এএইচ রাফিঃ [২] ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা প্রশাসনের ১৩ লক্ষ টাকার করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় এবং বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল এবং সচেতন মানুষের মাঝে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। করোনা কালীন সংকটময় সময়ে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং সাংবাদিকরা সামনে থেকে দায়িত্ব পালন করলেও তাদের কেউ কোন সুরক্ষা সামগ্রী পাননি। তাহলে এত বিপুল অংকের টাকার সামগ্রী কোথায় বিতরণ করা হয়েছে? এ প্রশ্ন সর্বত্র।
[৩] অভিযোগ কাগজপত্রেই সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণের হিসেব দেখিয়েছেন ইউএনও। গত ৩ মাসে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় বাবদ এসব টাকা খরচ দেখিয়েছেন তিনি। অনিয়ম হয়েছে বুঝতে পেরেও আখাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এসব বিলে স্বাক্ষর করছেন বলে চেয়ারম্যান নিজেই স্বীকার করেছেন। তবে মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ডসেনিটাইজারসহ মোট ৩০ প্রকার সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করার কথা জানান ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনা। এসব সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় বাবদ উপজেলা উন্নয়ন তহবিল থেকে ১২ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এরমধ্যে দেড় লক্ষ টাকায় ৫ হাজার মাস্ক, ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকায় ৪ হাজার গ্লাভস, প্রায় ৮০ হাজার টাকায় স্যানিটাইজার ক্রয় করেন। এছাড়া প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ব্যয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ২৬টি বেসিন স্থাপন করেন।
[৪] তবে সরজমিনে গিয়ে ব্যবহার উপযোগি ১৫ টি বেসিন পাওয়া গেছে। বাকীগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। বিষয়টি জানতে সাংবাদিকরা আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার রেইনার কাছে গেলে তিনি সব কিছু নিয়ম মেনে করেছেন দাবী করে সাংবাদিকদের একটি ইস্টিমেটের কপি দেন। ইস্টিমেটে ১৭ টি আইটেম উল্লেখ থাকলেও কোন আইটেম কত টাকা মূল্যে কেনা হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। তিনি এব্যাপারে কোন কিছু বলতে বা বিল ভাউচার দেখাতে ব্যর্থ হন। তিনদিন পর উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসের সার্ভেয়ার মো. জহুরুল ইসলামের মাধ্যমে ৩০ প্রকার সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের একটি তালিকা পাঠান। যার সাথে আগে দেয়া ইস্টিমেটর কোন মিল পাওয়া যায়নি।
[৫] আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ইউএনও স্যার আমাকে ১০০টি মাস্ক ও ২০ জোরা গ্লাভস দিয়েছে। এছাড়া আর অন্য কিছু পায়নি।
[৬] আখাউড়া উপজেলা এলজিইডি অফিসের সার্ভেয়ার জহুরুল ইসলাম বলেন, এত টাকার সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হলো কিন্তু আমি নিজেই কিছু পাইনি।
[৭] মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল ভূইয়া বলেন, ইউএনও স্যারের দেওয়া কিছু ব্লিচিং পাউডার পেয়েছি। এছাড়া আর অন্য কিছু পাইনি।
[৮] এদিকে ইস্টিমেট ঘেঁটে দেখা যায়, আখাউড়ায় করোনাকালীন রোগী শনাক্তের আগেই ১৩ মার্চ করোনা সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের ইস্টিমেট করা হয়। ১৫ মার্চ ওই ইস্টিমেটে ইউএনও স্বাক্ষর করেছেন। অথচ দেশে ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তখনও আখাউড়ায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। ৯ এপ্রিল আখাউড়ায় প্রথম করোনা উপসর্গ ধরা পরে। করোনা শনাক্তের আগেই তিনি কিভাবে ইস্টিমেট করলেন। উত্তর মেলেনি এই প্রশ্নেরও।
[৯] আখাউড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের মাঝে সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছে। প্রশাসনের কাছ থেকে সাংবাদিকরা কোন সুরক্ষা সামগ্রী পায়নি।
[১০] আখাউড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ভূইয়া বলেন, আমি বলেছিলাম ৪/৫ লক্ষ টাকা খরচ করতে। কিন্তু ইউএনও ইচ্ছেমতো এতগুলো টাকা খরচ করেছেন। বিল ভাউচার ঠিক না থাকায় প্রথমে তিনি এ টাকা অনুমোদনে স্বাক্ষর করতে রাজি ছিলেন না। পরে চক্ষু লজ্জায় স্বাক্ষর করেছেন বলেও জানান তিনি।
[১১] আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার রেইনা বলেন, সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাস্ক, পিপিসহ অন্যান্য সামগ্রী বেশি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে মাস্ক-স্যানিটাইজার, গ্লাভস দিয়েছেন। তাছাড়া সাধারন মানুষের মাঝে বিতরণ করেছি।