সোহেল রহমান : [২] কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহলের নির্দেশনার আলোকে নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়।
[৩] সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্ট (এফসিএ) খোলার নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। বর্তমান বিধান অনুযায়ী, বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেশে বিনিয়োগ করে এখান থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ দেশেই সরাসরি পুনর্বিনিয়োগ করতে পারবেন। মুনাফাসহ বিনিয়োগের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই বিদেশে নিয়ে যাওয়া যাবে। এফসি অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা রেখেই সেগুলো খরচ করার সুযোগ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বন্দর, ব্যাংক সেবা, অবকাঠামোগত সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য। এর বাইরে কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড়ও রয়েছে ।
[৪] জানা যায়, পূর্বের নীতিমালা অনুযায়ী বিদেশিরা পুঁজি বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা সরাসরি দেশে বিনিয়োগ করতে পারতেন না। এগুলোকে বিদেশি ব্যাংকের হিসাবে নিয়ে তারপর দেশি ব্যাংকের হিসাবে এনে বিনিয়োগ করতে হতো। এখন সরাসরি এসব মুনাফা বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে পারবেন। বিনিয়োগ করা অর্থসহ মুনাফা বিদেশে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নিতে হতো। এখন অনুমতি ছাড়াই এসব বিদেশে নেয়া যাবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। বিদেশি কর্মীরা তাদের বেতনের ৭৫ শতাংশ বিদেশে নিয়ে যেতে পারবেন। আগে ৫০ শতাংশ নিতে পারতেন।
[৫] এছাড়া আগে বিদেশি ও প্রবাসীরা বিনিয়োগ করলে দুটি হিসাব খুলতে হতো। একটি বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব এবং অপরটি টাকা হিসাব। বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা জমা করে সেগুলো টাকা হিসাবে স্থানান্তর করতে হতো। এখন সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব থেকেই একটি অংশ খরচ করা যাবে। বিদেশি প্রবাসীদের আগে ব্যাংক হিসাব নিজেদেরই পরিচালনা করতে হতো। এখন তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে এসব হিসাব পরিচালনা করতে পারবেন। বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে অনিবাসী টাকা হিসাবে যে অর্থ জমা থাকবে, সেগুলো তারা শেয়ারবাজারেও বিনিয়োগ করতে পারবেন। আগে এগুলো বিনিয়োগ করতে পারতেন না।
[৬] তবে ব্যবসায়ীদের মতে, শুধু নীতিমালায় ছাড় দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ টানা সম্ভব নয়। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হলে আগে দেশি বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। তারা বিনিয়োগ শুরু করলেই তাদের হাত ধরে আসবে বিদেশি বিনিয়োগ। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে আস্থার সঞ্চার ঘটাতে হবে।
[৭] তারা আরও বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে সরকারকে গুচ্ছ পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু একপক্ষীয় পদক্ষেপ দিয়ে হবে না। ব্যবসা করার সব ধরনের নীতিমালা সহজ করতে হবে। ওয়ান স্টপ সার্ভিসকে কার্যকর করতে হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করতে হবে।