সুজন কৈরী : ভারতে নারী পাচারেকারী চক্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. শাহীন, মো. রফিকুল ইসলাম, বিপ্লব ঘোষ, আক্তারুল ও মো. বাবলু।
সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা নারীদের ভারতে ও মালয়েশিয়ায় চাকরি দেয়ার প্রলোভনে নিয়ে যেত। এরপর অসামাজিক ও অনৈতিক কাজের জন্য জোর করে ভারতে দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করতো।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার বলেন, গ্রেপ্তার শাহীন ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে নারীদের গাড়িতে করে ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতেন। মূলত তিনি গাড়ি চালক। যশোরের সীমান্ত এলাকায় পাচারের উদ্দ্যেশে থাকা চক্রের সদস্য রফিকুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে তার জিম্মায় রাখতো। এরপর রফিকুলের আরও এক সহযোগী বিপ্লব সেখান থেকে যশোর সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত পৌছে দিতো। সেখান থেকে নারীদের পাচারের জন্য নৌকায় করে পারাপার করার কাজ করতেন বাবলু।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এ পর্যন্ত চক্রটি অন্তত ২০ জন নারীকে ভারতে পাচার করেছে। তারা নারীদের মালয়েশিয়া ও ভারতে চাকরি দেয়ার কথা বলে যশোর সীমান্ত এলাকায় রফিকের বাসায় নিয়ে রাখতো। এরপর তারা ভারতে তাদের পাচার করতেন। ভারতের রাজকোট এলাকায় পাচার করা হতে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে, ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের চেতনানাশক ইনজেকশন দেয়া হতো। সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে যাওয়ার পর তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতো চক্রের সদস্যরা। হাসপাতালের রিপোর্টে ভুক্তভোগীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এর আগে এ চক্রের মূলহোতা জান্নাতুল ওরফে জেরিন ও মহসিনুজ্জামান ওরফে প্রতীক খন্দকার বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার বলেন, জেরিন ও মহসিনুজ্জামান ঢাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। নারীদের টার্গেট করে বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ভারতের দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করতেন। মানবপাচারের কথা স্বীকার করে চক্রের মূলহোতা জান্নাতুল ও প্রতীক আতালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের এ পর্যন্ত মোট ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্রটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবাইকে গ্রেপ্তার করে মূল উৎপাটন করা সম্ভব হয়েছে।