সাদিয়া নাসরিন: কী ভয়ংকর অপমানজনক নির্বাসন যার সারা গায়ে লেপে দেওয়া হয়েছে ‘আহা উহু’। আমার কাছে কিন্তু বাচ্চাদের বোর্ডিং স্কুলে পাঠানোর মতোই স্বাস্থ্যসম্মত বাস্তবতা মনে হয় এটি। বোর্ড স্কুলে যেমন বাচ্চারা নিজেদের কমিউনিটি ডেভেলপ করে ফেলে, সিনিয়র সিটিজেনরাও সেটা স্বসম্মানেই করতে পারেন। আমার এই জীবনে শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কিছুই উদযাপন হয়নি। তারুণ্যের শুরুতেই বিয়ে নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ঢুকে গেছি। যৌবনের পুরোটাই সন্তান উৎপাদন, লালন পালন, জীবিকা এবং প্রতিষ্ঠার পেছনে ছোটা। এখনো চলছেই ছুটোছুটি।
তাই সব সময়ই মনে হয়েছে, পঞ্চাশ পরবর্তী সময়টা পর্যন্ত বেঁচে থাকলে খুব উদযাপন করবো। নিজের মতো করে প্রকৃতির সাথে যাবো। বাচ্চা-কাচ্চার সমস্যা আর ‘সঙসার’ নামক কয়েদখানা থেকে মুক্তি নিয়ে, বরং অনেকটুকু সবুজের মাঝে একটা ছোট্ট কজি ঘর, কিছু বই, লেখার টেবিল, বারান্দা, ভোরের শিশির, টিনের চালের ঝুম বৃষ্টির শব্দ আর হলুদ চাঁদ। নাটক, বাউল, কীর্তন আর সমমনা বন্ধুদের (যদি এই পৃথিবীতে তাদের দেখা মেলে আর কী) নিয়ে ভীষণ সুন্দর একটা নিজস্ব যাপন করতে চাই। আমার পরিকল্পনা আছে এমন একটি কমিউনিটি ডেভেলপ করার, যারা আমার মতো নিজস্ব যাপনে স্ব-ইচ্ছায় চলে আসতে চান তাদের স্বাগত। তবে কোনো এনজিও মার্কা দাতব্য প্রকল্প হবে না এটি। বরং আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান ও মানসিকভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য পুরোপুরি কমার্শিয়াল প্রজেক্ট।
ছোট্ট গ্রামের মতো করে একটা এলাকাকে ডেভেলপই করা হবে এই মানুষগুলোর চাহিদা ও মননকে মাথায় রেখে। এর মধ্যে অনেক ছোট ছোট কটেজ করা থাকবে। সামর্থ্য অনুযায়ী যে যার কটেজটি কিনে নেবেন। সবুজটুকু সবার থাকবে কিন্তু ঘর যার, ঘরের সাঁঝ বাতিটাও তার। সবাই যে যার মতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। কিন্তু যেদিন বাউল গানের আসর বসবে সেদিন সবাইকেই থাকতে হবে। কেউ কাউকে ‘সেবা’ দেবে না এখানে। এই গ্রামের বাসিন্দারা সবাই মিলেই যাবতীয় সুবিধাকে এভেইলেবল করবে। খাওয়া-দাওয়া ইন্ডিভিজুয়াল হতে পারে আবার কলেক্টিভও। ইট উইল ডিপেন্ডস। তবে রান্নার লোক থাকবে। ফিজিশিয়ান থাকবে, মেন্টাল হেলথ প্রফেশনাল থাকবে। উপাসনার জায়গা, ফিটনেস সেন্টার, মিউজিক সেন্টার, হোম থিয়েটার থাকবে। অ্যান্ড আয়্যাম ভেরি সিরিয়াস। আমি যাবো, যাবোই। হয়তো আপনাদের অনেকেরই সাথে সেই স্বপ্নের উঠোনে দেখা হয়ে যাবে। ফেসবুক থেকে