আহসান হাবিব : আমাদের দেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য কেমন, সেটা একটু ভেবে দেখার চেষ্টা করলাম। দেখলাম কোনো মানুষই মানসিকভাবে সুস্থ নয়। যদিও মানসিক স্বাস্থ্য একক কোনো বিষয় নয়, এর ভালো থাকা মন্দ থাকা নানা কিছুর ওপর নির্ভরশীল। তথাপি প্রথমেই ভাবলাম যে দেশের মানুষ প্রায় ১০০ শতাংশ ধার্মিক, সেখানে মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ পাওয়া সম্ভব নয়। এদের সব চিন্তা একটি অযৌক্তিক বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। এরা যখন ডাকাতি করে তখন মুখে বিসমিল্লাহ বলে, যখন খাদ্যে ভেজাল দেয়, তখন মাথায় টুপি থাকে, যখন প্রতিপক্ষকে খুন করার জন্য তাড়া করে, তখন এদের পরিধানে থাকে ধর্মীয় লেবাস, হাতে তলোয়ার। এরা শিশুদের ধর্ষণ করে হরহামেশা। পরকালের সুখ-চিন্তায় এদের দিনের সমস্ত সময় কাটে। হুর এবং মদ্য এদের স্বপ্নে সদা ঘুরঘুর করে। আপনার কী মনে হয় এদের মানসিক স্বাস্থ্য স্বাভাবিক।
রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর একজন মন্ত্রী যিনি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত তিনি বলেছিলেন, এটা কেউ হাত দিয়ে ধাক্কা মেরেছে, করোনা নিয়ে একজন মন্ত্রী বলেছেন, আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী। মন্ত্রীদের এমন বচন রাশি রাশি। কী বলবেন এরা মানসিকভাবে সুস্থ? বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ধর্মগ্রন্থ থেকে আয়াত উদ্ধৃত করে বিজ্ঞান আলোচনা করেন, বিজ্ঞানের উচ্চ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর মৌলবাদী পয়দা হয়, তাদের কী করে আপনি মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ বলবেন। যে শিক্ষক না স্কুল কলেজে না পড়িয়ে টিউশন করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছেন। তিনি কী মানসিকভাবে সুস্থ। ঠকানো এদেশের মানুষের একটি প্রধান কাজ। এমন কাউকে খুঁজে পাবেন না যে অন্যকে চব্বিশ ঘণ্টা ঠকানোর ফন্দি করছে না। যারা শ্রম শোষণ করে বিলাসী জীবন যাপন করছে, টাকা পাচার করছে, ব্যাংকের টাকা মেরে দিচ্ছে, তাদের কী করে আপনি মানসিকভাবে সুস্থ বলবেন।
ভাগ্য গণনার জন্য এই দেশে আপনি অজস্র জোতিষী পাবেন, পাথর বিক্রি করছে তারা, পানি পড়ায় হেন কোনো অসুখ নেই যে, ভালো করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে না, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য কী সহজেই বোধগম্য। একজন চিকিৎসক তার নিজের বিদ্যার ওপর ভরসা না করে ঈশ্বরের দোহাই দেন, আবার তিনিই ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন খান, এদের আপনি কী করে মানসিক সুস্থ বলবেন। আমাদের রাষ্ট্রের একটি ধর্ম আছে, দেশের প্রধান নির্বাহী তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন বলে প্রচার পায় এবং এটা একটা মহান গুণ হিসেবে জনগণ মনে করে, কী করে তাহলে বলবো এই রাষ্ট্র, এই রাষ্ট্রের মানুষ মানসিকভাবে সুস্থ। ওষুধের দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন কোন ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। উত্তর পাবেন সেক্সের ওষুধ। তার মানে এদেশের মানুষের যৌন স্বাস্থ্য সুস্থ নয়। আর ধর্ষণের হার দেখেই বুঝতে পারছেন, এদের মানসিক স্বাস্থ্য কী রকম বিকৃত।
আপনি কাউকে জিজ্ঞেস করেন কেমন আছেন? বিচিত্র উত্তর পাবেন আছি কোনো রকম, আর ভালো থাকা। খুব ভালো আছি ভাই, একদম ভালো নেই, ঘুৃম নেই একফোঁটা, কী করে ভালো থাকবো ইত্যাদি। এখন বুঝুন কেউই ঠিক জানে না সে কেমন আছে। আমরা কেউ মানসিকভাবে সুস্থ নেই। কী করে থাকবো। আমাদের শরীরই তো ঠিক নেই, মন কী করে ভালো থাকে। আবার মনই তো ঠিক নেই শরীর কী করে ভালো থাকে। লোভ, লালসা ঘুষ, দুর্নীতি, ভেজাল, জবরদখল, গুম, খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি টাকা, পাচার অপশিক্ষা-কুশিক্ষা, দালালি, মিথ্যাচার, ঠকানো বৈষম্য যে দেশের মানুষের প্রধান কাজ। সেই দেশে মানসিকভাবে সুস্থ একজন মানুষকে পাওয়া যাবে, আশা করা বাতুলতা এবং এটাই বড় মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ। ফেসবুক থেকে