মো. বশির উদ্দিন: [২] বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক এমপি বলেছেন জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটকল নিয়ে তার দেওয়া সকল ওয়াদা রক্ষা করবেন। মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ডেমরায় রাষ্ট্রায়ত্ব করিম জুট মিলে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) আয়োজিত বিজেএমসি’র বন্ধ ঘোষিত মিলসমূহের অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধাসহ) শ্রমিকদের চূড়ান্ত পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
[৩] এ সময় ৩০ জন পাটকল শ্রমিকের মাঝে তাদের অর্ধেক পাওনা বাবদ চেক প্রদান করে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান,এমপি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে.এম আব্দুস সালাম ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (এফবিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
[৪] বিজেএমসি’র বন্ধ ঘোষিত মিলসমূহের অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত (গোল্ডেন হ্যান্ডসেক সুবিধাসহ) শ্রমিকদের চূড়ান্ত পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম অনুষ্ঠানে বলা হয় - বিজেএমসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫ টি চালু পাটকলে কর্মরত সকল স্থায়ী শ্রমিকের গ্রাচ্যুয়িটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়নসহ গোলেন্ডন হ্যান্ডশেক সুবিধার মাধ্যমে চাকুরি অবসায়ন পূর্বক উৎপাদন কার্যক্রম গত ১ জুলাই বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
[৫] বন্ধ ঘোষিত ওই ২৫ টি পাটকলের ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা বাবদ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা, ২০১৩ সালের পর হতে অবসরপ্রাপ্ত ১০ হাজার ১০৭ জন শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়ন পাওনা ১ হাজার কোটি টাকা পাওনাসহ মোট প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে ৩ টি অর্থবছরে পরিশোধের প্রস্তাব করা হলেও প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের আর্থিক দুরাবস্থা সহানুভুতির সাথে বিবেচনা করে সব পাওনা চলতি অর্থবছরে এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত প্রদান করেন।
[৬] এছাড়া শ্রমিকদের ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকের পাওনার ৫০ শতাংশ নগদে ও অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ তিন মাস অন্তর অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করার নির্দেশনাও প্রদান করেন।
[৭] শ্রম আইন ২০০৬ এর বিধান অনুযায়ী ৬০ দিনের নোটিপশের পরিবর্তে কাজ করা ছাড়াই শ্রমিকদের এ বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসের মজুরী ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা এককালীন পরিশোধের লক্ষ্যে যাবতীয় পাওনাদির হিসাব নিরীক্ষাপূর্বক চুরান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
[৮] অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নিরীক্ষান্তে করিম জুট মিলের পূর্বে অবসর গ্রহনকারী ও সম্প্রতি অবসানকৃত শ্রমিকদের যাবতীয় পাওনা বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ ইতিমধ্যে ছাড় করেছে। তা হতে মঙ্গলবার ওই মিলের সকল শ্রমিকের পাওনার ৫০ শতাংশ নগদে (ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে) পরিশোধ করা হচ্ছে, বাকি ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধের প্রক্রিয়া চলমান আছে।
[৯] উদ্বোধন কার্যক্রমের মাধ্যমে ৩০ জনের সঞ্চয়পত্র তাদের হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ পক্রিয়া শুরু হলো। করিম জুট মিলের অবসানকৃত ১ হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকের পাওনা ১৯২ কোটি টাকা, অবসরপ্রাপ্ত ৬১২ জন শ্রমিকেরে বকেয়া পাওনা ৩৪.৩৭ কোটি টাকা, বদলী ২৬২৫ জন শ্রমিকদের পাওনা ২৫.২১ কোটি টাকাসহ মোট ২৫১.৫৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় নিরীক্ষান্তে একইভাবে বাকি পাটকলগুলোর শ্রমিকের পাওনাও দ্রুত পরিশোধ করা হবে।
[১০] প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বিজেএমসি’র অর্থায়নে বিভিন্ন মিল এলাকায় বর্তমানে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দু’টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৯ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে বিদ্যালয়গুলো ক্ষেত্রমতে সরকারিকরণ ও এমপিওভুক্তির মাধ্যমে পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।
[১১] বন্ধ ঘোষিত পাটকল সমূহের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি সার্বিকভাবে পাটখাতকে পুনরুজ্জীবিত এবং মিলগুলোকে উপযুক্ত মডেলে আধুনিকায়ন ও পুন:চালু করার লক্ষ্যে মিল ও বিজেএমসি’র অন্যান্য সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহার বিষয়ে অনুসরণীয় কর্মপন্থা এবং কর্মকৌশল নিধারণ, বিজেএমসি’র সাংগঠনিক কাঠামো পূনর্গঠনসহ প্রয়োজনীয় জনবলের যৌক্তিকীকরণ বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করে সরকার কর্তৃক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আশাবাদি যে, ওই দু’টি কমিটির সুপারিশের আলোকে বন্ধ ঘোষিত মিলগুলো নতুন আঙ্গিকে পুণরায় চালু হবে। আর পুন:চালুকৃত মিলের পূর্বের অভিজ্ঞ শ্রমিকগণ পুন:কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। সম্পাদনা: সাদেক আলী