আকতার বানু আলপনা : এই মেয়েটার মেয়ে হওয়াই ভুল ছিলো। একটা মেয়ে যদি তার নিজের মোটরসাইকেলে চড়ে তার নিজের গায়ে হলুদে বা বিয়েতে যায় এবং তাতে যদি তার পরিবারের বা আপনজনদের কোনো আপত্তি না থাকে, তাহলে আপনাদের এতো জ্বলে কেন? একটা ব্যক্তিগত আচরণ নিয়ে গোটা দেশজুড়ে এতো আলোচনা-সমালোচনারই বা কারণ কী? মেয়েটাতো কোনো অপরাধ করেনি। তাহলে তাকে এতো এতো গালমন্দ, চরিত্র হরণ, কেয়ামতের আলামত, এসব বলা হচ্ছে কেন? আসুন জানি। প্রতিটা সমাজের মানুষদের কিছু প্রচলিত ধারণা, নিয়ম বা কাঙ্ক্ষিত আচরণ থাকে যা সেই সমাজের প্রায় সব মানুষ বিনা প্রতিবাদে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে মেনে চলে। কিন্তু কোন ব্যক্তি যদি সমাজের প্রচলিত ওইসব ধারণা, নিয়ম বা কাক্সিক্ষত আচরণের বিপরীত কিছু করে, তাহলে সেটাকে বলে সামাজিক কলঙ্ক, যা সমাজের মানুষরা মেনে নিতে চায় না। ফলে সমাজের অধিকাংশ লোকজন সেই সামাজিক কলঙ্ককে যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এই প্রতিহত করার প্রচেষ্টাকে বলে সামাজিক প্রতিরোধ।
বাংলাদেশের কোনো মেয়েই এভাবে বিয়ে করতে যায় না। তাই এটি আমাদের সামাজিক নিয়মের পরিপন্থী। এজন্যই একটি মেয়ের মোটরসাইকেলে চড়ে বিয়ে করতে যাওয়াকে এদেশের অধিকাংশ মানুষ ‘সামাজিক কলঙ্ক’ হিসেবে দেখছে। আর সেজন্যই এতো আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে তারা মেয়েটির সেই ব্যতিক্রমী আচরণের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে, যাতে আর কোনো মেয়ে এরকম না করে এবং প্রচলিত সামাজিক নিয়মের কোনো পরিবর্তন না হয়। আর মেয়েটিকে গালমন্দ এবং তার চরিত্র হরণ করা হচ্ছে সামাজিক নিয়ম ভাঙার অপরাধের শাস্তি দিতে।
এই সামান্য ঘটনাটি আরও একবার বাংলাদেশে নারী স্বাধীনতার করুণ অবস্থা প্রকাশ করে দিলো। নারীর প্রতি আমাদের সমাজের লোকজনদের বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং যেকোনো নারীর ব্যতিক্রমী বা সাহসী কোনো আচরণকে প্রতিহত করার জন্য এদেশের অধিকাংশ পুরুষদের সামাজিক প্রতিরোধের চেহারা নগ্নভাবে উন্মোচন করে দিলো। যে দেশে প্রকাশ্যে নগ্ন হয়ে কোনো নারীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়, সে দেশে নারীর প্রকৃত অবস্থা যে কতোটা নাজুক, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এদেশের নারীদের জন্য দুঃখপ্রকাশ করা ছাড়া আর বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। এই মেয়েটার এত্ত সাহস ‘না’ বলে? এই মেয়েটা উঁচিয়ে মাথা পথ চলে? ফেসবুক থেকে