দিনাজপুর প্রতিনিধি: ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রুখিয়া রাউৎ (২৩) রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মিশনপাড়ার দিনেশ রাউতের মেয়ে তিনি। গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রংপুরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন তিনি। বান্ধবীর কাছে এক রাত থেকে পরের দিন আবার বাড়িতে ফিরে আসার কথা ছিল তাঁর। যাওয়ার আগে মোবাইলে মা সুমতিকে বলে যান, ‘মা রংপুর যাচ্ছি। চিন্তা করো না। কাল সকালে ফিরে আসব।’
রুখিয়া আর ফিরে আসেননি বাড়ি। তাঁর আগেই তাঁকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। গত মঙ্গলবার ভোরে রংপুরের বদরগঞ্জ-দিনাজপুরের ফুলবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে শালবাগানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের পরিচয় জানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি তদন্ত দল মৃতের হাতের আঙুলের ছাপ নেয়। জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবির সঙ্গে চেহারা মিলে যাওয়ায় পরিচয় নিশ্চিত হন তারা।
এদিকে গতকাল বুধবার মিশনপাড়ায় রুখিয়াদের বাড়ি গিয়ে জানা যায়, সোমবার বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে রুখিয়া তাঁর ডায়েরিতে লিখে গেছেন ‘আত্মহত্যা করতে গিয়ে কোনোভাবে বেঁচে গেলাম। আজ ৫-১০-২০২০ আমাকে আনিছুর দূরে কোথাও ডেকেছে। যেখানে ও নিজের হাতে আমাকে হত্যা করবে। এ কথা ও নিজে বলেছে যে ও আমাকে নিজের হাতে হত্যা করবে। আমার সব কিছুর জন্য আনিছুর দায়ী।’ গতকাল সকালে রুখিয়ার পড়ার টেবিল থেকে ডায়েরিটি উদ্ধার করে এসব তথ্য জানা গেছে।
রুখিয়ার বাবা দিনেশ রাউৎ কালের কণ্ঠকে জানান, একই এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে আনিছুর প্রায়ই রুখিয়াকে উত্ত্যক্ত করত। কলেজের হোস্টেল থেকে বাড়িতে এলে রুখিয়াকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত আনিছুর। একপর্যায়ে সে প্রেমের প্রস্তাব দেয় রুখিয়াকে। কিন্তু সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়।
হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আনিছুর রহমান (৩০), অটোচালক রাজ মিয়া (২৮) ও আশিকুজ্জামানকে (২৭) গতকাল বুধবার ভোরে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
বদরগঞ্জ উপজেলা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শ্যামল টুডু বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। না হলে আমরা বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলব।’
পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম জানান, নির্দয়ভাবে মেয়েটিকে হত্যার পর লাশ ফেলে যায় হত্যাকারীরা। এ ঘটনায় আনিছুরসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পার্বতীপুর থানার ওসি সোহেল রানা বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তিনজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আলামত হিসেবে বেশ কিছু জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। নিহতের মোবাইল ফোনটি পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেওয়ায় সেটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’