আনিস তপন: [২] করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের আবাসিক হোটেল সেবা বিল পরিশোধে অনিয়মের অভিযোগ ও নানা সমালোচনার মুখে অবশেষে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।
[৩] সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক আদেশে, এখন থেকে আবাসিক হোটেল বিল নয়, কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের দৈনিক ভাতা দেয়া হবে বলে জানানো হয়।
[৪] মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা একটা সিস্টেম বা নিয়মের মধ্যে চলে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি করলেও এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত কর্মীরা।
[৫] গত ২৯ জুলাই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসিক হোটেলের বিল পরিশোধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ফলে এখন থেকে যারা হোটেলে অবস্থান করবেন, তারা নিজ খরচে অবস্থান করতে হবে। আর্থিক নীতি অনুসরণ করে পরবর্তীতে তাদের নির্ধারিত ভাতা প্রদান করা হবে।
[৬] পরিপত্র অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার মধ্যে দায়িত্বপালনকারী চিকিৎসকরা দৈনিক ২ হাজার টাকা এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ৮০০ টাকা ভাতা পাবেন। একইভাবে নার্সরা ঢাকার মধ্যে এক হাজার ২০০ ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার টাকা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা ঢাকার মধ্যে ৮০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৬৫০ টাকা ভাতা পাবেন।
[৭] সরকারের এমন সিদ্ধান্তে করোনা রোগীর চিকিৎসায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না? জানতে চাইলে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেন, না, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় এ সিদ্ধান্তের কারণে কোনো প্রভাব পড়বে না। অনেকগুলো বিষয় বিচার-বিবেচনা বিশ্লেষণ করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি নিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আব্দুল মান্নান আরো বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বর্তমান পরিস্থিতি যদি আরো কিছু দিন অব্যাহত থাকে তবে সরকারি এই সিদ্ধান্তের কারণে কোভিড চিকিৎসা ব্যবস্থা একটা সিস্টেম বা নিয়মের মধ্যে চলে আসবে।
[৮] একই বিষয়ে হতাশা, ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বাচিপের সভাপতি এম ইকবাল আর্সলান বলেন, সরকারি এমন সিদ্ধান্তের কারণে কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত প্রত্যেক চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য সেবা কর্মীর পরিবার করোনা ঝুকিতে পড়ে যাবে। কারণ আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট আর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট এক, এমনটা ভাববার কোনো অবকাশ নেই। উন্নত দেশগুলো কোভিড চিকিৎসায় যে ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করেছে তা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা একটা অদ্ভূত চিন্তা। যা এদেশের বাস্তবতায় অসম্ভব। বিশেষ করে যারা নিম্ন আয়ের স্বাস্থ্য সেবা কর্মী, তাদের পক্ষে এ নির্দেশনা পালন করে পরিবারকে নিরাপদ রাখবে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাছাড়া অনেক চিকিৎসক একত্রে ফ্ল্যাট, মেস বা হোস্টেলে থাকেন, তারাও তাদের অনুসঙ্গী যারা আছেন তাদেরকে করোনা ঝুকির মধ্যে ফেলে দিবে। কারণ তারাও অন্যদের নিরাপদ রাখতে পারবেন না।
[৯] অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ মেডিকেল এসেসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক এই মহাসচিব বলেন, এমন সিদ্ধান্তে অবশ্যই চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের মাঝে হতাশা তৈরী শুরু হয়ে গেছে। যখনই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হবে তখন তাদের হতাশার প্রভাবটা সামনে চলে আসবে। ইতোমধ্যে অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
[১০] এম ইকবাল আর্সলান বলেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের অযুহাত দেয়া হয়েছে। এটাও মনে হয় না সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ ইতোমধ্যে দু/একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপে জানাগেছে, তাদের হিসাব অনুযায়ী বর্তমান ব্যবস্থাপনায় এই সিদ্ধান্তে আর্থিক ব্যয় বাড়বে। স্থানীয় ব্যবস্থাপকদের মতামতসহ তাদের প্রকৃত হিসাব তৈরীর জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। হিসাবটি পাওয়া গেলে প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে বলে জানান চিকিৎসকদের শীর্ষ এই নেতা।
আপনার মতামত লিখুন :