শিরোনাম
◈ ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে আপত্তি মোদি সরকারের! ◈ উনি ক্লাসে বাজে ঈঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার পাশাপাশি বডি শেমিং করেন ◈ এবার নিউ ইয়র্ক মেয়রপ্রার্থী মামদানিকে গ্রেপ্তারের হুমকি ট্রাম্পের!, তীব্র প্রতিক্রিয়া ◈ বউ পেটানোয় শীর্ষে খুলনা ও বরিশালের মানুষ: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (ভিডিও) ◈ ক‌ষ্টের জ‌য়ে ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনা‌লে রিয়াল মা‌দ্রিদ ◈ দুপু‌রে এ‌শিয়ান কাপ বাছাই‌য়ে স্বাগ‌তিক মিয়ানমা‌রের বিরু‌দ্ধে লড়‌বে বাংলাদেশ নারী দল ◈ প্রথম ওয়ান‌ডে ম‌্যা‌চে মুশফিক-রিয়াদের জায়গায় খেলবেন লিটন দাস ও মিরাজ ◈ জুলাই অভ্যুত্থানের সেই ঐক্য কোথায়? ◈ ব্রিটিশদের ‘নাকানিচুবানি’ দিতে ইরানের এক দশকের ‘ছায়া যুদ্ধ’: যেভাবে চলছে যুক্তরাজ্যের ভেতরে গোপন তৎপরতা ◈ চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত, আরও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

প্রকাশিত : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৪:৫১ সকাল
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৪:৫১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] বাংলাদেশে কোভিড প্যান্ডেমিক থেকে এন্ডেমিক হয়ে যেতে পারে : ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

ভূঁইয়া আশিক : [২] অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান। কোভিড নিয়ে নিয়মিত কথা বলেন টিভি টকশো ও অনলাইন মাধ্যমে।

[৩] কোভিডকালের ৬ মাস শেষে কেমন আছে বাংলাদেশ? করোনার প্রথম ওয়েভ কি শেষের পথে, দ্বিতীয় ওয়েভের আশঙ্কা আছে কি? করোনার ভ্যাকসিন ক‚টনীতিতে কি আমরা সঠিক পথে আছি? ...সবকিছু নিয়েই কথা বলেছেন আমাদের নতুন সময়রে সঙ্গেও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভূঁইয়া আশিক রহমান।

[৪] বাংলাদেশে কোভিড পরিস্থিতি এখন কেমন? সংক্রমণ ক্রমহ্রাসমান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথম ওয়েভ কি তাহলে শেষের দিকে?

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : গত কিছুদিন যাবৎ বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ক্রমহ্রাসমান। কেন কমছে সংক্রমণ? আমরা সতর্ক, সচেতন হয়েছি বলে? সম্ভবত না, কারণ সচেতনতার জায়গাটাতে আমাদের ঘাটতিটা স্পষ্ট। এর একটা কারণ হতে পারে যে, করোনা ভাইরাসটি যথেষ্ট আনস্ট্যাবল একটি ভাইরাস। পাকিস্তানের কথাই ধরুন, ওদের উদ্যোগগুলোতো আমাদের তুলনায় কিছুই না। ওখানকার মানুষও আমাদের দেশের চেয়ে অনেক কম সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছে। কিন্তু সেখানে হঠাৎ করেই সংক্রমণ কমে গেছে। তবে এই খানিকটা কমে যাওয়া নিয়ে খুব বেশি আশান্বিত হওয়া ঠিক হবে না। আমাদের জানতে হবে, কেন সংক্রমণ কমছে। হয়তো সংক্রমণ গতি কম। কিন্তু আমরা যদি অনেক বেশি টেস্ট করতে পারতাম, তাহলে সঠিক একটা চিত্র পেতাম। এখন কিছুটা সংক্রমণ কমলেও তা এখনো স্বস্তি জাগানিয়া নয়। সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে থাকলে বলা যাবে, করোনা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। ১০ শতাংশ হলে সেটা আশঙ্কাজনক। আমরা এখনো আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির মধ্যেই আছি।

[৫] আমাদের দেশে কি সেকেন্ড ওয়েভের আশঙ্কা আছে?
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : ফার্স্ট ওয়েভ, সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে ধারণা করার মতো পর্যায়ে সম্ভবত বাংলাদেশ-ভারত নেই। ফার্স্ট ওয়েভ, সেকেন্ড ওয়েভ মানেটা কী? করোনা ইনফেকশন একসময় নেমে আসবে, তারপর আবার একসময় ইনফেকশন বাড়বে, যেটা পাশ্চত্যের দেশগুলোতে দেখা গেছে। তারা প্রথমে কোভিড নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলো, এখন সেখানে আবারও সংক্রমণ বাড়ছে। আমরা দিনে ১৫-২০ হাজার পরীক্ষা করছি আর ভারত করছে দিনে লাখ খানেক পরীক্ষা। ভারতের হয়তো উচিত ছিল দিনে ১০ লাখ পরীক্ষা করা আর আমাদের হয়তো দরকার ছিলো ১ লাখ। কথার কথা বলছি। তবে বাস্তবতা হচ্ছে সেটা আমরা করতে পারিনি। তবে প্রতিদিন লাখ-লাখ পরীক্ষা করাটা কতোটুকু সম্ভব সেটাও ভেবে দেখতে হবে। দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি একটা ব্যাপার, তার উপর একেকটি পরীক্ষা করতে যেখানে সরকারকে সম্ভবত দু’হাজার টাকারও বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, সেখানে প্রতিদিন এতো টাকা শুধু পরীক্ষা করানোয় ভর্তুকি দিতে হলে দেশের আর বাদবাকি সব কাজ কীভাবে চলবে, সেটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন।
করোনার এখনকার গতিপ্রকৃতি কিছুটা আশাব্যঞ্জক হলেও আশঙ্কার জায়গা হচ্ছে এই যে, রোগটি প্যান্ডেমিক থেকে এন্ডেমিক হয়ে যেতে পারে। এন্ডেমিক মানে কী? করোনা একটা রোগ হিসেবে রয়ে যাবে পৃথিবীতে। ভবিষ্যতে যখন আমরা ডাক্তারি করবো তখন জ¦রের রোগী আসলে অন্য সব কারণের সঙ্গে হয়তো কোভিডও খুঁজবো। এর মধ্যে হয়তো একটা ভ্যাকসিন চলে আসবে, আমরা আরেকটু সচেতন হবো, হয়তো যেভাবে সংক্রমণ চলছে তা আরও কমবে। হয়তো আরও কম মানুষ মারা যাবেন। কিন্তু রোগটা আমাদের মধ্যে থেকেই যাবে। আমরা যেভাবে অসচেতনতা দেখাচ্ছি, তাতে এই আশঙ্কাটা বাড়ছে।

[৬] সরকারের হার্ড ইমিউনিটির কৌশল কি কাজে দিলো?
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : সরকার হার্ড ইমিউনিটি বাস্তবায়নের কৌশল নিয়েছে, এমনটা কিন্তু কখনো বলেনি। হার্ড ইমিউনিটি যে তৈরি হবেই তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে এইচআইভি ভাইরাস। আফ্রিকায় কখনোই এইচআইভির বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউিনিটি তৈরি হয়নি। সার্স-কোভ-২-এর বিরুদ্ধে যে হার্ড ইমিউনিটি হবে সেটাও প্রমাণিত নয়। আর হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হলেও তা কতোদিন স্থায়ী হবে, তা কেউ বলতে পারবে না।

[৭] মৃত্যুহার প্রায় একটা জায়গায় স্ট্যাবল দীর্ঘদিন ধরে। বাড়ছে না, উল্লেখযোগ্যভাবে কমছেও না। আপনার ব্যাখ্যা কী?
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : মার্চ-এপ্রিলে আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে করোনায় বাংলাদেশে ২০ না ৩০ লাখ মানুষ মারা যাবেÑ এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। বলা হয়েছে ভেন্টিলেটার আর হাসপাতাল বেডের অভাবে মানুষ রাস্তায় মরে পড়ে থাকবে। করোনাকালের ৬ মাসে এমন পরিস্থিতি কি বাংলাদেশে ঘটেছে? না। এটা ঠিক কিছু মানুষ চিকিৎসার বাইরে থেকেছেন, কিছু মানুষ হয়তো মারা গেছেন, যারা সরকারি হিসেবে আসছেন নাÑ কিন্তু কোভিডের যে মৃত্যুর মিছিল একসময় আমরা দেশে-দেশে দেখেছি, তেমন কিছুর ধারে-কাছেও যে এদেশে ঘটছে না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারি। আমরা ইতালি, নিউইয়র্কে দেখেছি লাশের জট, দেখেছি খুড়তে হয়েছে গণকবর। বাংলাদেশে এমন কিছু ঘটলে তা বিকাশমান গণমাধ্যমের এই সক্রিয়তার যুগে কখনোই লুকিয়ে রাখা যেতো না।
মোটা দাগে কোভিডে প্রতিদিন আমাদের এখানে মৃত্যু ২০-৪০-এর মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে। মৃত্যুটা যে আকাশ ছুঁইছে না তার কতোগুলো কারণ আছে। এদেশে ভাইরাসের মিউটেশন হয়েছে, আমাদের সচেতনতা বেড়েছে কী বাড়েনি, এসব নিয়ে যেমন আলোচনা হতে পারে, তেমনি এসবের বাইরেও অনেক ফ্যাক্টর আছে, যা বিবেচনায় আনতে হবে। এখানে আসলে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত চিকিৎসকদের। মানুষ আগে অসুস্থ হলে হাসপাতালে ছুটতেন, এখন তারা ফোনে চিকিৎসককে খোঁজেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে পরিচিত কোনো চিকিৎসক আছে কিনা খোঁজেন। চিকিৎসকেরা টেলিফোনে কিংবা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বহু রোগী ম্যানেজ করছেন। অনেক রোগী এখন বাসায় বসে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হচ্ছেন।

[৮] আমাদের দেশে কোভিড ইতালি থেকে এসেছে। যদি সরাসরি চীন থেকে আসতো, কেমন প্রভাব পড়তো জনজীবনে?
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : ইতালি না হয়ে সরাসরি যদি চীন থেকে কোভিড আমাদের দেশে আসতো, তাহলে এখানে হয়তো অসংখ্য মানুষ মারা যেতে পারতো। কোভিড আসার আগে আমরা ৩-টা মাস সময় পেয়েছি, আমাদের হয়তো অন্য প্রস্তুতিগুলোতে ঘাটতি ছিলো, কিন্তু আজকের এই মুক্ত তথ্য প্রবাহের যুগে কোভিড রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে আপডেটগুলো জানায় এদেশের চিকিৎসকদের কোনো ঘাটতি ছিলো না। ভেন্টিলেটরে নয়, মানুষ বাঁচে হাইফ্লো-ন্যাজাল ক্যানুলায়, স্টেরয়েড আর এন্টিবায়োটিকের জুডিশিয়াস ব্যবহারে আর সময়মতো রক্ত তরল করার ওষুধ প্রয়োগে। এই তথ্যগুলো ইতালি, ইংল্যান্ড কিংবা আমেরিকার চিকিৎসকেরা সেসব দেশে কোভিডের শুরুতে জানতেন না, যেটা আমাদের চিকিৎসকরা এদেশে কোভিড আসার আগেই জানতে পেরেছেন।
[১১] কোভিড পজেটিভ রোগীর ওপর উকুন কিংবা খোস-পাঁচড়ার ব্যবহৃত ওষুধ আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগ আর দেশে এন্টিবায়োটিকের অপব্যহারের কথা আমরা জানি। করোনা চিকিৎসায়ও তা ব্যবহার হয়েছে। এরকম আরও অনেক এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়েছে। কোনোভাবে কি এসব এন্টিবায়োটিক ‘সাপে বর’ হলো?
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : আমার কাছে কেন জানি মনে হয়, এন্টিবায়োটিকের উদার ব্যবহার বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচিয়েছে। কারণ সেকেন্ডারি ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন এই রোগে মৃত্যুর বড় কারণ। যখন সেপ্টিসেমিয়া দেখা দেয় তখন ইনফেকশন থেকে মানুষকে বাঁচানো খুব মুশকিল হয়ে পড়ে। এখানে আগে-ভাগে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে ইনফেকশনে মানুষ হয়তো মারা যাচ্ছেন কম। করোনায় রক্ত জমাট বেধেও অনেক মানুষ মারা যান। আমরা ইনজেকশন ও ট্যাবলেট ব্যবহার করে রক্ত জমাট বাধা ম্যানেজ করতে পেরেছি। আমরা ভেন্টিলেটরের উপর নির্ভরতা কমিয়ে, হাইফ্লো-ন্যাজাল ক্যানুলাকে আস্থায় রেখেছি। ফলে এদেশে মানুষের মৃত্যুর হার অনেক কম।

[৯] করোনার ৬ মাস পার করেছি আমরা। এই সময়ে আমাদের ভুল কিংবা সঠিক সিদ্ধান্ত কী ছিলো?
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : করোনাকালে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের চেয়ে অন্যান্য খাতে সাফল্য অনেক বেশি। গত বছর জুন-জুলাই মাসে আমাদের যে রপ্তানি ছিলো, এ বছর একই সময় তার চেয়ে তা দুই শতাংশ বেড়েছে। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশের প্রবৃদ্ধি যখন ঋণাত্মক, তখন আমরা ৮ শতাংশ ছুঁতে না পারলেও ৫ শতাংশ ছুঁয়েছি। এখন বিতর্ক হচ্ছে এই প্রবৃদ্ধি ৫, শতাংশ নাকি ৪? কেউ কিন্তু বলতে পারছেন না যে প্রবৃদ্ধি মাইনাসে চলে গেছে। বলা হচ্ছিলো ১ কোটি প্রবাসী দেশে ফিরে আসবেন, কিন্তু বাস্তবে ১ লাখও ফেরেননি। দেশ ৩ মাসেরও বেশি কার্যত লকডাউনে ছিলো, এর মধ্যে আম্পান এসেছিলো, এসেছিলো শতাব্দীর অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। সেসব সত্তে¡ও দেশে কোনো মানুষ না খেয়ে মারা যাননি।
আমাদের ব্যর্থতা শুরুতে আমরা দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নিতে পারিনি। বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা সমাজে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছিলেন। মাস্ক, পিপিই, পিসিআর এসব নিয়েও আমরা দুর্নীতি দেখেছি। একসময় নন-কোভিড রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা পেতেও অনেক সমস্যা হযেছে। আমরা এখন সেই জায়গা থেকে অনেকটাই সরে এসেছি। প্রশ্ন হচ্ছে এতে কি আমরা সন্তুষ্ট হয়ে যাবো? না। আমাদের এখনো খুব বেশি সন্তুষ্ট হওয়ার জায়গা নেই। সাফল্যগুলোকে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে আর ব্যর্থতাগুলো থেকে শিখতে হবে।

[১০] সামনে আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো কী?
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ভ্যাকসিন সংগ্রহ। আমাদের কোনো একটা বিশেষ ভ্যাকসিনের উপর নির্ভর করাটা ঠিক হবে না। আমাদের এখনই কার্যকর পলিসি নির্ধারণ করতে হবে ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য। ভ্যাকসিন এলে তখন পলিসি নির্ধারণ করবো, এই চিন্তা করে যদি বসে থাকি, তাহলে ডিজাস্টার হতে পারে।

[১১] ভ্যাকসিন ক‚টনীতিটা বাংলাদেশ ঠিকঠাক মতো করতে পারছে বলে মনে হয় কি আপনার?
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : ভ্যাকসিন তৈরিতে এখন এগিয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, রাশিয়া ও চীন। কোটি-কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ব্যবহার হবে দুনিয়াব্যাপী। আমাদেরও দরকার পড়বে অনেক কোটি ডোজের। কাজেই আমাদের অনেকগুলো সোর্সের উপর নির্ভর করতে হবে।
পাশাপাশি মনে রাখতে হবে একটি ট্রায়ালেই একটা ভ্যাকসিনের সেফটি এস্টাবিøস্ট হয় না। একটা ভ্যাকসিন বছরের পর বছর মাঠে থাকার পর প্র্রমাণিত হতে পারে সেটি নিরাপদ কী, নিরাপদ নয়। ভ্যাকসিন আনায় আমাদের শুধু ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বেইজড হলে হবে না। কারণ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করে-করে কখনোই শেষ করা যাবে না। করোনা ভাইরাসের মিউটেশন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে দেশে ভ্যাকসিন আনতে আনতে নতুন ভ্যাকসিনের প্রয়োজন পড়তে পারে। প্রতি বছর আমরা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে পারবো না। ফলে আমাদের এমন সব সোর্সের উপর নির্ভর করতে হবে, যাদের ভ্যাকসিন উৎপাদনে প্রমাণিত সক্ষমতা আছে।
পাশাপাশি এমন সব দেশ থেকে আমাদের ভ্যাকসিন আনাকে প্রাধান্য দিতে হবে যাদের সাথে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে, যারা আজ ভ্যাকসিন দিয়ে আগামী বছর বলবে না যে, ওমুকটা করো, তমুকটা করো। ফলে ঐতিহাসিক সম্পর্কের জায়গাটাও মাথায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া একটা কার্যকর সোর্স হতে পারে। কারণ বিশে^র ৬০ শতাংশ ভ্যাকসিনের উৎপাদনকারী তারা। ৩০ কোটি ডোজ অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন তৈরির অর্ডার পেয়ে গেছে সিরাম ইনস্টিটিউট। রাশিয়ার সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। কথা বলতে হবে। রাশিয়া উদ্ভাবনী একটি দেশ। এ বিষয়ে তাদের ইতিহাস সমৃদ্ধ। একইসঙ্গে সবগুলো ডোর ওপেন রাখতে হবে।

[১২] অক্সফোর্ডের তৃতীয় ট্রায়ালে একজন অসুস্থ হওয়ায় ট্রায়াল কার্যক্রম স্থগিত করেছে। ভ্যাকসিন উৎপাদনের পথে বড় হোঁচট খেলো বিশ^?
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : অক্সফোর্ড আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নিয়ম-কানুন মেনে এগোচ্ছে বলে এই দুর্বলতাটি ধরা পড়েছে। এটাকে হোঁচট খাওয়া বলা যাবে না। এটা বিজ্ঞানের প্রপার জায়গা। চীন-রাশিয়া যে ফেজ-৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন না করেই সাধারণ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, আমি সেটাও অন্যায় মনে করি না। কোভিড পরিস্থিতিতে কিছুটা উদার হতে হবে আমাদের। অক্সফোর্ড যেটা করেছে সেটা যেমন ঠিক আছে, তেমনি রাশিয়া যা করছে সেটাও হয়তো বেঠিক নয়। রাশিয়া যদি মনে করে তাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চমানের বিশেষজ্ঞ আছেন, যারা ভুল করবে না বলে তারা আত্মবিশ^াসী, তাহলে তারা ভ্যাকসিন বাজারে ছেড়ে ভালো করেছে। অন্যদিকে অক্সফোর্ড যদি মনে করে যে তাদের শত বছরে ঐতিহ্য আছে, তা ধরে রাখতে হবে, তারাও সঠিক কাজটিই করছে।

[১৩] সরকার অক্টোবরেই স্কুল-কলেজ খুলে দেবেÑ এমনটি শোনা যাচ্ছে। এখনই স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া কি উচিত হবে?
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : এখনই স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি খুলে দেওয়া ঠিক হবে না। পৃথিবীর যেখানেই স্কুল-কলেজ খুলেছে সেখানেই কোভিড বেড়েছে। এক বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখলে এমন কোনো ক্ষতি হবে না যে, যা বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এক বছরেরও বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে একটা স্কুল-কলেজও আস্ত ছিল না। সেই বাংলাদেশ যদি একটা সময় শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়েও থাকে, তবে তা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐের পর রাষ্ট্র ক্ষমতা পাকিস্তানপন্থীদের হাতে চলে যাওয়ায়। এখন স্কুল-কলেজে বাচ্চাদের পাঠিয়ে, কোভিড বাড়িয়ে দিয়ে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার চিন্তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।

[১৪] করোনাকালে অনেক হতাশার গল্প আছে। আশান্বিত হওয়ার মতো কি কিছু আছে?
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এটা পজেটিভ দিক। করোনাকে আমরা নিশ্চয়ই জয় করতে পারবো। ইতোমধ্যে আমাদের চিকিৎসকেরাও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। মাঝে বয়োজ্যোষ্ঠ বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসাসেবা থেকে দূরে ছিলেন, এখন তারা প্র্যাক্টিসে ফিরতে শুরু করেছেন। আমাদের অর্থনীতি আবারও সচল হচ্ছে। উন্নয়ন কমকাÐ চলছে। খুব বেশিদিন হয়তো লাগবে না আমাদের করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। আমরা বাঙালি, ঘোর বিপদে ঘুরে দাঁড়ানোর সমৃদ্ধ ইতিহাস আমাদের আছে। আমরা ঘুরে দাঁড়াবোই। এ নিয়ে আমার অন্তত কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের মানুষের সাহসিকতাই আমাকে এই সাহসী উচ্চারণে উৎসাহ যোগাচ্ছে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়