রাজেশ গৌড়, দুর্গাপুর প্রতিনিধি : [২] নেত্রকোণা জেলা সদরের বাহিরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও অতিরিক্ত সহাকারী জজ আদালত রয়েছে একমাত্র দূর্গাপুরে। সুসং পরগনার রাজাদের অনুরোধে বৃটিশ সরকার সীমান্ত এলাকায় জনগণের সুবিধার্থে দূর্গাপুরে দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতের ব্যবস্থা করেন। তখন এই দুইটি আদালতই একজন মুন্সেফ ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালনা করতেন। এটিকে বলা হতো চৌকি। বর্তমানে দূর্গাপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনটি জ¦রাজীর্ণ হয়ে ভীতিকর অবস্থায় রুপ নিয়েছে। যে কোনো মূহুর্তে ভেঙে পরতে পারে ভবনটি। প্রাণহানী ঘটতে পারে অসংখ্য মানুষের।
[৩] এদিকে, আদলত সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বারবার লিখতভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবগত করা হলেও নেয়া হচ্ছেনা ব্যবস্থা। আর তাই, যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রাণহানীর আশঙ্কা বাড়ছে এবং শংকিত অবস্থাতেই আদালতের দৈনন্দিন কার্যাদি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
[৪]সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ভঙ্গুর অবস্থা বিরাজ করছে পুরো ভবনেই। এজলাস, বিচারকের ব্যক্তিগত কক্ষ, পুলিশ ব্যারাক, আইনজীবিদের বসার কক্ষসহ প্রতিটি কক্ষেরই ছাদ ও দরজা-জানালার বেহাল দশা। হাজতখানার দরজা জানালা ভাঙা, টয়লেট গুলোও উন্মুক্ত যা শতভাগই ব্যবহার অনুপযোগী। মালখানায় ভাঙা ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি ঢুকে তা জমে থাকতে দেখা গেছে। সারা বিল্ডিং এর ছাদ দিয়ে পানি পরায় প্রতিনিয়তই নষ্ট হয় কম্পিউটার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। এতে ভোগান্তীর সৃষ্টি হয়েছে ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, আইনজীবীসহ বিচার প্রত্যাশীদের। ব্যাঘাত ঘটছে বিচারিক কার্যক্রমের। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্টদের দাবী ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন তৈরী করা যাতে সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে চলতে পারে দূর্গাপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম।
[৫] দূর্গাপুর আইনজীবি সমিতির সহ-সভাপতি এডভোকেট মোশারফ হোসেন মির্জা ও সাধারণ সম্পাদক মানেশ চন্দ্র সাহা জানান, ১৯৮৫ সালে এই কোর্ট ভবনে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু ঐ সময় বিল্ডিং নির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের জেরেই এই ভবনটি এত অল্পসময়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। ভবনের ছাদ ধ্বসে অনেক বড় বড় টুকরো শরিরের উপর পরে। সবসময় দুর্ঘটনার আতঙ্ক নিয়ে কাজ করতে হয়। বর্তমানে এই ভবনের যা অবস্থা তাতে যেকোন সময় হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া বর্ষার দিনে এজলাসের ভিতরেও পানি পরে। যার দরুন নষ্ট হয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথিপত্র। অতি দ্রুত এই ভবনটি নতুন করে নির্মাণের কোন বিকল্প নেই।
[৬] আদালতে হাজিরা দিতে আসা আসামি ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ভবন ধ্বসে যে কোনো সময় আমাদের মৃত্যু হতে পারে এমন আশঙ্কা নিয়ে হাজিরা দিতে হয়। কিছুদিন আগেও একটা ফ্যান চলমান অবস্থায় ছাদ ভেঙে পরে যায়। কিন্তু সৌভাগ্যের ব্যাপার ফ্যানটি খালি জায়গায় পরে।
[৭] আদালতের স্ট্যানো কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত আব্দুর রায়হান জানান, গত তিন বছর আগে সর্বশেষ এই ভবনের ছাদে সিমেন্টের প্রলেপ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ভবনটির অবস্থা বর্তমানে এতটাই খারাপ যে প্রাণহানীর শংকা নিয়ে কাজ করতে হয় আমাদের। তাছাড়া সরকারি বিভিন্ন নথিপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল নষ্ট হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যে নেত্রকোণা গণপূর্ত বিভাগকে বার বার লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু তারা একবার এসে দেখেও যায়নি আর কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনও করছে না।
[৮] বিচারালয় মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষনের প্রধান স্থল। কাজেই বিচারালয়ের বিচারিক কার্যক্রম নির্ভিঘ্নে ও সুন্দরভাবে চলুক এটাই কাম্য হওয়া উচিত। সেই প্রেক্ষিতে দূর্গাপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট ও এলাকাবাসীর।
[৯] ২০১৮ সালে নেত্রকোণা গণপূর্ত বিভাগের দ্বায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ বাহাদুর আলী জানিয়েছিলেন, ২০১৭ সালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সরেজমিনে উক্ত কোর্ট ভবনটি ভেঙে টিন শেড বিল্ডিং নির্মাণের নির্দেশ প্রদান করেন। উক্ত নির্দেশ মোতাবেক প্রাক্কলন পরিকল্পনা পাঠানোর পর এখন পর্যন্ত বরাদ্দ না আসায় কোর্ট ভবনটির নতুন করে নির্মান করা যাচ্ছে না।
[১০] এব্যাপারে ঐ বিভাগের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হাসিনুর রহমান বলেন, ১৯৮০ সালের দিকে নির্মিত উপজেলা কোর্টগুলোর জন্যে এখন কোন বরাদ্দ পাওয়া যায় না। তাই এসব ভবনগুলো সংস্কার বা পুনঃসংস্কার করার মতও সুযোগ থাকেনা আমাদের হাতে। সম্পাদনা : হ্যাপি