জুয়েল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : [২] বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে যে ক’জন বীরাঙ্গনার সম্ভ্রমহানির ইতিহাস জড়িয়ে আছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম তিনি। তিনি তাঁর সর্বস্ব দিয়ে বাংলাদেশটা আমাদের উপহার দিয়েছেন। এই দেশের জন্য তিনি তাঁর সম্ভ্রম উৎসর্গ করেছেন, উৎসর্গ করেছেন জীবনের অনেক খ্যাতিময় অর্জন। তাঁর ত্যাগের পিছনে লুকিয়ে আছে অনেক অজানা গল্প, অনেক অজানা সত্য।
[৩] আজ বৃহস্পতিবার সেই একাত্তরের জননী ও বিশিষ্ট লেখিকা রমা চৌধুরীর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর)। ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
[৪] যে জাতীয় পতাকা আজকে আমাদের কাছে পরম শ্রদ্ধার, যা নিয়ে আমাদের গর্ব সেই জাতীয় পতাকার মাঝে অন্তর্নিহিত হয়ে আছে তাঁর গল্প। ১০:৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের আয়তক্ষেত্রাকার গাঢ় সবুজ এবং মাঝখানে লাল বৃত্তের জাতীয় পতাকার মধ্যে লুকিয়ে রমা চৌধুরী, তারামন বিবি, জয়ন্তী বালা দেবী, আছিয়া বেগম সহ অসংখ্য বীরাঙ্গনাদের গল্প, যাঁরা নিজেদের সবচেয়ে পবিত্র সম্পদটুকু দেশের জন্যে উৎসর্গ করেছেন। বলছিলাম রমা চৌধুরীর কথা, যিনি নিজেই একজন আদর্শ ও অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে স্বীয় আমাদের কাছে।
[৫] রমা চৌধুরী ১৯৪১ সালের ১৪ অক্টোবর পোপাদিয়া ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করার পর শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু হয় তাঁর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চার সন্তানের মা রমা চৌধুরী পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হন। তাঁর বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
[৬] দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বেঁচে থাকার সংগ্রামে রমা চৌধুরী বেছে নেন লেখালেখি পেশাকে। লিখেছেন ‘একাত্তরের জননী’, ‘এক হাজার এক দিনযাপনের পদ্য’ এবং ‘ভাব বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথ’সহ ১৮টি বই। এসব বই বিক্রি করে চলতো তাঁর সংসার।
[৭] রমা চৌধুরীর সার্বক্ষণিক সঙ্গী আলাউদ্দিন খোকন গণমাধ্যমকে জানান, যে পতাকাকে ভালোবেসে জীবন বিলিয়ে দিলেন, সেই পতাকাই হয়েছিল শেষ যাত্রার সঙ্গী। দিদি বলেছিলেন ১৬০ বছর বাঁচবেন। তবে কেন চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে?