দীপক চৌধুরী: ‘ছেলেধরা’ গুজবকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছিল সরকার। যেনো হঠাৎ এটি বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছায়। এখন অবশ্য খানিকটা থেমেছে। আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতা-মন্ত্রী কখনো কখনো বলে থাকেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে চলছে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, জঙ্গি উত্থানে বিশ্বাস করে তারাই গুজব ছড়াচ্ছে।’ তবে সাধারণ মানুষ মনে করে গুজবের পাশাপাশি অভিযোগও রয়েছে। তরুণীকে তুলে নিয়ে এমসি কলেজ ( মুরারী চাঁদ কলেজ) ছাত্রাবাসে ‘ছাত্রলীগের কক্ষের’ সামনে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। এটি এমনই একটি অপরাধ যা নিষ্ঠুর সমাজের প্রতিচ্ছবি। তাই গণমুখী সরকারকে বলবো, গুজব ও অভিযোগকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিতে আনুন।
পেঁয়াজ, লবন, আদা, চাল নিয়ে নানা গুজব চলছে। লবনের গুজব রটেছিল। কেজি হয়েছিল একশ থেকে দেড়শ। সরকার কঠিন অ্যাকশনে যাওয়ায় সামাল দেওয়া গেছে। এখন আদা নিয়ে গুজব। বাজারে এর মূল্য খুচরা আড়াইশ থেকে পৌনে তিনশ টাকা কেজি। কিছুদিন আগে, এক উচ্চফোরাম থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, গুজবের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় একটি অশুভ মহল। এদের লক্ষ্য অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। এ কারণেই ‘পদ্মাসেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’ বলে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হয়েছিলো। তারপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং নিরীহ মানুষ হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। অতীতেও এই সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হয়েছিল বলে তারা অভিযোগ করেন। এখন উদ্বেগের খবর সিলেটে দলবদ্ধ ধর্ষণ নিয়ে। আমরা কোথায় বাস করছি। তরুণীকে তুলে নিয়ে এমসি কলেজ ( মুরারী চাঁদ কলেজ) ছাত্রাবাসে ‘ছাত্রলীগের কক্ষের’ সামনে গণধর্ষণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাতে এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে নিজেদের গাড়িতে বসে গল্প করছিলেন স্বামী-স্ত্রী। পাঁচজন যুবক তাদের গাড়িটি ঘিরে ধরে তাদের নামান। তিনজন যুবক তরুণীকে টেনে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে নিয়ে যান। স্বামীকে গাড়িতে আটকে রাখেন দুজন। ঘণ্টাখানেক পর স্ত্রীকে বিধ্বস্ত অবস্থায় পান স্বামী। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে। গা-শিউরে ওঠার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা। মামলা হয়েছে। ধর্ষণকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এটাকে তো গুজব বলা যায় না? অভিযোগ। এতোবড় দুঃসাহসের শেষ কোথায়? ছাত্রলীগ কেন এটা করলো? ওরা কী অনুপ্রবেশকারী না প্রকৃতই ছাত্রলীগ কর্মী? টানা সাড়ে এগারো বছর এ সরকার ক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক দেশ গড়ার স্বপ্নে একের এক পরিকল্পনা নিচ্ছেন, বাস্তবায়নও হচ্ছে। তাঁর নিদের্শে ও নের্তৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো কোনো খবর যে সাধারণ মানুষের জন্যই পীড়াদায়ক! এটা কী অস্বীকার করা যায়, বাংলাদেশ অনেক মাইলফলক স্পর্শ করেছে এই সাড়ে এগারো বছরে।
ছাত্রলীগের বিরাট ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু এখন সেই ঐতিহ্যকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা এটাই বা কে বলবে? ২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের জের ধরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছিল ছাত্রাবাসের ৪২টি কক্ষ। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর পুনর্নির্মিত ছাত্রাবাস উদ্বোধন করা হয়। এর পর থেকে ছাত্রলীগই এককভাবে ছাত্রাবাসে আবাসিক ছাত্রদের বসবাস নিয়ন্ত্রণ করছে। যদিও এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। গণমাধ্যমে ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের কক্ষের সামনে ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য চোখে পড়েনি।
সামাজিক যোগাযোগে গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে কতগুলো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। যেসব গুজবের কোনো ভিত্তি নেই সেসবের গুজব চলছেই। বাজার থেকে পেঁয়াজ ‘হাওয়া’ করার জন্য গুজব ছড়িয়ে নাকি ৪২৮ কোটি টাকা সিন্ডিকেট পাঁচদিনে তুলে নিয়েছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করায় এখন সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সাঈদী। অথচ তার মুখ চাঁদে দেখা গেছে এই গুজব ছড়িয়ে নিরীহ পুলিশ ও মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। সারাদেশে আতঙ্ক ছড়ানো হয়ছিল।
২০১৩-এর এপ্রিল। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুরে আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা এবং শতাধিক ব্যক্তিকে আহত করা হয়। মসজিদের মাইকে গুজব ছড়িয়ে জামায়াত-শিবির এ তাণ্ডব ঘটায়। মিছিলের বহরে থাকা দেড় শতাধিক মোটরসাইকেল, পাঁচটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার, তিনটি পিকআপ, চারটি চাঁদের গাড়ি এবং ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এক বছর পরে চার্জশীটে বলা হয় গুজবের কথা। সুতরাং শেখ হাসিনার সরকারকে কীভাবে বিতর্কিত করা যায়, ইমেজ নষ্ট করা যায় এজন্য দেশের ভিতরে-বাইরে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এটাও সত্য, বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বিপদে ফেলতে কেউ কেউ দলে অনুপ্রবেশ করে নানান অপকর্ম ঘটাচ্ছে। সুতরাং সাধু সাবধান।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক