ডেস্ক রিপোর্ট : গত ১০ বছরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশকে (বিআরটিসি) এক হাজার ৫৫৮টি বাস কিনে দেয় সরকার। এগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থাটির বহরে পুরোনো বাস ছিল ৫৯২টি। সব মিলিয়ে দুই হাজার ১৫০টি বাস থাকলেও সেগুলোর সঠিকভাবে পরিচালনা করেনি বিআরটিসি। এতে পাঁচশ’র বেশি বাস অচল পড়ে আছে। বাকি বাসের বেশিরভাগই ইজারায় চালানো হচ্ছে। শেয়ার বিজ
এর পরও নতুন ২০০ বাস কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বিআরটিসি। এর মধ্যে রয়েছে ৫০টি ইলেকট্রিক একতলা বাস, ৫০টি একতলা সিএনজি এসি বাস ও ১০০টি ডিজেল একতলা এসি বাস। সম্প্রতি এ প্রকল্পের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) অনুমোদন করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ঋণ গ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশন থেকে এ-সংক্রান্ত চিঠি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, বাসগুলো ক্রয় প্রকল্পের পিডিপিপি পরিকল্পনামন্ত্রী নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছেন। প্রকল্পটির অনুকূলে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ফান্ড (ইডিসিএফ), কোরিয়া’র আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
তথ্যমতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিআরটিসির বাস সার্ভিসকে পুনরুজ্জীবিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে নর্ডিক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (এনডিএফ) ঋণে ২০১০ সালে চীন থেকে কেনা হয় ২৭৫টি একতলা সিএনজিচালিত বাস। ২০১১ সালে কোরিয়ার ঋণে দেশটি থেকে কেনা হয় ১৫৫টি নন-এসি ও ১০০টি এসি একতলা সিএনজিচালিত বাস। আর ভারতের ঋণে ২০১২ সালে ২৯০টি দ্বিতল এবং ২০১৩ সালে ৫০টি আর্টিকুলেটেড ও ৮৮টি এসি বাস যুক্ত হয় বিআরটিসির বহরে।
এরপর গত বছর ভারত থেকে ৬০০ বাস কেনে বিআরটিসি। এর মধ্যে রয়েছে ৩০০টি দ্বিতল বাস, ১০০টি নন-এসি বাস, ১০০ সিটি বাস (এসি) ও ১০০ আন্তঃনগর বাস (এসি)। এক হাজার ৫৫৮টি বাসের মধ্যে ২২টি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপহার দেওয়া হয়। অবশিষ্ট বাসের মধ্যে বেশকিছু বাস কনডেম (ব্যবহার অযোগ্য ঘোষণা) করা হয়। এতে বাসের সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ৮৭৩। এর মধ্যে ৩৮৪টি রুটে চলছে এক হাজার ৩৫৭টি বাস এবং ২২৪টি বাস বিকল হয়ে পড়ে আছে। তবে সেগুলো মেরামত করে রাস্তায় নামানো সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৩৪টি ও সচিবালয়ের স্টাফ বাস হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছে ১৪৪টি।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নিয়মিত নতুন বাস কেনা হলেও এগুলোর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। ফলে ২০১০ সালে চীন থেকে আনা বাসগুলোর অধিকাংশই এখনও বিকল। মাত্র ৬০টি চলাচল করলেও নিয়মিতই ওয়ার্কশপে যাতায়াত করে। ভারত ও কোরিয়ার বেশকিছু বাসও অচল হয়ে আছে। বাসগুলো এখন গাজীপুর, কল্যাণপুর, মিরপুর ও মতিঝিলে বিআরটিসির বাস ডিপোতে ফেলে রাখা হয়েছে। এছাড়া বিগত সরকারের সময় কেনা ভলবো বাসগুলো ছিল খুবই ব্যয়বহুল। কিন্তু ৫০টির মধ্যে ৪৯টিই বিকল পড়ে আছে।
বাকিগুলোর মধ্যে শুধু এসি বাসগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালাচ্ছে বিআরটিসি। আর নন-এসি, দ্বিতল ও আর্টিকুলেটেড (দুই বগির জোড়া লাগানো) কয়েকটি বাস ইজারায় চলছে। দৈনিক জমার ভিত্তিতে এসব বাস ইজারা দেয় সংস্থাটি। ফলে প্রতি বছর বড় অঙ্কের লোকসান করছে সংস্থাটি। এমনকি ঋণের কিস্তিও (ডিএসএল) অনেক সময় পরিশোধে ব্যর্থ হয় বিআরটিসি।
মতিঝিল-মিরপুর রুটে চলাচলকারী এক বাসের কন্ডাক্টর জানান, দৈনিক দ্বিতল বাসের জন্য ছয় হাজার টাকা জমা দিতে হয়। এরপর বাড়তি যা থাকে তা তাদের লাভ। তবে ছয় হাজার টাকা থেকে বাসের জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বিআরটিসি বহন করে। আর মতিঝিল-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী এক বাসের কন্ডাক্টর জানান, দৈনিক দ্বিতল বাসের জন্য সাড়ে সাত হাজার টাকা জমা দিতে হয়। এরপর বাড়তি যা থাকে তা তাদের আয়। বাসের জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বিআরটিসি বহন করে।
জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. এহসানে এলাহী শেয়ার বিজকে বলেন, চালক ও অন্যান্য জনবল সংকটে বেশকিছু বাস ইজারা দেওয়া আছে। তবে আন্তঃজেলা রুটের বেশিরভাগ বাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হচ্ছে। এছাড়া কিছু বাস মেরামত করে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বাসের সংখ্যা বাড়াতে ড্রাইভার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণশেষে আরও বাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো যাবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগরে যানজট কমাতে মূলত নতুন বাস কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সহজ শর্তে ইডিসিএফ ঋণ নেওয়ার জন্য চেষ্টা চলছে। তবে নতুন বাসগুলো বিআরটিসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানোর ব্যবস্থা করা হবে।