হাতে দেওয়া হয়। তবে এরপরই রওশন আরার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাতেই তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিতে বলা হয়। হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় ডিউটি ডাক্তারের পরামর্শে রোগীকে মগবাজারে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল নেওয়া হয়। ৬ আগস্ট ওই হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের প্রফেসর ডাক্তার ফখরুল ইসলাম পরীক্ষা করে প্রথম জানান রওশন আরার দুটি কিডনির একটিও নেই।

[১০] ডাক্তার ফখরুল আশ্চর্য হয়ে রফিক সিকদারকে বলেন, ‘আপনার মায়ের কোনও কিডনিই নেই।’ ডাক্তার ফখরুল তাৎক্ষণিক বিএসএমএমইউর প্রফেসর ডাক্তার হাবিবুর রহমান দুলালের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং রওশন আরাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার পরমার্শ দেন। পুনরায় রোগীকে সেখানে ভর্তি করা হয়।

[১১] এই বিষয়ে প্রফসের ডা. হাবিবুর রহমান দুলালকে রোগীর স্বজনরা রিপোর্টে কিডনি না দেখার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, রিপোর্ট বা অন্যের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। রওশন আরা সুস্থ হয়ে যাবেন। এছাড়াও রোগীর ডান পাশের কিডনিটি আছে এবং বাম পাশের কিডনিটি অপসারণের কারণে ডান পাশের কিডনি দেখা যাচ্ছে না। এদিকে রওশন আরার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আত্মীয়রা ভয়ে দ্রুত তাকে পান্থপথের বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রফেসর ডাক্তার আব্দুস সামাদ পুনরায় তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের সেই রিপোর্টেও রোগীর কোনও কিডনি খুঁজে পায়নি চিকিৎসকরা। কিডনি না থাকায় দিন দিন রওশন আরার শরীর ফুলে যেতে থাকে। পরে পুনরায় তাকে বিএসএমএমইউ-তে ভর্তি করা হয়।

[১২] তবে কিডনি না থাকার বিষয়টি এবারও হাবিবুর রহমান দুলাল অস্বীকার করেন। পরে চিকিৎসকদের রওশন আরার স্বজনরা চাপ দিলে তিনি ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে গিয়ে রফিক সিকদারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। সেখানে তিনি রওশন আরার ডান পাশের কিডনি অপসারণের বিষয়ে দায় স্বীকার করেন এবং হারানো কিডনির জন্য একটি নতুন কিডনি প্রতিস্থাপনের আশ্বাস দেন। এর জন্য খরচসহ অন্যান্য যা কিছু প্রয়োজন তা তিনি বহন করবেন বলে জানান। তবে এই চুক্তির পরেও অধ্যাপক হাবিবুর রহমান কোনও উদ্যোগ নেয়নি। যদিও রওশন আরার বোন একটি কিডনি দিতে প্রস্তুত ছিলেন। এরপর ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর রাত পৌঁনে ১০টায় রওশন আরা মৃত্যুবরণ করেন।

[১৩] রওশন আরার ছেলে রফিক সিকদার বলেন, ‘দুই বছর ধরেই বলে আসছি, মাকে হত্যা করা হয়েছে। ন্যায়বিচারের জন্য মামলা করেছি। অপরাধীরদের চূড়ান্ত বিচারে শাস্তি পাবে বলে বিশ্বাস করি।’

[১৪] এই বিষয়ে অধ্যাপক হাবীবুর রহমানের বক্তব্যের জন্য তার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মোবাইলে কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

[১৫] শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মামুন অর রশীদ বলেন, ‘এখনও কোনও আসামি গ্রেফতার হয়নি। আমরা তদন্ত শুরু করেছি।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়