ফিরোজ আহমেদ: ১৯৮১ সালে একবার বিটিভিতে ‘হীরক রাজার দেশে’ দেখানো হয়েছিলো। তখন তো আটটায় রাতের খাওয়া, অনতিবিলম্বে ঘুম। অত রাত পর্যন্ত জেগে পুরোটা দেখতে পারিনি, যেটুকু দেখেছি, তারও কিছু বুঝিনি। আমার বড় বোন এবং বড় ভাই তারা দুজন ঠিকই জেগে ছিলো। এর অজস্র ছন্দোবদ্ধ পদ পরদিন শুনতে শুনতে না দেখতে পারার ঈর্ষায় কাতর হচ্ছিলাম। কিন্তু পরদিন না শুধু, বিস্মৃত হতে হতে বহুদিন টিকে ছিলো দুটো পঙক্তি, আমার ভাইয়ের কল্যাণে, দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান্ খান্! জানি না সে কী ভেবে এই কথাটা বারবার আওড়াতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপাত দৃশ্যে অসম্পর্কিত স্থানগুলোতেই ছড়াটা বলা হতো। রাস্তায় যেতে যেতে অপরিচিত বাড়ির বরই গাছে ঢিল ছোড়ার সময়, কারো মাথায় চাঁটি মেরে দৌড় দেওয়ার সময়, খুব মজার কিছু ঘটতে যাচ্ছে এমন আনন্দের সময়ে, মোট কথা যে কোনো রোমাঞ্চকর কাজের সূত্রপাতে এই ছড়াটা তার বেশ প্রিয় ছিলো, বহুদিন।
হয়তো সে তার বালকসুলভ সকল দুষ্টুমির অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবেই এই ছড়াটাকে পেয়েছিলো। হীরক রাজার দেশে ছবিটাতে এতো এতো সব দারুণ পঙক্তি আছে। কিন্তু শুধু এই কারণেই আমার ছেলেবেলার অন্যতম স্মৃতি হিসেবে টিকে আছে দড়ি ধরে টান মারার সেই আহ্। বড় হয়ে দেখেছি এই ছবিটার কথা বারবার শুনতে হয়েছে আনু মুহাম্মদের কল্যাণে। উপযুক্ত প্রেক্ষিত পেলেই তিনি আওড়ান, বাকি থাকা খাজনা মোটেও ভালো কাজ না, ‘ভরপেট নাও খাই, রাজকর দেওয়া চাই’। হীরক রাজার দেশের স্রষ্টা সত্যজিৎ-এর মতোই সৌমিত্রের কাছেও আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো, দড়ি ধরে টান মারার আহ্বানটাকে সৌমিত্র অমর বানিয়ে রেখেছেন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :