মনিরুল ইসলাম: [২] 'সংসদ সদস্যরা স্কুল- কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি থাকতে বা হতে পারবেন না ' হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীপ করা হবে বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি।
[৩] শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যরা স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডিতে সভাপতি থাকতে পারবেন না হাইকোর্ট থেকে রায় আসার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে কোন প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়নি। এটি জারি করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
[৪] ডাঃ দীপু মনি বলেন, আমরা আপীলের বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছি।
[৫] গত বৃহস্পতিবার ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও মো হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাবে সংসদে উচ্চ আদালতে আপীল করার বিষয়টি জানান।
[৬] সুনামগঞ্জ -৪ আসনের সংসদ সদস্য হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২০ এর ওপর তার আনীত জনমত যাচাই ও বাছাই প্রস্তাবের বক্তব্যে বলেন, হাইকোর্টের একটি রায়ের মাধ্যমে স্কুল -কলেজ পরিচালনায় গভর্নিং বডিতে সভাপতি পদে সংসদ সদস্যরা থাকতে পারবেন না। তারা এখন আর থাকতে পারছেন না। এ রায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর করেছে।
[৭] তিনি বলেন, এই রায়ের ফলে সংসদ সদস্যদের অসন্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি ও আইনমন্ত্রী মিলে বসে একটি ব্যবস্থা নিন। যাতে সংসদ সদস্যরা তাদের সন্মান ফিরে পান।
[৮] একই কথা বলেন গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, উচ্চ আদালত থেকে রায় ঘোষণার ১০দিনের মধ্যে এই রায় কার্যকর করা হলো। অথচ ৬০ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। তিনিও শিক্ষামন্ত্রীকে বিষয় দেখার অনুরোধ জানান।
[৯] বিএনপির মো হারুনুর রশীদও শামীম হায়দার পাটোয়ারীর বক্তব্য সমর্থন করেন।
[১০] উল্লেখ্য, স্কুল কলেজ ও কোনো ডিগ্রি কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি পদে সংসদ সদস্যদের (এমপি) মনোনয়ন বা নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ বা মনোনয়ন সংবিধানের মূল উদ্দেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
[১১] রায় প্রদানকারী বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের স্বাক্ষরের পর এ রায় প্রকাশ করা হয়।
গত ১৬ জুলাই সকালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুমায়ন কবির রায় প্রকাশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, একজন সংসদ সদস্যকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। অপরদিকে গভর্নিংবডি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পদমর্যাদা সংসদ সদস্যের নিচের পদমর্যাদার। সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য যদি গভর্নিংবডির সভাপতি হন তাহলে কার্যত ওই গভর্নিংবডি একটি ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে বাধ্য।
[১২] রায়ে আরও বলা হয়, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের এ সংক্রান্ত আগের রায় পর্যালোচনা করে এটা কাঁচের মতো স্পষ্ট যে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ বা মনোনয়ন সংবিধানের মূল উদ্দেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে সংসদ সদস্যদের অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
[১৩] মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দারকে সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার আতরজান মহিলা কলেজের সভাপতি পদে মনোয়নন দেন। ওই মনোনয়নের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এস এম আফজালুল হক।