জাকির তালুকদার: অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে এখন আপনার, আমার, আমাদের সকলের করোনায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি অনেক বেশি। এখন দেশের কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত ঘরে ঘরে করোনাবাহী মানুষের অবস্থান। সরকারকে দোষ আর কতো দেওয়া যায়! সরকারের পরিষ্কার অবস্থান হচ্ছে- যে বাঁচে বাঁচুক, যে মরে মরুক। হার্ড ইমিউনিটির দিকে সরকারের অভিযাত্রার অলিখিত সিদ্ধান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি এপ্রিল-মে মাস থেকেই।
আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয় যা কিছু বলছেন, সেগুলো হয় জেনেশুনে মিথ্যা বলা অথবা অজ্ঞতা থেকে বলা। তবে এসব কথা সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতো অনেকেরই ধারণা দেশে করোনা সংক্রমণের হার কমছে, মৃত্যুর হার কমছে, হাসপাতালে আইসিইউ বেড ফাঁকা পড়ে থাকছে। এগুলি সবই ভুল কথা। তার সাথে মে মাস থেকে শুরু হয়েছে একের পর এক গার্মেন্ট, দোকানপাট, মসজিদ-মন্দির, অফিস-আদালত, পরিবহন, পর্যটন খুলে দেওয়া। এইসব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের মনে এই বার্তা পৌঁছেছে যে করোনা নিয়ে আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মানুষ ভাবছে, সাবধানতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আর দরকার বোধহয় নেই। স্বাস্থ্যবিভাগ মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করলেও মানুষ সেটি শুনছে না। প্রশাসন-পুলিশও আপাতত হাত গুটিয়ে রেখেছে।
মাস্ক পরা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, বার বার হাত ধোয়াÑ সবগুলো ক্ষেত্রেই মানুষের মধ্যে শৈথিল্য এসে গেছে। আমার ফেসবুক বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ নিজেরা এইসব শৈথিল্য ত্যাগ করুন। সেইসাথে নিজ নিজ এলাকায় যে কোনো লোককে মাস্কবিহীন দেখলে তাকে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করুন। বুঝিয়ে বলুন যে বিপদ কাটেনি, বরং আরো বেশি করে জেঁকে বসেছে। সরকারকে বাধ্য করার সাধ্য আমাদের নেই। কিন্তু মানুষকে মাস্ক পরতে বলাটা আমাদের সাধ্যের মধ্যেই আছে।
আমরা সবাই অধীর আগ্রহে ভ্যাকসিনের অপেক্ষা করছি। ভাবছি ভ্যাকসিন এলেই মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু এককভাবে ভ্যাকসিন করোনা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারবে না। সেইসাথে সবগুলো সাবধানতাও আমাদের মেনে চলতে হবে। আরএনএ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন খুব একটা বেশি কার্যকর নয়। এতোদিন গবেষণা করেও ইনফ্লুয়েঞ্জার ভালো ভ্যাকসিন তৈরি করা যায়নি। এখনো আমেরিকাতে প্রতিবছর ইনফ্লুয়েঞ্জায় মারা যায় ১০ হাজার রোগী। সার্স বা মার্স রোগের কার্যকর ভ্যাকসিন আজও পাওয়া যায়নি।
ভ্যাকসিন সম্পর্কে আরেকটি প্রচারণা আছে। সরকার জানাচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাবে। বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক দেশই তাদের জনসংখ্যার তিনগুণ সংখ্যক ভ্যাকসিন দাম অগ্রিম পরিশোধ করে রেখেছে। অন্যদিকে আমাদের দেশে ভ্যাকসিন তহবিল এখনো পুরোপুরিভাবে গঠন করাই হয়ে ওঠেনি। যেসব দেশ আগে ভ্যাকসিন দাম দিয়ে রেখেছে, তাদের বাদ দিয়ে কোনো কোম্পানি আগে আমাদের ভ্যাকসিন দেবে, এমনটি ভাবা হবে চূড়ান্ত বোকামি। অর্থাৎ ভ্যাকসিন পেতে আমাদের অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেকটাই বেশি অপেক্ষা করতে হবে। কাজেই করোনা প্রতিরোধের জন্য নির্ধারিত সতর্কতামূলক অভ্যাসগুলোই আমাদের বাঁচাতে পারে। ফেসবুক থেকে