বাগেরহাট প্রতিনিধি: সারা দেশে ধর্ষণের প্রতিবাদের মধ্যেই এবার বাগেরহাটের ফকিরহাটে টিনের চাল কেটে ঘরে ঢুকে এনজিও কর্মীকে (২৫) গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে চার যুবকের বিরুদ্ধে।
শনিবার (১০ অক্টোবর) গভীর রাতে উপজেলার লকপুর ইউনিয়নের জারিয়া মাইটকুমড়া গ্রামের একটি ভাড়া বাসায় নির্যাতনের শিকার হয় ওই নারী।
এদিকে, খবর পাওয়ার পর ওই রাতেই ধাওয়া করে পুলিশ মামুন শেখ (৩০) নামে এক ধর্ষককে আটক করলেও পালিয়েছে অপর তিন জন।
পুলিশ জানায়, নারীর উপর নির্যাতনকারী চারজন পেশায় ভ্যানচালক, নির্মাণ শ্রমিক ও কৃষি শ্রমিক। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
ভুক্তভোগী ওই নারী বাদি হয়ে রোববার মামুনসহ চারজনকে আসামি করে ফকিরহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। বিকালে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
অপর তিন আসামি হলেন- ফকিরহাট উপজেলার পাশ্ববর্তী ছোট খাজুড়া গ্রামের সিরাজ নিকারীর ছেলে ফিরোজ নিকারী (২৯), এইক গ্রামের রাজু (২৫) এবং মুসা (২৯)।
ওই বাড়ির মালিক বিষ্ণু পদ কুন্ড জানান, এনজিও কর্মী ওই নারী প্রায় দেড় বছর ধরে তার বাড়ির একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। প্রায় দুই মাস আগে তার বিয়ে হলেও চাকরির কারণে ওই নারী একাই থাকেন এখানে। রাতে চিৎকার শুনে তারা গিয়ে কয়েকজন যুবককে দেখতে পান। তারা এলে ওই যুবকরা দৌড়াদৌড়ি ও হুড়াহুড়ি করতে থাকে।
প্রতিবেশী স্কুল শিক্ষক নিখিল কুমার ঘোষ জানান, গভীর রাতে চিৎকার শুনে অন্যদের মতো তিনিও ছুটে আসেন। এসে দেখতে পান ওই বাড়িতে লোকজন জড়ো হয়েছে। ততক্ষণে পুলিশ মামুন শেখ নামে একজনকে আটক করেছে। সেখানে আসার পর ওই এনজিও কর্মীর উপর পাশাবিক নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছেন তিনি।
ওই নারীর উপর যারা নির্যাতন চালিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শ্বাস্তির দাবি জানান ওই শিক্ষক।
ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ বলেন, শনিবার গভীর রাতে খবর শুনেই পুলিশকে ফোন দিয়ে দ্রুততার সাথে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে রুম হতে বারান্দায় বের হতেই আসামিরা জোরপূর্বক তার কক্ষে প্রবেশ করে। পাশের কক্ষের ভাড়াটিয়া সহকর্মীর (বিশ্বজিৎ) সাথে খারাপ কাজ করেছি এই বলে গলায় চাকু ধরে এক লাখ টাকা দাবি করে। এর পর তারা পাশের কক্ষের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে ওই সহকর্মীকে টর্চলাইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং মারধর করে। এসময় আসামিরা তাকে ওই সহকর্মীর কক্ষে নিয়ে এক সাথে মোবাইল ফোনে ভিডিও করে। পরে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় নির্যাতনের দৃশ্য আসামিরা মোবাইল ফোনে ধারণ করে। একপর্যায়ে জোরে চিৎকার করি। যাবার সময় আসামিরা ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা ১৬ হাজার টাকা, কানের দুল (স্বর্ণের) এবং গলার চেইন নিয়ে যায়।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, চারজনের একদল যুবক ওই নারী এনজিও কর্মীর ভাড়া বাসার কক্ষে কৌশলে প্রবেশ করে প্রথমে তাকে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তারা ওই নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
তিনি আরো বলেন, রাতেই খবর পেয়ে টহল পুলিশ ওই এলাকা থেকে মামুন শেখ নামে একজনকে আটক করে এবং তার কাছ থেকে মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ওই ভিডিও জব্দ করা হয়।
আটক আসামিকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, অপর আসামিদের ধরতে চেষ্টা চলছে।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির জানান, নির্যাতনের শিকার ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা বিকালে হাসাপাতালের তিন সদস্যের নারী চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ড সম্পন্ন করেছে। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়া হবে।