মো. আখতারুজ্জামান : চলমান করোনা মহামারিতে দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীক খাতগুলোর মধ্যে আবাসন খাত অন্যতম। এ খাতের সঙ্গে জড়িত ৩০-৪০ লাখ মানুষের জীবিকা। আবাসন শিল্পের ভালো মন্দের উপর নির্ভর করছে এসব লোকদের ভবিষ্যৎ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে আবসন নির্মাণ কাজ। তবে স্বাস্থবিধি মেনে চলায় পরিপূর্ণভাবে শুরু করতে পারছে না। করোনা পরিস্থিতি আমাদের সামনে যে অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে তা কারো একার পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে দরকার সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
রিহ্যাব সূত্র জানান, ২০১৯ সালের রিহ্যাব ফেয়ারে ৪৯৮টি ফ্ল্যাট ও ১০৯টি প্লট বুকিং হয়। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বেশকিছু ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। তবে ক্রেতাদের কাছ এ কিস্তিগুলোও ঠিকমতো আসছে না। করোনার সংক্রমোণ রোধে সরকারের অবস্থান সিথিল হওয়ায় ব্যবসায়ীরা তাদের গ্রাহকদের কাছে যাওয়া সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীর।
সরকার গত বাজেটে শর্তহীনভাবে জমি, ফ্ল্যাট, বিল্ডিং ও অ্যাপার্টমেন্টে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে সুযোগ দেয়ায় আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ এসব নিয়ে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। এ সুবিধা নিতে ১০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে। এর বাহিরে অন্য কোনো জরিমানা থাকবে না।
দেশে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার ইউনিট ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়। চড়া নিবন্ধন খরচের জন্য অধিকাংশ ক্রেতা ফ্ল্যাট বুঝে নিয়েও বছরের পর বছর ধরে নিবন্ধন করছেন না। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এমন দাবির পরিপেক্ষিতে ২ জুলাই আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। জমি ও ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়েছে সরকার। দলিলে লেখা দামের ২% থেকে কমিয়ে ১%-এ আনা হয়েছে। দলিলে লেখা মূল্য ১০ হাজার টাকার বেশি না হলে জমির দামের ১% নিবন্ধন ফি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। দলিলে লেখা মূল্য ১০ হাজার টাকার বেশি হলেও নিবন্ধন ফি ১%-ই থাকবে। তবে সে ক্ষেত্রে কোনো নূন্যতম ফি নির্ধারণ করা হয়নি।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, করোনার প্রভাবে দেশের পুরো অর্থনীতিতে যে ধ্বস নেমেছে এর বড় ধাক্কা আবাসন খাতে এসেছে পড়েছে। করোনার শুরু থেকে দীর্ঘ সময় আমাদের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ ছিলো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের নির্মাণ কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। ফলে বেশি লোকবল নিয়ে কাজ করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আবাসন নির্মাণ খরচ বৃদ্ধি পাবে। যা কাস্টমারের কাছ থেকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, করোনাকালিন ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশেষ ঋণের বিষয়ে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে আমরা প্রসেস করতেছি। আশা করছি খুব দ্রুত একটা ভালো খবর আসবে। ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যানের কাছে ঋণ চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
শামসুল আলামিন বলেন, দেশের জিডিপিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১২ শতাংশ অবদান রাখা এই আবাসন খাতের জন্য সরকার বাজেটে বেশি কিছু সুযোগ দিয়েছে। এটা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ডিসেম্বরের মধ্যে আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াবে বলে তিনি আশা করেন।