ডেস্ক রিপোর্ট : এক জেলা ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি ও হত্যা করে লাশ গুম করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন এক দম্পতি।
মঙ্গলবার ওই ছাত্রলীগ নেতা ও তার পরিবারের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেতে মো. নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী কাফনের কাপড় পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে এই স্মারকলিপি প্রদান করেন।
ফতুল্লা ইউনিয়নের সস্তাপুর মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাহরিয়ার রেজা হিমেল প্রথমে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। যদি টাকা না দিই তাহলে বসতবাড়ি থেকে উৎখাত করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। আর চাঁদা দাবির ঘটনা যদি জানাজানি হয় বা আইনরে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করি তাহলে পরিবার সমেত হত্যা করে লাশ গুম করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে।
ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম ডিসি ও এসপির কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে বলেছেন, মো. শাহজালাল ও মো. শাহজাহান দুজন আমার সস্তাপুর মধ্যপাড়ার ভোগ দখলে থাকা ভূমি জোর পূর্বক দখল করতে চায়। তারা বিভিন্ন সময় আমার জমি দখল করবে বলে আমাকে হুমকি প্রদান করে আসছে। পরবর্তীতে গত ৮ অক্টোবর তাদের ভাতিজা ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার রেজা হিমেল, তার চাচা মজিবর রহমান, জুয়েল, মো. জাকিরসহ ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় আমাকে আমার বাড়ি থেকে উৎখাত করে দেওয়ার হুমকি দেয়। ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার রেজা হিমেল হুমকি দিয়ে বলে যে- ‘আজকে তোকে এমন টুকরা টুকরা করতাম ঢাকা মেডিকেলেও রাখতো না’।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগরে সহসভাপতি শাহরিয়ার রেজা হিমেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে গত ৪ অক্টোবর হিমেলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছিল তিন সন্তান নিয়ে এক দম্পতি। রিকশা গ্যারেজ মালিক শফি প্রধান, তার স্ত্রী মেহেরুন নেছা ও তিন ছেলে সন্তানকে নিয়ে ওই মানববন্ধন করার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এর পর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ আসতে শুরু করে।
শফি প্রধান জানান, ছাত্রলীগ নেতা হিমেলের চাচা মজিবর ও তার বাহিনীর লোকজন তুচ্ছ ঘটনায় আমার তিনটি সন্তানের সামনে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে আমার ছেলেরা আমাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। এ সময় পার্শ্ববর্তী সজলসহ কয়েকজন আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে সজলের একটি আঙুলে কোপ দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং আরও একজনকে কুপিয়ে তারা চলে যায়। এঘটনায় আমার ছেলে বাদল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় হিমেলের চাচা মজিবর ও তাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে হিমেল তার চাচা মজিবর ও জুয়েল নানা ভাবে হুমকি দিতে থাকে। উপরন্তু আমাদের শায়েস্তা করতে এক নারী দিয়ে আমার ছেলে বাদলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছে। আমার ছেলেরা ফেরি করে কাপড় বিক্রি করে সংসার চালায়। আমি পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই।
এদিকে স্থানীয় লোকজন হিমেল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, হিমেলের শেল্টারে তার চাচা মজিবর ও জুয়েল এলাকায় সাধারণ মানুষকে অত্যাচার করে। সস্তাপুরে অনেক পরিবারকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা দিয়েছে। সাইনবোর্ড লাগিয়ে বাড়ি ঘর দখল করেছে। ফতুল্লার সস্তাপুর, শিবু মার্কেট, কোতোয়ালেরবাগ সহ আশপাশ এলাকা মূলত হিমেলের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে পান থেকে চুন খসলেও হিমেলকে অবহিত করতে হয়।
এ ব্যাপারে হিমেল গণমাধ্যমকে জানান, তাকে ও তার পরিবারকে হেয় করতে এসব মিথ্যা অপপ্রচার। দেশে আইন আছে, পুলিশ-র্যাব আছে। আমরা এত অত্যাচার করলে কি তারা বসে থাকত।
সূত্র- দেশরূপান্তর
আপনার মতামত লিখুন :