শিরোনাম
◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয়

প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৪২ দুপুর
আপডেট : ২২ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৪২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তসলিমা নাসরিন: যে হাতে গোনা কজন মানুষ আমাকে জানে, তারা জানে আমি খুব বোকা!

তসলিমা নাসরিন : আজকাল নিঃস্বার্থ মানুষ পাওয়া যায় না। মানুষ স্বার্থটা এতো ভালো বোঝে যে বিশ্বাসই করতে পারে না পৃথিবীতে এখনো কিছু মানুষ আছে যারা স্বার্থ দেখে না। শৈশব-কৈশোরে যারা আমার সহপাঠী বা বন্ধু ছিলো, যারা ডাক্তারি পড়েছিলেন, পাস করেছেন আমার সঙ্গে, আমার আগে বা পরে, সবাই বিশাল ধনী। দেশে-বিদেশে তারা অট্টালিকা বানিয়েছে, বাগানবাড়ি বানিয়েছে। রাজার হালে বাস করে একেকজন। আমার কিন্তু মাথার ওপর ছাদ নেই, পায়ের তলায় মাটি নেই। আমি তো নামি হাসপাতালের ডাক্তার ছিলাম। আমি তো জনপ্রিয় লেখক ছিলাম। যাকে মোটা অংকের অগ্রিম রয়্যাল্টি দিয়ে যেতো প্রকাশকেরা। আমার এই দুর্দশা কেন? ওই একটাই কারণ, নিজের কথা মোটেও ভাবিনি সমাজকে সুস্থ, সুন্দর এবং সভ্য করবো, নারীর সমানাধিকার আনবো, সবাইকে বিজ্ঞানমনস্ক করবো, এই স্বপ্ন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। অনেকটা হাঙ্গর ভরা জলে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো।

লক্ষ্য করেছি, যখন সংখ্যালঘু হিন্দুর অধিকারের কথা বলেছি, হিন্দুবিরোধী লোকেরা দোষ দিয়েছে, হিন্দু মৌলবাদীদের টাকা খেয়ে নাকি বলেছি। যখন পাকিস্তানে অত্যাচারিত সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের বাঁচার অধিকারের কথা লিখেছি, তখন খ্রিস্টানবিরোধী লোকেরা দোষ দিয়েছে, খ্রিস্টান মৌলবাদিদের টাকা খেয়ে লিখেছি। যখন জিহাদি মৌলবাদী গোষ্ঠীর বর্বরতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছি, তখন জিহাদি সমর্থকরা, এমনকি যারা সমর্থক নয়, তারাও দোষ দিয়েছে, হিন্দু বা খ্রিস্টান বা ইহুদিদের টাকা খেয়ে সরব হয়েছি। যখন গুজরাটের মুসলিম বা ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে বলেছি, অনেকে দোষ দিয়েছে আরব দেশের টাকা খেয়ে বলেছি। যখন সমকামীদের অধিকারের পক্ষে লিখি, তখনও বলে পাশ্চাত্যের টাকা খেয়ে লিখি। মানবতার কথা, মানবাধিকারের কথা লিখলেও ওই একই বদনাম, কোথাও থেকে টাকা পেয়েছি, তা না হলে লিখবো কেন। তারা বুঝে পায় না, টাকা না পেলে ওইসব বিষয়ে কেন রুখে দাঁড়াবে কেউ। মানবাধিকার সংগঠনের লোকেরা দাঁড়ায়, এসব তাদের এজেন্ডা বলেই দাঁড়ায়, দাঁড়িয়ে টাকা পায় বলে দাঁড়ায়। এনজিওর লোকেরাও তাই করে। কিন্তু একা একজন লেখক কেন দাঁড়ায়? ঘরের খেয়ে বনের মোষ যে কেউ কেউ তাড়ায়, এ ব্যাপারে কারও কোনো ধারণা নেই।

টাকা, টাকা এবং টাকা। টাকা ছাড়াও, স্বার্থ ছাড়াও যে কিছু কিছু মানুষ অন্যের ভালোর জন্য কাজ করে তা কে কাকে বোঝাবে। এই টাকা কেন্দ্রিক সমাজ তা বুঝবে না। তাই অকথ্য গালি আর বদনাম মাথায় নিয়ে নিজের মতপ্রকাশ করি। মাথার ওপর ছাদ নেই, পায়ের তলায় মাটি নেই জেনেই করি। যেকোনো সময় বাড়ির মালিক বলবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে, যেকোনো সময় দেশের শাসক বলবে দেশ থেকে বেরিয়ে যেতে। এসব কিছুই নতুন নয় আমার জন্য। পাশ্চাত্যের কিছু দেশ আমার সংগ্রামের কথা জেনে আমার দেখভাল করতে চেয়েছিলো। আমি সযতনে প্রত্যাখ্যান করেছি তাদের করুণা। বলে দিয়েছি, আমাকে নয়, নির্যাতিত মেয়েদের সাহায্য করুন। আমার প্রত্যাখ্যান অবিশ^াস্য ঠেকবে সবার কাছে। অবিশ^াস্য কিছু কাজ আমি হেলায় ফেলায় করেছি বটে জীবনে। যে হাতে গোনা কজন মানুষ আমাকে জানে, তারা জানে আমি খুব বোকা। আমিও জানি আমি খুব বোকা। না, এ কারণে আমার কোনো আফসোস নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়