মাছুম বিল্লাহ: [২] ভারতের আসামে কথিত ‘বাংলাদেশি’দের অবৈধ বসবাসের যে মিথ তৈরি করেছিল এক শ্রেণির রাজনৈতিকরা তা ভেঙ্গে যাচ্ছে। গত বছর জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কথিত বাংলাদেশি বসবাসের অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবার আসামের বন্দিশিবিরগুলোতেও বাংলাদেশিদের সংখ্যা নিয়ে মিথ ভাঙছে।
[৩] আসামের বন্দিশিবিরগুলোতে যারা বন্দী হয়; তাদের অমানুষিক নির্যাতন করা হয়, দেয়া হয়না চাহিদা অনুযায়ী খাবার। এ জন্য অনেক বন্দির মৃত্যু হয়েছে, অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। এটাকে বন্দিরা ‘দোযখ’ বলে আখ্যা দেন। এ পর্যন্ত বন্দিশিবিরে ২৮ জনের মৃত্যুও হয়েছে। কথিত এই ‘দোযখ’ থেকে মুক্তি পেয়ে ১৭৭ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। ফেরার অপেক্ষায় ৬০ জন। এরা ফিরলেই আসামের বন্দিশিবিরে আর কোনো বাংলাদেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না।
[৪] আসামের গুয়াহাটিস্থ বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন থেকে এ তথ্য জানাগেছে। বিজেপিশাসিত এই রাজ্যে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলগুলো এবং বিজেপির অভিযোগ এক কোটির বেশি ‘বাংলাদেশি’ বসবাস করছে। তাই ‘বাংলাদেশি’ চিহিৃত করতে গত বছরের ৩১ আগস্ট জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকা থেকে বাদ যায় ১৯ লাখ নাগরিকের নাম। তাঁদের বেশির ভাগ বাঙালি হিন্দু-মুসলমান। বাদ পড়াদের অনেককে আটক রাখা হয় রাজ্যের ছয় জেলার ছয়টি বন্দিশিবিরে।
[৫] এই বন্দিশিবিরগুলোতে অধিকাংশই বাংলাভাষী মানুষদের রাখা হয়। যাদেরকে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহিৃত করা হয়। এতে প্রকৃত পক্ষে সন্দেহজনক বাংলাদেশি নাগরিক কতজন রয়েছেন; তার সঠিক তথ্য সংগহ করছে গুয়াহাটিস্থ বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন।
[৬] গুয়াহাটির বাংলাদেশ মিশনের সহকারি হাইকমিশনার ড. শাহ মুহাম্মদ তারভীর মনসুর আমাদের নতুন সময়কে জানান, ‘আমরা আসামের বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে গিয়ে বন্দিদের সনাক্ত করি। তাদের তথ্য সরকারকে পাঠাই। যাচাই-বাছাইয়ের পর বাংলাদেশি হিসেবে প্রমাণ হলে তাদেরকে আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করে দেশে পাঠাই। ২০১৭ সালের মার্চ থেকে গুয়াহাটির মিশন চালু হওয়ার পর ১৭৭ জন বাংলাদেশি নাগরিককে চিহিৃত করা হয়েছে এবং তাদের দেশে ফেরানো হয়েছে।’
[৭] তিনি বলেন, ‘গত ৩ নভেম্বর আসামের তেজপুর, গোয়ালপাড়া, শিলচর, ডিব্রুগড়, কোঁকড়াঝাড় ও জোরহাট জেলার বন্দিশিবির থেকে মুক্ত করে চলতি মাসে ৪২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে মুক্ত করে ফেরানো হয়েছে। এরপর ১৫ নভেম্বর আরও ৬ জনকে দেশে ফেরানো হয়।’
[৮] তারভীর মনসুর আরও বলেন, ‘আমরা এখ পযন্ত ২৩৭ জনকে সনাক্ত করেছি। যারা বিভিন্ন সময় অনুবেশ করা এবং ভিসার মেয়াদ শেষ যাওয়ার পর আটক হয়ে সাজা ভোগ করছিলেন। ১৭৭ জনকে দেশে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৬০ জনকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এদের পাঠানোর পর আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে আর কোনো বাংলাদেশিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।’